ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

লাগামহীন রসুনের দাম

ইয়ামিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:১৭, ২৯ নভেম্বর ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
লাগামহীন রসুনের দাম

আবু বকর ইয়ামিন : লাগামহীনভাবে বাজারে বেড়ে চলছে নির্ত ব্যবহার্য রসুনের দাম। পাইকারি ও খুচরা বাজারে এর চড়া দামে ক্রেতাদের মাঝে অস্বস্তি সৃষ্টি হয়েছে।

 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি রসুনের দাম গড়ে ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি রসুনের দাম ২০০ থেকে ২১০ টাকা। দেশি বড় দানা রসুন পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে ১৭৬ টাকা। খরচসহ পড়ছে ১৮০ টাকার উপরে। দেশি ছোট দানা রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা দরে। তা ছাড়া চীনা রসুন পাইকারিতে কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ১৮৫ টাকা। খরচসহ সেটি পড়ছে ১৯০ টাকার উপরে।

 

সোমবার রাতে রাজধানীর পলাশী কাঁচাবাজারে সরেজমিনে দেখা যায়, দেশি বড় দানা রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৯০ থেকে ২০০ টাকা। ছোট দানা রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৭০ টাকা। আবার চায়না রসুন বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২১০ টাকা। এ ছাড়া দেশি এক দানা রসুন বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকা দরে।

 

দেশি এক দানা রসুনের দাম বেশি হওয়ার কারণ জানতে চাইলে আজাদ নামের এক খুঁচরা বিক্রেতা বলেন, ‘সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় চায়না রসুন। তারপর বড় দানা রসুন, ছোট দানা রসুন। দেশি এক দানা রসুন তেমন বিক্রি হয় না। তবে এটির গুণগত মান খুব ভাল। সব দোকানে সচরাচর পাওয়া যায় না। বেশি রাখলে নষ্ট হয়ে যায়। ৫-৬ কেজি করে রাখতে হয়, যার কারণে এটির দাম সবচেয়ে বেশি।’

 

মনিরুল ইসলাম পলাশী এলাকায় থাকেন। পরিবারের প্রয়োজনীয় কেনাকাটা তাকেই করতে হয়। রসুনের দর দিন দিন বাড়াতে খুবই বিরক্ত তিনি।

 

রাইজিংবিডিকে মনিরুল বলেন, ‘গেল বছর রসুন ছিল কেজি প্রতি মাত্র ৮০ টাকা। এক মাস আগেও রসুনের দাম ছিল ১২০-১৩০ টাকা। সোমবার বাজারে গিয়ে দেখি, সে রসুনের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০০ টাকায়। কোথাও কোথাও দেখছি ২১০ টাকা। সরকারের সঠিক মনিটরিং না থাকায় ব্যবসায়ীরা সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে এসব মুনাফা লাভ করছে।’ রসুনের দাম বাড়ানো নিয়ে সরকারের তদারকি বাড়ানোর দাবি জানান এ ক্রেতা।

 

রসুনের এমন দাম বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে পলাশী বাজারের বাবুল মমতাজ স্টোরের কর্ণধার মো. বাবুল বলেন, ‘ভাই আমরা খুঁচরা বিক্রেতা। পাইকারিতে বেশি দরে রসুন কিনতে হয়। যার কারণে আমাদেরও বেশি দরে বিক্রি করতে হচ্ছে।’

 

তিনি বলেন, ‘আমদানিকারক ও আরতদারদের চালাকির কারণে এসব দাম বাড়ে। তারা দলবদ্ধভাবে রসুনের দাম বাড়ায়। তখন আমাদের অপারগ হয়ে বেশি দামেই কিনতে হয়। বিক্রিও করি বেশি দামে। ধরেন, আমদানিকারকরা দুই মাস আগে রসুন এনেছে ১৫০ টাকায়। সে রসুন কিছু অংশ গত মাসে ১৬০ টাকা বিক্রি করেছে। আবার কিছু অংশ মজুদ রেখে দিচ্ছে। সেটিকে পরে দাম বাড়িয়ে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা বিক্রি করছে। এ জাতীয় অনেক অনিয়মের বেড়াজালে আটকে আছে রসুনসহ কাঁচাবাজার পণ্যের দর।’

 

সরকারের সঠিক মনিটরিং থাকলে এভাবে দাম বাড়ত না বলে বিশ্বাস মো. বাবুলের। আমদানিকারকদের প্রতি নজরদারি আরো বাড়াতে সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান তিনি।

 

পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, চীন থেকে রসুনের আমদানি কমে যাওয়ায় রসুনের দাম বেড়েছে। তা ছাড়া, অনেক ব্যবসায়ী অসাধু উপায়ে রসুন স্টক করে এর দাম বাড়াচ্ছেন।

 

চীন বিশ্বের সবচেয়ে বেশি রসুন উৎপাদন ও রপ্তানি করে। গত বছরের শেষ দিকে ভারি বৃষ্টিপাত, এরপর তুষারপাতে সেখানে রসুনের আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অন্যদিকে চীনের বিনিয়োগকারীরা মুনাফার গন্ধ পাওয়ায় রসুন মজুতে বিপুল বিনিয়োগ করছেন। এতে বাজারে রসুনের দাম বেড়েছে লাফিয়ে লাফিয়ে।

 

সম্প্রতি চীনের সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট নামের একটি পত্রিকায় ‘রসুনে মধু খুঁজে পেয়েছে বিনিয়োগকারীরা’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়, চীনে রসুনের কেজিপ্রতি দাম ১৬ ইউয়ানে উন্নীত হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। দ্রুত অর্থ উপার্জনের একটি পথ এখন রসুন।

 

সরকারি হিসাবে বাংলাদেশে বছরে প্রায় পাঁচ লাখ টন রসুনের চাহিদা আছে। এর মধ্যে দেশে প্রায় সাড়ে তিন লাখ টন উৎপাদিত হয়। বাকিটা মূলত চীন থেকে আমদানি করা হয়।

 

কারওয়ান বাজারের আড়তের বিক্রেতা এমদাদ হোসেন বলেন, ‘মাস খানেক আগে চীনা রসুন প্রতি কেজি ১৬০ টাকা দরে বিক্রি করেছিলাম। অন্যদিকে দেশি রসুন ছিল কেজিপ্রতি ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা। এ বছর কৃষকেরা রসুনের দাম সবচেয়ে বেশি পেয়েছেন। বছরজুড়েই পণ্যটির দাম বেশি ছিল।’

 

তিনি আরো বলেন, ‘চীনে রসুনের দাম অত্যধিক বেশি বলে গুটিকয়েক আমদানিকারক আমদানি করছেন। যার কারণে এর দাম বাড়ছে। এ ছাড়া এ বছর ভারত ও মিয়ানমার থেকেও রসুন আমদানি হচ্ছে না।’

 

দেশি নতুন মৌসুমের রসুন বাজারে আসবে আগামী এপ্রিল মাসে। তার আগে দাম কমার কোনো আশাও জানাতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা।

 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৯ নভেম্বর ২০১৬/ইয়ামিন/সাইফুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়