ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

মনিরামপুরে নিরাপদ সবজি উৎপাদনে বিপ্লব

বিএম ফারুক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:২৭, ২১ অক্টোবর ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মনিরামপুরে নিরাপদ সবজি উৎপাদনে বিপ্লব

বাড়ির আঙ্গিনায় কুমড়া খেতে চায়না মণ্ডল

বিএম ফারুক, যশোর : যশোরের মনিরামপুরের পলাশী গ্রামের চায়না ম-ল। নিজ বাড়ির আঙ্গিনায় লাগিয়েছেন কুমড়া ও লাউসহ বিভিন্ন প্রকার সবজি। খেতে চাষ করেছেন বেগুন, সিম, পটল, পেঁপের।

পোকামাকড় থেকে এ ফসল সুরক্ষায় তিনি বালাইনাশক পদ্ধতি সেক্স ফেরেমন ব্যবহার করছেন। আর বাড়িতে ভার্মি কম্পোস্ট তৈরি করে দিচ্ছেন খেতে। এতে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের প্রয়োজন পড়ছে না তার।

শুধু তিনি একা নয়, এ গ্রামের দীলিপ কুমার, প্রদীপ বিশ্বাস, প্রকাশ কুমারসহ ২৫০ চাষিই এভাবে সবজি ও ফল উৎপাদন করছেন। আর এজন্য এই পলাশী গ্রামকে নিরাপদ ফল ও সবজি উৎপাদনের গ্রাম হিসেবে ঘোষণা করেছে মনিরামপুরের কৃষি বিভাগ।

সরেজমিনে এ গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে মাঠজুড়ে সবজি ও ফলের বাগান। সেই খেতে ব্যবহার করা হচ্ছে সেক্স ফেরেমন পদ্ধতি। একইভাবে ঘরের পেছনে পতিত জমিতে ও বাড়ির আঙ্গিনায় লাগানো কুমড়া, লাউ, ঝিঙ্গে, পুঁইশাকসহ বিভিন্ন প্রকার সবজিতে ব্যবহার হচ্ছে বালাইনাশক পদ্ধতি।

বাড়ির আঙ্গিনায় কুমড়ার খেতের মধ্যে দাঁড়িয়ে চায়না ম-ল জানান, গত এক-দেড় বছর যাবত তিনি এ পদ্ধতিতে সবজি ও ফল উৎপাদন করছেন। নিজ বাড়িতে জৈবসার তৈরি করে গাছে দিচ্ছেন। ফলে তার কীটনাশক ও রাসায়নিক সার কিনতে হচ্ছে না।

তিনি আরো জানান, শুধু বাড়িতে নয়, মাঠের ফসলেও তারা জৈবসার ব্যবহার করছেন। এতে তাদের ফসলের পেছনে খরচ কমেছে। উৎপাদনও হচ্ছে ভাল।

আরেক চাষি প্রকাশ কুমার জানান, তাদের গ্রামজুড়েই বিষমুক্ত সবজি ও ফল উৎপাদন শুরু হয়েছে। আগে তারা যে কোনো ফসলের জন্য রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করতেন। এখন তা বাদ দিয়ে বালাইনাশক পদ্ধতি ও জৈব সার ব্যবহার করছেন। উৎপাদনও ভাল হয়েছে।

গ্রামের দাশপাড়ার পরিমল খাঁ বলেন, কৃষি বিভাগ ও বেসরকারি সংস্থা জাগরণী চক্রের মাধ্যমে আমরা বিষমুক্ত সবজি চাষ করতে শিখেছি। আমি নিজে এখন আর ফসলে কীটনাশক ব্যবহার করি না। তেমননি রাসায়নিক সারের পরিবর্তে খেতে ভার্মি কম্পোস্ট ব্যবহার করি।

বেগুন খেতে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলেন এ গ্রামের আরেক চাষি প্রদীপ বিশ্বাস। তিনি বলেন, আগে জানতাম বেগুনে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক না দিলে ভাল ফলন হয় না। এখন আমার সে ধারণা পাল্টে গেছে। আমি খেতে জৈব সার ও সেক্স ফেরেমন ব্যবহার করে বিষমুক্ত বেগুন উৎপাদন করছি।

কৃষকদের এই কথার সঙ্গে মিল পাওয়া গেল উপজেলা কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের।

উপজেলা কৃষি অফিসার সুশান্ত কুমার দাস বলেন, পলাশী গ্রামের প্রতি কৃষকই এখন বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন করছেন। এই গ্রামের চাষিরা দুই-তিন বছর আগেও ফসলে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করতেন। এখন তারা নতুন এ প্রযুক্তি গ্রহণ করে উৎপাদন ব্যয় কমিয়েছেন। আবার বিষমুক্ত সবজি ও ফল নিজেরা খেতে পারছেন, বিক্রিও করছেন। এজন্য পলাশী গ্রামকে তারা নিরাপদ ফল ও সবজি উৎপাদনের গ্রাম হিসেবে ঘোষণা করেছেন।

এ কৃষি কর্মকর্তা আরো জানান, এজন্য গ্রামের কৃষকদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এখন কোনো সমস্যায় পড়লে তিনি নিজে গিয়ে তাদের পরামর্শ দেন।

এ ছাড়া তিনিসহ কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা গ্রামটি নিয়মিত পরিদর্শন করেন।

 

 


রাইজিংবিডি/যশোর/২১ অক্টোবর ২০১৬/বিএম ফারুক/রিশিত

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়