মহানায়কের জন্মদিন আজ
মনিরুল হক ফিরোজ || রাইজিংবিডি.কম
উত্তম কুমার
বিনোদন ডেস্ক : সত্তরের দশক। কলকাতার সিনেমা হলগুলোর বাইরে বড় বড় পোস্টার। তাতে শুধু উত্তম-সুচিত্রা। কখনো উত্তমের সঙ্গে সাবিত্রী বা মাধবী। কখনো বা শর্মিলা। কিন্তু উত্তমকুমার কমন। তার চলন বলন, কথাবার্তা... আর সেই হৃদয়ে আলোড়ন জাগানো হাসি। সে কী আর কেউ ভুলতে পারে? সেই মহানায়কের আজ জন্মদিন। বেঁচে থাকলে আজ তার বয়স হত ৯০ বছর।
ফ্লপ মাস্টার। একসময় টালিউডের স্টুডিওপাড়ায় ওই নামে তাকে সবাই চিনত। ১৯৪৮ সাল থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত একের পর এক সিনেমা করেছেন। কিন্তু ফ্লপ। বারবার রুপোলি পর্দা তাকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। এভাবেই চলছিল। তারপর ১৯৫৩ সালে এল সাড়ে চুয়াত্তর। সেই শুরু। তারপর থেকে টলিপাড়ার ফ্লপ মাস্টার হয়ে গেলেন রোম্যান্টিসিজ়মের নায়ক উত্তমকুমার।
ছিলেন পোর্ট কমিশনার্সের কেরানি। বেশ ছিলেন। কিন্তু হঠাৎ মাথায় ভূত চাপল সিনেমা করবেন। আর দেখে কে। টালিউডের স্টুডিও স্টুডিওয় ঘুরঘুর করতে লাগলেন তিনি। এ দরজা থেকে ও দরজা। কিন্তু কাজ জোটে না কোথাও। তাই বলে কী এত সহজে হাল ছেড়ে দেওয়া যায়? মোটেই না। কাজ জুটছে না তো কি? হত্যে দিয়ে পড়ে থাকলেন স্টুডিওপাড়ায়।
শেষে শিকে ছিঁড়ল। চান্স পেলেন উত্তমকুমার। দিলেন নীতিন বোস। আর প্রথম সিনেমাতেই জাঁদরেল অভিনেতাদের সঙ্গে কাজ। ছবি বিশ্বাস, অসীত বরণ, কৃষ্ণচন্দ্র দে... চাপ খাওয়ারই কথা। কিন্তু ঘাবড়ালে চলবে কেন? তাকে যে হিরো হতে হবে। সিনেমা হল। মুক্তিও পেল। কিন্তু ফ্লপ। তার পরেরটাও ফ্লপ। তার পরেরটাও। এর মধ্যে ঘটল আর এক ঘটনা। ওরে যাত্রী সিনেমার শুটিং চলছে। অভিনয়ে ব্যস্ত উত্তমকুমার। হঠাৎই ফ্লোর থেকে ভেসে এল টিটকিরি। চেহারা তো বটেই, অভিনয় নিয়েও কমপ্লিমেন্টের বাহারে টেকা দায়। কেউ বলে নেক্সট দূর্গাদাস, কেউ আবার ছবি বিশ্বাসের সঙ্গে তুলনা টানে। আর একের পর এক ফ্লপ সিনেমার হিরোর তখন অবস্থা টাইট।
কিন্তু সময় কখনো থেমে থাকে না। এক্ষেত্রেও তাই হল। সাড়ে চুয়াত্তর-এর অফার পেলেন উত্তমকুমার। নায়িকা নবাগতা সুচিত্রা সেন। বাংলাদেশ থেকে এসেছেন। অভিনয়ের অ-ও জানেন না। কিন্তু রিস্ক নিলেন উত্তমকুমার। এমনিতেই বরাত খারাপ যাচ্ছে। একটা ট্রাই নিলে আর কী ক্ষতি হবে? তার পরের কথা তো সবাই জানে।
তবে এর আগে অবশ্য উত্তমকুমারের ভাগ্যে একটু আধটু প্রশংসা জুটেছিল। নির্মল দের বসু পরিবার সিনেমায়। সমালোচনায় বেরিয়েছিল উত্তম নাকি অসম্ভব লাউড অভিনয় করেছেন। উত্তমকুমার তো এও বলেছিলেন, নিজের প্রশংসা শুনতে তিনি দর্শকের ভিড়ে মিশে যেতেন। চোখে কালো চশমা পরে নিতেন, যাতে তাকে কেউ চিনতে না পারে।
সাড়ে চুয়াত্তর সিনেমার পর ততদিনে উত্তম বুঝে গেছেন, তাকে ঠিক কী করতে হবে। কীভাবে নিজেকে প্রেজ়েন্ট করতে হবে ক্যামেরার সামনে। কীভাবে দর্শকের কাছে প্রেজ়েন্টেবল হতে হবে। আর উত্তমের হোমওয়ার্ক যে ষোলো আনা কাজে দিয়েছিল তা তার সিনেমাগুলো দেখলেই বোঝা যায়।
পরবর্তীতে উত্তমকুমার আকাশ ছোয়া খ্যাতি পেলেও, পা রাখতেন মাটিতেই। শোনা যায়, শুটিংয়ের সময় একটা শটের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতেন তিনি। অধৈর্য হওয়া তার ধাতে ছিল না।
শুধু সিনেমর ফ্রেমেই বন্দি থাকেননি উত্তমকুমার। মঞ্চেও অভিনয় করেছেন তিনি। উত্তমকুমারের আরেকটি বড় গুণ ছিল, কখনো কোনো শিল্পী সমস্যায় পড়লে আগে এগিয়ে যেতেন তিনি। বিশেষ করে কেউ আর্থিক সমস্যায় পড়লে সাহায্য করতে দ্বিধা করতেন না তিনি।
তাই তো এখনো তিনি মধ্যগগনে বিদ্যমান। একমেবদ্বিতীয়ম মহানায়ক। ২০০শ’রও বেশি বাংলা সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি। এ ছাড়া একাধিক হিন্দি সিনেমাতে অভিনয় করেছেন। অভিনেতা ছাড়াও তিনি প্রযোজক ও পরিচালক হিসেবেও সফলতা পেয়েছিলেন। ১৯৮০ সালে মাত্র ৫৩ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।
বাংলা চলচ্চিত্রের এই মহানায়কের জন্ম ১৯২৬ সালের ৩ সেপ্টেম্বর। উত্তম কুমারের আসল নাম অরুনকুমার চট্টোপাধ্যয়।
রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫/ফিরোজ
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন