ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

মা মাছের ভালোবাসা || রণজিৎ সরকার

রণজিৎ সরকার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৪৮, ২৮ আগস্ট ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মা মাছের ভালোবাসা || রণজিৎ সরকার

নদীতে মা মাছ আর ছেলে মাছ ঘুরছে। মা মাছ সব সময় ছেলে মাছকে সাথে নিয়ে চলে। ছেলে মাছটা খুব দুষ্টু। মায়ের কথা শুনতেই চায় না। মাকে রেখেই এদিক-ওদিক চলে যেতে চায়।
নদীতে ঘুরতে ঘুরতে ছেলে মাছ বলল, ‘মা, আমার এ নদীতে থাকতে আর ভালো লাগে না। নতুন কোথায় গিয়ে ঘুরে আসি।’

 

মা মাছ বলল, ‘এখন কোথায় যাওয়া যাবে না। বিপদ হতে পারে।’
ছেলে মাছ লেজ নাড়াতে নাড়াতে বলল, ‘বিপদ হবে না। তুমি চলো। নতুন জায়গায় থেকে ঘুরে আসি।’
মা মাছ শরীর নাড়াতে নাড়াতে বলল, ‘নতুন জায়গা মানে।’
‘হ্যাঁ, নতুন জায়গা। আমার বন্ধু কাতল বলেছে, একটু দূরে একটা খাল কেটেছে। সে খানে নাকি বিভিন্ন রকমের খাবার আছে। চলো, ওই খালে গিয়ে ঘুরে আসি।’

 

মা মাছ মুখ দিয়ে পানি ছাড়তে ছাড়তে বলল, ‘তোমার বন্ধু কাতল এখান থেকে তাড়ানোর জন্য এ কথা বলেছে। আমরা চলে গেলে সে খুশি হবে।’

 

‘না মা, আমার বন্ধু সেজন্য বলেনি, এটা আমার বিশ্বাস। আমি যাব নতুন জায়গায়।’

 

ছেলে মাছের আবদারে কথা মা মাছ আর না করতে পারল না। বলল, যেতে চাস তো ঠিক আছে। পথে বিপদ হবে না তো! পথের খোঁজখবর নিতে হবে।’

 

‘কীসের খোঁজখবর। সব ঠিক আছে। আশা করি পথে বিপদ হবে না।’
‘পথে যদি সত্যি সত্যি বিপদ হয়। তাহলে কিন্তু জীবন শেষ হয়ে যেতে পারে। মারাও যেতে পারি। জীবনের চেয়ে আর দামি কিছু আছে! প্রিয় জীবনের চেয়ে আর দামি কিছু নেই।’
‘এত চিন্তা করো কেন মা।’
‘চিন্তার কারণ আছে। নদীতে পথে কত রকমের বিপদ আছে, তা তুমি এখনো জানতে পারনি। কত বিপদের হাত থেকে বড় হতে হয়? তুমি তো ছোট, বুঝবে না। কারণ বিপদে কখনো পড়োনি।’
‘কী কী বিপদে পড়তে হয়, বলো তো মা?’
মা মাছ মাথা নাড়াতে নাড়াতে চোখ বড় বড় করে বলল, ‘জেলেরা জাল ফেলে মাছ ধরে। আর সেই জাল তো আমারদের যেকোনো মুহূর্তে বিপদ ডেকে আনতে পারে।’
ছেলে মাছ জোরে জোরে লেজ নাড়াতে নাড়াতে বলল, ‘চিন্তা করো না তো। এই গভীর পানিতে জেলেরা জাল ফেলাবে না।’

 

এই বলেই ছেলে মাছ দ্রুত বেগে চলে যেতে লাগল। মা মাছও ছেলের পেছনে পেছনে যেতে লাগল। পথ শেষ হয় না। হঠাৎ ছেলে মাছ দাঁড়াল। তারপর বলল, ‘মা কালো কালো কী যেন দেখছি। আমাদের দিকে আসছে।’

 

মা মাছ বলল, ‘মহাবিপদ। আর যাওয়া যাবে না। জেলেদের জাল। এদিকে আসছে। চলো আমরা ফিরে যাই।’

 

ছেলে মাছ বলল, ‘না মা, ফিরে যাব না। তুমি একটু দাঁড়াও। জালটা আর একটু কাছে আসুক। তারপর আমি কাছে গিয়ে দেখে আসি। জালের ভেতর দিয়ে পার হওয়া যাবে কি না?’

 

মা মাছ চোখ বড় বড় করে বলল, ‘না না জালের কাছে তোমার যাওয়া যাবে না। গেলেই কিন্ত বিপদ হতে পারে।’

 

ছেলে মাছ মায়ের কথা না শুনে জালের কাছে এসেছে। জালের কাছ থেকে ফিরে গিয়ে মাকে বলল, ‘মা, আমি জালের ফাঁস দিয়ে পার হয়ে যেতে পারব। জালে ফাঁস বেশ বড় বড়।’

 

মা বলল, ‘না না বাবা, এখন তোমার যাওয়া দরকার নেই। জেলেরা জাল তুলে নিয়ে যাক, তারপর আমরা যাব। একটু দেরি হোক, তাতে তো কোনো সমস্যা নেই।’

 

ছেলে মাছ বলল, ‘আমার আর ধৈর্য সহ্য হচ্ছে না মা। আমি যাবই। তুমি দাঁড়াও। আমি ওপার থেকে ঘুরে আসি।’ এই বলেই ছেলে মাছ মায়ের কথা না শুনেই যেতে লাগল। জালের ফাঁসের ভেতর যেই মাথা দিয়েছে, অমনি আটকে গেল তার পিঠের পাখনা। আর কোথায় যাবে ছেলে মাছ। বাঁচার জন্য যতই ছটফট করে, ততই জালে জড়িয়ে যায়। কাঁদে আর বলে, ‘মা, আমার ভুল হয়েছে। আমাকে বাঁচাও। আমাকে বাঁচাও।’

 

মা বলে কথা। ছেলেকে ফেলে চলে যেতে পারবে না। ছেলেকে বাঁচানোর জন্য নিজের জীবন দিয়েও দিতে পারে। মা মাছ দূর থেকে জোরে ঠেলা দিল ছেলে মাছকে। ছেলে মাছ মা মাছের ঠেলাতে জালের ফাঁস থেকে বের হয়ে গেল। মা মাছ নিজেই আটক পড়ে গেল। ছেলে মাছটা মায়ের পাশ দিয়ে ঘোরে আর কাঁদে। 

 

মা মাছ বলল, ‘কাছে আসো না। দূরে থাক। এখন থেকে সাবধানে চলবে। যাও দেখে এসো নতুন জায়গা।’

 

ছেলে মাছ বোকার মতো ঘোরে আর মায়ের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। কিছুই করতে পারে না মায়ের জন্য। একটু পর জেলেরা জাল তুলে দেখে বড় মাছ। বড় মাছ দেখে মহাখুশিতে জেলেরা জাল নিয়ে চলে যায়। কেউ বুঝতে পারল না, কেউ জানতেও পারল না। ছেলেকে বাঁচানোর জন্য মা নিজেই জীবন দিল। নদীর ভেতর কাঁদতে কাঁদতে ঘুরতে লাগল ছেলে মাছ।


 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৮ আগস্ট ২০১৫/রণজিৎ/সনি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়