ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

মাছ মেলায় কেনাবেচার প্রতিযোগিতা

আনোয়ার হোসেন শাহীন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৫৬, ১৩ জানুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মাছ মেলায় কেনাবেচার প্রতিযোগিতা

আনোয়ার হোসেন শাহীন, মাগুরা : মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার বড়রিয়ার মেলা হাজার হাজার মানুষের মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে। বস্ত্রশিল্প, হস্তশিল্প, কুটির শিল্পের নানা পণ্যের পাশাপাশি এ মেলার অন্যতম আকর্ষণ ‘মাছ মেলা’। প্রতিবছর মেলায় সারা দেশ থেকে বিক্রেতারা এখানে মাছ আনেন। বড় আকারের নানা  জাতের বিপুল মাছের সমাগম হয় এখানে।

মেলায় আসা মাছ ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, এবার মেলায় নানা জাতের অনেক  বড় মাছের আমদানি হয়েছে। মাছের ক্রেতাও মিলছে প্রচুর। সহস্রাধিক ব্যবসায়ী মেলায় গত বছর প্রায় এক কোটি টাকার মাছ বিক্রি করেছেন বলে জানান।

জানা গেছে,  উপজেলা সদর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে বালিদিয়ার বড়রিয়া গ্রামে  বাংলা পৌষ মাসের ২৮ তারিখে নিয়মিত প্রায় ১০০ বছর ধরে মেলা বসছে। প্রায় তিন বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে এখানে মেলা বসে। মেলা মূলত একদিন হলেও মেলার  এক সপ্তাহ আগ থেকেই মেলা শুরু হয়, মেলার  পরের দিন  থেকে মেলা আরো এক সপ্তাহ স্থায়ী হয়।

মেলায় বস্ত্র, হস্ত, চারু কারু প্রসাধনী, ফার্নিচার, খেলনা, বাসন-কোসন, তৈজষপত্র, মিষ্টি ও কুটির শিল্পের নানা পণ্যের প্রায় ১০ হাজার স্টল বসে । এ মেলার অন্যতম আকর্ষণ ‘মাছের মেলা’। মেলাকে ঘিরে বড়রিয়া পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোতে বিরাজ করে উৎসবের আমেজ। মেলা উপলক্ষে জামাই মেয়েদেরকে দাওয়াত করে আনা  এই এলাকার মানুষের অনেকটা রীতিতে পরিণত হয়েছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, প্রতিবারের মতো এবারো মেলায় প্রচুর মাছের আমদানি হয়েছে। বিরাট এলাকাজুড়ে মাছের পসরা সাজিয়ে বসে আছেন মাছ বিক্রেতারা। সহস্রাধিক স্টলে দেশের বিভিন্ন জায়গার মাছ বিক্রেতারা  এখানে মাছ বিক্রির জন্য এসছেন। তাঁরা নানা অঙ্গভঙ্গি করে সুর ধরে ডেকে ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন। কেউ কেউ বড় আকৃতির মাছ উপরে তুলে ধরে ক্রেতাদের ডাকছেন। মেলায় প্রচুর দেশি রুই, কাতল, বোয়াল, আইড় ও চিতল, কালবাউশ ও রিটা  মাছের সমাগম হয়েছে। এছাড়া কার্প জাতীয় নানা মাছের আমদানি হয়। ব্যবসায়ীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা হয়, কে কতো বেশি ওজনের মাছ মেলায় আনতে পারেন। এলাকার জামাইরা শ্বশুরবাড়ি যে যত বড় ও দামি মাছ কিনে নিয়ে যেতে পারেন তার ততো বেশি সুনাম ছড়িয়ে পড়ে।

মেলায় এবার প্রচুর পরিমাণে ঢাউষ সাইজের  দেশি রুই, কাতল, বোয়াল, আইড় ও চিতল মাছের আমদানি হয়েছে। এক কেজি থেকে শুরু করে বিশ কেজি পর্যন্ত এসব মাছের দাম হাঁকা হচ্ছে ৪০০ টাকা থেকে শুরু করে পনের হাজার টাকা পর্যন্ত। বিক্রিও হচ্ছেন প্রচুর। সামর্থ  অনুযায়ী ক্রেতারা এসব মাছ কিনছেন। বড় মাছ কেনার জন্য বড়রিয়া মেলাই সব চেয়ে উত্তম জায়গা।



মাগুরা সদরের বাসিন্দা আরিফুল ইসলাম প্রতি বছর এ মেলায় আসেন মাছ কেনার জন্য। এবার তিনি সাত কেজি ওজনের চিতল মাছ কিনেছেন সাড়ে চার হাজার টাকায়। তিনি বলেন, টাকা হলেও সব সময় এমন মাছ মেলে না।

খুলনার মাছ ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম ১০ কেজি ওজনের রুই মাছের দাম হাঁকছেন বারো  হাজার টাকা। তিনি বলেন, দরদাম করেই এখানে মাছ বিক্রি হয়। তারা এক সঙ্গে চারজন  এসেছেন মেলায় মাছ বিক্রির জন্য। এখানে মাছ বিক্রির জন্য বছরজুড়েই তাদের প্রস্তুতি থাকে।

নড়াইলের কালিয়া থেকে বোয়াল মাছ বিক্রি করতে এসছেন আজিজার রহমান। তিনি প্রায় এক লাখ টাকার মাছ বিক্রি করেছেন এবার। তবে মেলায় এবার মাত্রারিক্ত খাজনা আদায় করা হচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।

বড়রিয়া এলাকার প্রবীণ বাসিন্দা আব্দুল আজিজ মিয়া (৭০) বলেন, মাছের জন্য বড়রিয়া মেলা বিখ্যাত।  মেলায় আর যাই কিনি না কেন, একটা বড় মাছ না কিনলেই নয়।

বড়রিয়া মেলা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক শাহাজান সর্দার বলেন, এবারের মেলা জমে উঠেছে। প্রতিটি স্টলে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। দূরদূরন্ত থেকে আগত ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তার জন্য প্রশাসনের সহযোগিতায় আমর নানা পদক্ষেপ নিয়েছি।



রাইজিংবিডি/মাগুরা/১৩ জানুয়ারি ২০১৭/আনোয়ার শাহীন/বকুল/রিশিত

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়