ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

মাগুরার ‘রুটি মেকার’ এখন ২৫ দেশে

মো. আনোয়ার হোসেন শাহীন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:৫৩, ৩ অক্টোবর ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মাগুরার ‘রুটি মেকার’ এখন ২৫ দেশে

রুটি মেকারের উদ্ভাবক হুমায়ুন করিব (ইনসেটে একটি রুটি মেকার)

মো. আনোয়ার হোসেন শাহীন, মাগুরা : স্থানীয় প্রযুক্তি ও কাঁচামালে তৈরি ‘মাগুরার রুটি মেকার’ দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ইতিমধ্যে পণ্যটি পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে পরিবেশবান্ধব যন্ত্র হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। যে কারণে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে যেমন সক্ষম হচ্ছে, তেমনি স্থানীয় বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করছে।  


বিশ্বের প্রথম বিদ্যুৎবিহীন পরিবেশবান্ধব রুটি তৈরির যন্ত্রটির উদ্ভাবক মাগুরার হুমায়ুন কবির। বয়সে তরুণ এবং পেশায় আইটি বিশেষজ্ঞ কবির। স্ত্রীর রুটি বানানোর কষ্ট দেখে তিনি সহজে ব্যবহার উপযোগী একটি যন্ত্র বানানোর চেষ্টা করেন। মাত্র তিন মাসের গবেষণায় সফল হন তিনি। এরই মধ্যে তিনি নিজের বাড়ি শালিখা উপজেলার বুনাগাতি গ্রামে তার মেয়ের নামে ‘লাইবা রুটি মেকার’ নামে একটি কারখানা স্থাপন করে স্বল্প পরিসরে এর উৎপাদন শুরু করেছেন।


সরেজমিনে বুনাগাতি গ্রামে লাইবা রুটি মেকার কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে ৩০ জন শ্রমিক কাজ করছেন। যারা মাসে ২০০ থেকে ২৫০টি মেশিন তৈরি করতে পারেন। এই কারখানায় নিয়োজিত শ্রমিকদের ভেতর বেশির ভাগই নারী শ্রমিক। যারা বাড়ির কাজ সেরে দিনের একটি সময় এখানে শ্রম দিয়ে অতিরিক্ত অর্থ উপার্জন করছেন। আর অত্যন্ত যতœ নিয়ে কয়েকটি ধাপে কাঠ দিয়ে তৈরি করছেন একেকটি রুটি মেকার।


লাইবা রুটি মেকারের উদ্ভাবক হুমায়ুন কবিরের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তার উদ্ভাবিত এই রুটি মেকারের চাহিদা বাজারে প্রচুর থাকলেও উৎপাদন স্বল্পতার কারণে সেই হারে সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। লাইবা রুটি মেকারের উপযোগিতার কারণে ইতিমধ্যে অনেকে তার কাছ থেকে সংগ্রহ করে দেশের বাইরেও নিয়ে গেছেন। অনলাইন প্রচারের মাধ্যমে বর্তমানে বিশ্বের অন্তত ২৫টি দেশে তার তৈরি রুটি মেকার পৌঁছে গেছে।


কবির বলেন, বাজারে বর্তমানে ভারতের তৈরি বিভিন্ন কোম্পানির বৈদ্যুতিক রুটি মেকার পাওয়া যায়। কিন্তু সেটি দিয়ে সেদ্ধ আটার রুটি তৈরি করা সম্ভব না হওয়ায় বাংলাদেশের বাজার ধরতে পারেনি। অন্যদিকে বিদ্যুত বা বিকল্প কোনো শক্তির ব্যবহার ছাড়াই লাইবা রুটি মেকার দিয়ে কাঁচা বা সেদ্ধ চাল-গম-ডাল-আলুর আটা দিয়ে এক সঙ্গে একাধিক রুটি, লুচি বা ফুচকা তৈরি করা যায়। যেখানে স্বাদের কোনো পরিবর্তনই হয় না।

 

দেশীয় এ রুটি মেকারের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ব্যাপার হচ্ছে, রুটি তৈরি সম্পর্কে কোনো ধারণা না থাকলেও যন্ত্রটি দিয়ে রুটি তৈরি করা সম্ভব। শুধু এর হাতলে চাপ প্রয়োগ করলেই আটার গোলা চমৎকার গোলাকৃতির রুটিতে পরিণত হয়ে ওঠে। যারা রুটি বানাতে গেলে এবড়ো-থেবড়ো করে ফেলেন, তাদের সম্মান বাঁচাতে খুবই সহায়ক এই যন্ত্রটি। এটি চালাতে বিদ্যুতের কোনো প্রয়োজন পড়ে না। অল্প পরিশ্রমে বেশি রুটি তৈরি করা যায়। তাই সময় ও শ্রম দুই-ই বাঁচে। অন্যদিকে এর মাধ্যমে তৈরি রুটি একটি নির্দিষ্ট মাপের হয়। বিধায় একই রকম ফোলা ও ভাঁজা হয়।


উদ্ভাবক হুমায়ুন কবির জানান, ‘লাইবা রুটি মেকার’ বিশ্বের একমাত্র যন্ত্র যাতে গমের সেদ্ধ আটার রুটি, গমের কাঁচা আটার রুটি, সেদ্ধ চালের গুঁড়ার রুটি, তালের রুটি, কালোজিরার রুটি, মাসকলাইয়ের রুটি, মিষ্টিআলুর রুটি, দিল্লিকা রুটি, বেসন রুটি, ভেজিটেবল টোস্ট রুটি, মাসরুম রুটি, ইন্ডিয়ান বাটার রুটি, খামিরি রুটি, মিছি রুটি, পালক পরোটা, পনির পরোটা, মাঠার পরোটা, মেথিপরোটা, গোবি পরোটা, ইন্ডিয়ান লাচ্চা পরোটা, এগ রোল পরোটা, কিমা পরোটা, ক্যাপসিকাম চিজ পরোটা, ক্যাবেজ পরোটা, পিস পরোটা, লুচি ও ফুচকা প্রভৃতি তৈরি করা যায়।


হুমায়ুন কবিরের ইচ্ছা, ভবিষতে সরকারি সহায়তা পেলে কাঠের পরিবর্তে মেটাল মেশিন তৈরি করবেন। তাহলে তার কারখানায় তৈরি রুটি মেকার দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও পাঠাতে পারবেন। আর তার এই স্বপ্ন বাস্তবায়নে চান সরকারি সহায়তা। সহজ শর্তে ঋণ সুবিধা পেলে তিনি তার কারখানাটির পরিধি আরো বাড়াতে সক্ষম হবেন। এতে করে এই প্রতিষ্ঠানটি স্থানীয় অনেক বেকার শ্রমিকের কর্মসংস্থানের একটি ঠিকানা হতে পারে।

এ বিষয়ে মাগুরা বিসিক শিল্পসহায়ক কেন্দ্রের উপ-ব্যবস্থাপক আনোয়ারুল সিদ্দিক বলেন, হুমায়ুন কবিরের রুটি মেকারটি সম্পূর্ণ বিজ্ঞানসম্মত এবং অভিনব। পণ্যটি উৎপাদনে যথাযথ সহায়তা দেওয়া সম্ভব হলে এর বৃহৎ রূপ দেওয়া সম্ভব। যার সুবাদে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আসতে পারে।



রাইজিংবিডি/মাগুরা/৪ অক্টোবর ২০১৫/রাসেল পারভেজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়