ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

মাগুরায় শোলার কাজে সচ্ছলতা

আনোয়ার হোসেন শাহীন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:২৯, ২৫ জুন ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মাগুরায় শোলার কাজে সচ্ছলতা

শোলা দিয়ে বানানো হচ্ছে ঘর সাজানো ফুলের ঝাঁপি

মো. আনোয়ার হোসেন শাহীন, মাগুরা : কৃত্রিম তন্তু আর প্লাস্টিকের দাপটের মাঝেও এই যুগে শোলার তৈরি নানা শিল্পকর্ম আজও সমাদৃত। ফুল, পাখি, মালা, মুকুট, টুপিসহ বাহারি রঙের নানা খেলনা, পূজা ও বিয়ের সরঞ্জামের এখনো চাহিদা রয়েছে প্রচুর।

মাগুরায় অর্ধশত পরিবার শোলা দিয়ে নানা পণ্য তৈরি করে স্বচ্ছলতা এনেছেন। নানা প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে বংশ পরম্পরায় আঁকড়ে আছেন বাপদাদার এই পেশা। স্থানীয়ভাবে শোলার কারিগরদের মালাকার বলা হয়। এক ধরনের জলজ উদ্ভিদ দিয়ে তৈরি করা হয় শোলার সামগ্রী। বিয়ে, পূজা ও মেলার সঙ্গে মালাকারদের রয়েছে জীবন ও জীবিকার সম্পর্ক।

 

মাগুরার শালিখা উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম শতপাড়া। এই গ্রামে ৩০-৫০টি পরিবারের সদস্যরা জলজ উদ্ভিদ শোলা দিয়ে তৈরি করছেন নানা রকম শিল্পকর্ম।

 

শোলা থেকে তৈরি হচ্ছে কুটির শিল্পের নানা সামগ্রী


সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বাড়ির প্রতিটি ঘরের বারান্দা ও উঠানে বসে ধারালো ছুরি দিয়ে কেউ শোলা কাটছেন, কেউ রং করছেন, কেউ মালা গাঁথছেন। দক্ষ হাতের ছোঁয়ায় তৈরি জিনিসপত্র জীবন্ত হয়ে উঠছে।

 

মালাকার সম্প্রদায়ের অশীতিপর বৃদ্ধ শংকর মালাকার জানান, বংশপরম্পরায় তারা এ পেশায় জড়িত। বর্তমানে তিনি ও তার স্ত্রী, তিন ছেলে, তিন ছেলের বউ ও মেয়ে-জামাই মিলে পরিবারের ১০ সদস্য শোলা দিয়ে নানা শিল্পকর্ম তৈরি করেন। এছাড়া এলাকার অরও ১৫-২০ জন হাজিরা ভিত্তিতে তাদের কাজে সহযোগিতা করে। এ কাজ করেই শংকরের ১৫ সদস্যর সংসার চলছে। চলছে নাতি-পুতিদের পড়ালেখার খরচ।

 

শোলা ও বাশঁ থেকে তৈরি হচ্ছে হাতপাখা

 


তিনি বলেন, ‘এ কাজ করে তাদের পাশাপাশি এলাকার আরও শতাধিক  নারী-পুরুষ প্রত্যেকে প্রতিমাসে পাঁচ হাজার থেকে সাত হাজার টাকা আয় করছে।’ আধুনিক সাজ-সজ্জার আধিক্যর মধ্যেও সারা দেশের মানুষের কাছে প্রাচীন এই কারুশিল্পের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে বলে তিনি জানান।

 

শোলা থেকে তৈরি হচ্ছে কুটির শিল্পের নানা সামগ্রী


স্থানীয়রা জানান, পূজা ও বিয়ের এমন কিছু উপকরণ রয়েছে যা এই শোলার শিল্পকর্ম ছাড়া সম্পন্ন হয় না। এ এলাকায় তৈরি শোলার পণ্য ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, সোনারগাঁ ও মানিকগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলায় যায়। বিভিন্ন জায়গা থেকে ব্যবসায়ীরা তাদের বাড়ি থেকে এগুলো নিয়ে যান। কোন কোন ব্যবসায়ী সময়মতো চাহিদা অনুযায়ী পণ্য পেতে অগ্রিম টাকা দিয়ে যান।

 

রতন কুমার মালাকার জানান, একসময় এসব এলাকায় প্রচুর শোলা পাওয়া গেলেও এখন তেমন পাওয়া যায় না। শোলা জন্মে বিল-বাওড় বা জলাভূমিতে। আগে তারা এসব নিজেরাই সংগ্রহ করতেন। এখন জলাভূমি কমে যাওয়ায় অন্যদের মাধ্যমে নড়াইল ও খুলনা থেকে সংগ্রহ করতে হয়।

 

শোলার তৈরি ফুল র্ং করার পর শুকাতে দিচ্ছেন দুই গৃহবধূ

আগে এলাকার মালাকার সম্প্রদায়ের প্রত্যেক বাড়িতে শোলার কারুপণ্য তৈরি হলেও এখন এ সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে।  অনেকেই চলে যাচ্ছেন নতুন পেশায়।

শালিখার সংবাদকর্মী দীপক কুমার চক্রবর্তী বলেন, ‘হিন্দু সম্প্রদায়ের নানা অনুষ্ঠান ও বিশেষ করে বিয়ের সাজে শোলার রকমারি পণ্যের ব্যবহার  অত্যাবশ্যক। শোলার পণ্য তৈরির এই পেশা আজও   কিছু পরিবার আঁকড়ে ধরে আছেন। এ শিল্পকে বাঁচাতে সরকারি সহায়তা প্রয়োজন।’

 

শোলার তৈরি ফুল র্ং করার পর শুকাতে দিচ্ছেন দুই গৃহবধূ


মাগুরার ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প ফাউন্ডেশনের সহকারী সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. আবদুস সামাদ বলেন, ‘শালিখার শতপাড়ার মালাকারদের উৎপাদিত শোলার পণ্যের ব্যাপক সুনাম ও চাহিদা সারাদেশেই রয়েছে। এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের এগিয়ে আসা দরকার।’

 


রাইজিংবিডি ডট কম/ঢাকা/২৫ জুন ২০১৬/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়