মার্চে চালু হচ্ছে ওয়ালটনের কম্প্রেসার কারখানা

নিজস্ব প্রতিবেদক : বছরে ৪০ লাখ পিস বিশ্বমানের কম্প্রেসার তৈরি করতে গাজীপুরের চন্দ্রায় কারখানা স্থাপন করেছে ওয়ালটন। চলতি বছরের মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহেই এ কারখানা চালু হতে যাচ্ছে।

কারখানার অবকাঠামো নির্মাণ থেকে শুরু করে যন্ত্র স্থাপন, প্রকৌশলী ও কর্মী নিয়োগসহ সব প্রক্রিয়াই প্রায় শেষ হয়েছে। এখন শুধু নবনির্মিত কম্প্রেসার উৎপাদন ইউনিট চালুর অপেক্ষা। মার্চে আনুষ্ঠানিকভাবে কম্প্রেসার কারখানা চালুর মাধ্যমে অবসান ঘটবে দীর্ঘ প্রতিক্ষার। এর মাধ্যমে বিশ্বে ১৫তম কম্প্রেসার উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে আবির্ভূত হবে বাংলাদেশ। আর এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ হবে অষ্টম কম্প্রেসার উৎপাদনকারী দেশ। 

মঙ্গলবার গাজীপুরের চন্দ্রায় ওয়ালটন মাইক্রো-টেক করপোরেশনে আয়োজিত দিনব্যাপী প্লাজা কনফারেন্সে এ কথা জানান ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম আশরাফুল আলম।

দিনব্যাপী সম্মেলনে তিনি বলেন, আগামী মার্চে কম্প্রেসার কারখানা উদ্বোধনের মাধ্যমে দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ হবে। এটি শুধু ওয়ালটনের জন্যই নয়, বাংলাদেশের উচ্চ প্রযুক্তির পণ্য উৎপাদন খাতেও একটি মাইলফলক হবে। বহির্বিশ্বে এক নতুন পরিচয় নিয়ে আবির্ভাব হবে বাংলাদেশের। দেশের ভাবমূর্তি পৌঁছাবে অনন্য উচ্চতায়। প্রযুক্তি পণ্য উৎপাদন খাতে বাংলাদেশে এক নতুন দিগন্তের সূচনা হবে।

তিনি আরো বলেন, ওয়ালটন কারখানায় বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ও যন্ত্রের সমন্বয়ে বার্ষিক ৪০ লাখ পিস আন্তর্জাতিক মানের কম্প্রেসার তৈরি করা হবে। এর মধ্যে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি করা হবে ২৫ লাখ পিস। গুণগতমানের দিক থেকে বিশ্ববাজারে অন্যতম শীর্ষস্থান দখল করতে সক্ষম হবে ওয়ালটন কম্প্রেসার। গ্রাহক পর্যায়ে ওয়ালটনের তৈরি কম্প্রেসারের উচ্চ গুণগতমান নিশ্চিতে বাড়ানো হবে রিপ্লেসমেন্ট গ্যারান্টির মেয়াদ।

তিনি জানান, কারখানায় কম্প্রেসার উৎপাদন শুরু হলে স্থানীয় বাজারে ওয়ালটন ব্র্যান্ডের ফ্রিজের দাম কমবে বহুলাংশে। পাশাপাশি চলতি বছরের মধ্যে বিশ্ববাজারে সবচেয়ে সাশ্রয়ী মূল্যে আন্তর্জাতিক মানের ফ্রিজ সরবরাহ করতে সক্ষম হবে ওয়ালটন।

দিনব্যাপী এই সম্মেলনের উদ্বোধন ঘোষণা করেন ওয়ালটন গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক ও বিপণন বিভাগের প্রধান সমন্বয়ক ইভা রিজওয়ানা।

কনফারেন্সে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ওয়ালটন গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান এস এম নূরুল আলম রেজভী। বিশেষ অতিথি ছিলেন গ্রুপের চেয়ারম্যান এস এম নজরুল ইসলাম, গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান এস এম শামসুল আলম, ওয়ালটন গ্রুপের পরিচালক এস এম রেজাউল আলম ও রাইসা সিগমাসহ ওয়ালটনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

কনফারেন্সে ওয়ালটন ব্র্যান্ডের ল্যাপটপের ওপর ছিল বিশেষ উপস্থাপনা। ল্যাপটপের সাশ্রয়ী মূল্য, গুণগত উচ্চ মান এবং ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে বক্তৃতা করেন ওয়ালটনের পরিচালক এস এম রেজাউল আলম।

সারা দেশের ৪৮টি জোন থেকে সাত শতাধিক প্লাজা ব্যবস্থাপক, সহকারী ব্যবস্থাপক এবং আইটি ব্যবস্থাপক একত্রিত হন ওয়ালটন মাইক্রো-টেক করপোরেশনে। অতিথিরা কারখানা প্রাঙ্গণে পৌঁছালে ওয়ালটনের কর্মকর্তারা তাদেরকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।

সম্মেলনে আসা প্লাজা কর্মকর্তাদের সঙ্গে ২০১৭ সালে ওয়ালটনের ফ্রিজ, এলইডি টিভি, এসিসহ অন্যান্য গতানুগতিক হোমঅ্যাপ্লায়েন্স ও ইলেকট্রনিক্স পণ্যের পাশাপাশি ল্যাপটপ, কম্প্রেসার, ইলেকট্রিক সুইচ-সকেটসহ অসংখ্য নতুন নতুন ডাইভারসিফাইড পণ্যের কৌশলগত বিক্রয় ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা নিয়ে মতবিনিময় করেন ওয়ালটন গ্রুপের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

২০১৬ সালে প্লাজার বিক্রি বৃদ্ধিতে অসাধারণ কৃতিত্বের জন্য ২৭ জনকে পুরস্কৃত করা হয়। এদের মধ্যে প্রথম পুরস্কার হিসেবে ৩ জনকে ঢাকা-ব্যাংকক-ঢাকা ফ্যামিলি এয়ার টিকেট, দ্বিতীয় পুরস্কার হিসেবে আরো ৩ জনকে ঢাকা-কাঠমুন্ডু-ঢাকা ফ্যামিলি এয়ার টিকেট ও বাকি ২১ জনকে ফ্রিজ, এলইডি টিভি, ওয়াশিং মেশিন, মাইক্রোওয়েব ওভেন, স্মার্ট ফোন ইত্যাদি বিশেষ পুরস্কার দেওয়া হয়।

দিনব্যাপী কনফারেন্সের শুরুতে ওয়ালটনের প্লাজা থেকে আগত অতিথিরা সরেজমিনে ফ্রিজ, এলইডি টেলিভিশন, এয়ার কন্ডিশনার, ব্লেন্ডার, রাইস কুকার, সিলিং ও ওয়াল ফ্যান, রিচার্জেবল ফ্যান, এলইডি প্যানেল, লাইট, টিউব লাইটসহ অন্যান হোমঅ্যাপ্লায়েন্স, ইলেকট্রনিকস ও ইলেকট্রিক্যাল অ্যাপ্লায়েন্সের উৎপাদন ইউনিট ঘুরে দেখেন। এ সময় উৎপাদন পর্যায়ে ব্যবহৃত অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও মেশিনারিজ, কঠোর মান নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া ও বিভিন্ন পণ্যের শক্তিশালী গবেষণা ও উন্নয়ন বিভাগ দেখে আনন্দিত হন। এ ছাড়া, ওয়ালটন মাইক্রো-টেক করপোরেশনে নতুন নতুন পণ্য উৎপাদনের লক্ষ্যে চলমান বিশাল কর্মযজ্ঞ দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেন।

মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে দিনব্যাপী এ সম্মেলনের সমাপ্তি হয়।

 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৪ জানুয়ারি ২০১৭/পলাশ/রফিক