ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

মির্জা আব্বাসের দুর্নীতি অনুসন্ধানে দুদকের নয়া উদ্যোগ

এম এ রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:০০, ২৯ নভেম্বর ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মির্জা আব্বাসের দুর্নীতি অনুসন্ধানে দুদকের নয়া উদ্যোগ

এম এ রহমান : বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ঢাকা মহানগরের আহ্বায়ক মির্জা আব্বাসের দুর্নীতি অনুসন্ধানে গতি আনতে নতুন উদ্যোগ নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

 

২০০৬ সালে জোট সরকারের সময়ে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী থাকাকালে তার বিরুদ্ধে রাজউকের উত্তরা তৃতীয় পর্ব প্রকল্পের ৮৯৭টি প্লট বরাদ্দে বড় ধরনের অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে।

 

অভিযোগ রয়েছে কোনো প্রকার লটারি কিংবা আবেদনকারীর সিনিয়ারিটি বা অন্য কোনো যোগ্যতা না মেনে ‘জেনুইন অ্যান্ড ডিজার্ভিং’ পদ্ধতির নামে নিজের পছন্দের লোকজনকে ওই সব প্লট দিয়ে পুকুরচুরি করেছেন মির্জা আব্বাস।

 

এমন অভিযোগের ভিত্তিতে ২০১২ সালের প্রথম দিকে অনুসন্ধানে নামে দুদক। একই সঙ্গে দুদকের উপপরিচালক মো. মাহমুদ হাসানকে অনুসন্ধান কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়। যার স্মারক নম্বর দুদক- বি. অনু: ও তদন্ত: ২/ ৬৯-২০১২। 

 

অনুসন্ধানে গতি না আসায় ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে অনুসন্ধান কর্মকর্তা পরিবর্তন করে উপপরিচালক মো. আনোয়ারুল হককে দায়িত্ব দেওয়া হয়। সম্প্রতি এ-সংক্রান্ত দুর্নীতির অগ্রগতি প্রতিবেদন কমিশনে জমা দেওয়া হয়।  

 

কিন্তু তিন বছর অতিক্রম করলেও নথিপত্র সংগ্রহ করা ছাড়া বস্তুত অনুসন্ধানে কোনো অগ্রগতি হয়নি বলে কমিশন মনে করে। তাই অনুসন্ধান কাজে গতি আনতে নতুন উদ্যোগ নেওয়া হয়। এর অংশ হিসেবে তৃতীয়বারের মতো অনুসন্ধান কর্মকর্তা পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন।

 

এবার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে দুদকের উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর হোসেনকে। গত সপ্তাহে অনুসন্ধানের দায়িত্ব বুঝে নিয়ে পুরোনো নথিপত্র যাচাই-বাছাইয়ের কাজ শুরু করেছেন তিনি।

 

এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুদকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা রাইজিংবিডিকে বলেন, প্রাথমিক অনুসন্ধানে ঘটনার অনেকটাই সত্যতা পাওয়া যায়। জেনুইন অ্যান্ড ডিজার্ভিং পদ্ধতির আওতায় ৮৯৭টি প্লটের মধ্যে কমপক্ষে ৫০০টি প্লট নিয়ে অনিয়ম হয়েছে। রাজউক থেকে কাগজপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। কিন্তু অনুসন্ধান কর্মকর্তা যথাযথভাবে তথ্য উপস্থাপন করতে পারছে না কিংবা অভিযোগ সংশ্লিষ্ট প্রকৃত তথ্য-উপাত্ত উদঘাটন করতে পারছে না। তাই কমিশন অনুসন্ধান কাজ আরো গতিশীল করতে নতুন করে অনুসন্ধান কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছে।

 

অভিযোগের বিষয়ে দুদক সূত্রে জানা যায়, মির্জা আব্বাস আইনকানুনের তোয়াক্কা না করে নিজের ইচ্ছামতো রাজউক ও গণপূর্ত অধিদফতরে অনিয়ম ও দুর্নীতির রাজত্ব কায়েম করেছিলেন। যার মধ্যে অন্যতম ‘জেনুইন অ্যান্ড ডিজার্ভিং’ পদ্ধতির নামে প্লট বরাদ্দ ও সরকারি পরিত্যক্ত ১৭টি মূল্যবান বাড়ি অত্যন্ত কম দামে বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া।

 

‘জেনুইন অ্যান্ড ডিজার্ভিং’ পদ্ধতিতে প্রথমে প্লটের ১০ শতাংশ মন্ত্রীর পছন্দে বরাদ্দ দেওয়ার ঘোষণা ছিল। কিন্তু পরে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তা ২০ শতাংশ করা হয়। যার মাধ্যমে ২০০৬ সালে মির্জা আব্বাস পছন্দের লোকদের মধ্যে রাজউকের উত্তরা তৃতীয় পর্ব প্রকল্পের ৮৯৭টি প্লট বরাদ্দ দেন।

 

ফলে সাধারণ ও নিরীহ আবেদনকারীরা প্লট পাওয়া থেকে বঞ্চিত হলেও লাভবান হন মির্জা আব্বাস এবং রাজউকের আশীর্বাদপুষ্ট কতিপয় কর্মকর্তা ও কর্মচারী।

 

অভিযোগ রয়েছে, প্লট দেওয়ার নামে তখন প্রতি কাঠায় ঘুষ নেওয়া হয়েছে ৩ লাখ টাকা থেকে ৯ লাখ টাকা। এর বাইরে তার আশীর্বাদপুষ্ট রাজউকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ৮ থেকে ১২ লাখ টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে। ফলে কয়েক গুণ বেশি প্লট নিতে হয়েছে।

 

সূত্র আরো জানায়, ২০০৭ সালে ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ওই দুর্নীতির তদন্তের উদ্যোগ নেয়। ওই বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি তত্ত্বাবধায়ক সরকার মির্জা আব্বাসের বিতর্কিত ‘জেনুইন অ্যান্ড ডিজার্ভিং’ পদ্ধতিতে দেওয়া ৮৯৭ প্লটের বরাদ্দ বাতিল ঘোষণা করে। এর পাশাপাশি দুদক তার নামে সম্পদের হিসাব চেয়ে চিঠি পাঠায়। পরে তাকে গ্রেফতারও করা হয়। এ ছাড়া দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়ায় কর্তৃপক্ষ মির্জা আব্বাসের ঘনিষ্ঠ কয়েকজন কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করে।

 

‘জেনুইন অ্যান্ড ডিজার্ভিং’ পদ্ধতিতে ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকজনের পক্ষ থেকে অভিযোগে বলা হয়েছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ৮৯৭ প্লটের বরাদ্দ বাতিল করার পর অসংখ্য মানুষ রাজউক ভবনে গিয়ে দালালদের খোঁজাখুঁজি করে। অনেকে মির্জা আব্বাসের শাহজাহানপুরের বাসভবনেও যান। কিন্তু কেউই ঘুষের টাকা ফেরত পায়নি।

 

অন্যদিকে তার বিরুদ্ধে ২০০৪ সালে সাজানো নিলামের মাধ্যমে রাজধানীর গুলশান, বনানী ও ধানমন্ডি এলাকার সরকারি পরিত্যক্ত ১৭টি মূল্যবান বাড়ি অত্যন্ত কম দামে বিক্রি করে কোটি কোটি টাকার হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

 

এর মধ্যে রয়েছে গুলশানের ৮টি বাড়িসহ ১৩৪ দশমিক ৭৯ কাঠা জমি, ধানমন্ডিতে সাতটি বাড়িসহ ১১২ দশমিক ৬০ কাঠা জমি, নিউ ইস্কাটনে বাড়িসহ ৭ দশমিক ৪৫ কাঠা জমি ও বনানীতে ৮ দশমিক ১৪ কাঠার জমিসহ একটি বাড়ি।

 

সূত্র আরে জানায়, নিলাম কার্যক্রমে মোট ২৮৪ জন দরদাতা ও প্রতিষ্ঠান অংশ নিলেও প্রাক্তন মন্ত্রী ঘনিষ্ঠদের মাঝে ১৭টি বাড়ি মাত্র ৬৫ কোটি ১৪ লাখ ৬০ হাজার ১৮৪ টাকায় বিক্রি করেন। প্রতি কাঠার গড় দাম পড়ে মাত্র ২৪ লাখ ৭৭ হাজার ২২৩ টাকা। ২০০৪ সালে এলাকাগুলোতে যেখানে প্রতি কাঠার দাম ছিল ১ থেকে ২ কোটি টাকা।

 

শুধু তাই নয়, সরকারি ওই সব বাড়ি বিক্রির নিলাম নিয়ে রাজউক ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা আপত্তি তুলেছিলেন। কিন্তু মির্জা আব্বাসের হস্তক্ষেপে তাদের আপত্তি টেকেনি।

 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৯ নভেম্বর ২০১৫/এম এ রহমান/ইভা/এএন

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়