ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

মুমুর চোখে বঞ্চিত শিশুদের আলোয় ফেরানোর স্বপ্ন

রেজাউল করিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৪৭, ৪ মে ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মুমুর চোখে বঞ্চিত শিশুদের আলোয় ফেরানোর স্বপ্ন

সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের সঙ্গে সাদিয়া মুমু

রেজাউল করিম, চট্টগ্রাম : কৈশোর পেরিয়ে মাত্র তারুণ্য ছুঁয়েছেন সাদিয়া মুমু। ঠিক এই সময়টাতে যে কোন তরুণ-তরুণীর চোখে থাকে ঝলমলে রঙিন আগামী। কিন্তু মুমু অন্য সবার চেয়ে আলাদা। সবার মধ্যে থেকেও ব্যতিক্রমী। সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের কষ্ট তার হৃদয় ছুঁয়ে যায়। সুবিধা ও অধিকার বঞ্চিত শিশুদের আলোয় ফেরানোর স্বপ্ন মুমু’র চোখে।

গত ৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে চট্টগ্রামে সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের মুখে একটু হাসি ফোটানোর প্রাণান্ত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন সাদিয়া মুমু।

পুরো নাম সাদিয়া বিনতে শাহজাহান (মুমু)। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ৪র্থ বর্ষের ছাত্রী মুমু ছোট বেলা থেকেই ব্যতিক্রম। সব সময় অন্যের জন্য কিছু করতে পারার মধ্যেই নিজের ভালোলাগা খুঁজে নেওয়ার চেষ্টা তার। ক্ষুধার্ত কোন শিশুর মুখে খাবার তুলে দিয়ে একটু হাসি ফেরানোর মধ্যেই আনন্দ মুমুর।

এসব নিয়ে আলাপ হয় সাদিয়া মুমুর সঙ্গে। এক প্রশ্নের জবাবে মুমু বলেন, ‘সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের প্রতি ভালোবাসা কবে থেকে ঠিক বলতে পারবো না, কেবল রাস্তার ধারে অনাহার মুখ আর ধুলেমাখা হাড্ডিসার শরীরগুলো দেখলে চোখ ফেটে কান্না বেরুতো। খুব কষ্ট লাগতো যখন ফুটপাতে চলতে গিয়ে দেখতাম রাস্তার ধারে খালি গায়ে শুয়ে আছে ওরা। দৌড়ে গিয়ে কোলে নিয়ে মাথায় হাত বুলাতাম, আরাম পেয়ে চোখ মেলে আমার দিকে তাকিয়ে হাসতো। তাদের এই নিষ্পাপ হাসি দেখেই আমার মন শান্ত হতো। মনে হতো এর চেয়ে শান্তি আর কিসে?’


মুমু বলেন, ‘আমি একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। অনেকে আমার এসব দেখে হাসাহাসি করে, আমাকে হেয় করে কথা বলে, আমি এসবে কান দেই না। কারণ আমার আহবান মানবতার জন্য। মানবের মুক্তি।’

মুমু তার এগিয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে বলেন, ‘সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের জন্য কিছু করতে হলে অর্থটাই মুখ্য। আমি শিক্ষার্থী হওয়ার কারণে আর্থিক দৈন্যতা সবসময় ছিল। কিন্তু এতে আমি পিছপা হইনি। আমার সাধ্যের মধ্যে ওদের মুখে হাসি ফোটানোর চেষ্টা আমার লক্ষ্যে পরিণত হয়েছে।’

মুমু বলেন, ‘আমার একার পক্ষে সম্ভব না হওয়ায় আমি যুক্ত হই সামাজিক সংগঠনগুলোর সাথে। যাতে সম্মিলিত প্রয়াসে সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের মুখে একটু হাসি ফোটাতে পারি।’


সাদিয়া মুমু তার কার্যক্রম সম্পর্কে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের রেলওয়ে স্টেশনে পেপার বিক্রি করা শিশুদের নানা সমস্যা দেখেছি। ওদের বাসায় গিয়ে অভিভাববকদের বুঝিয়ে বলেছি। ওদের কয়েকজনকে ভর্তি করিয়ে দিয়েছি স্কুলে। ওরা অনেকেই এখন ফুল টাইম ছাত্র। ভ্রাম্যমাণ পথশিশুদের স্কুলগুলোতে আমি সময় দেই। তবে আমার স্বপ্ন একদিন নিজেই গড়ে তুলবো সুবিধা বঞ্চিত পথ শিশুদের নিরাপদ আলয়।’

 


রাইজিংবিডি/চট্টগ্রাম/৪ মে ২০১৬/রেজাউল/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়