ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

মৃতের সঙ্গে পিকনিক

মারুফ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:৩০, ২৭ মে ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মৃতের সঙ্গে পিকনিক

অন্য দুনিয়া : গ্রিসের একটি নৃগোষ্ঠীর নাম পনটিক। ১৯১৪ থেকে ১৯২৩ সালের মধ্যে কৃষ্ণ সাগরের তীর ঘেষে বসবাস শুরু করেছিল তারা।

 

যখন অটোম্যান, কেমালিস্টস ও নিও-তুর্কিরা গ্রিসে হত্যাযজ্ঞ চালায় তখন পনটিকস নৃগোষ্ঠীর প্রায় তিন লাখ ৫০ হাজার মানুষ নিহত হয়। আর যারা বেঁচে ছিলেন তাদের বংশধররা এখনো গ্রিসে উদ্বাস্তু হিসেবে আশ্রয় খুঁজেন।

 

পনটিকস নৃগোষ্ঠী বেশ কিছু আচার-অনুষ্ঠান পালন করত। বংশ পরম্পরায় ভাগ্য বিড়ম্বিত সেই জনগোষ্ঠীর বেঁচে থাকা সদস্যরা এখনো তাদের পুর্বপুরুষের কিছু ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো মৃতদের সঙ্গে পিকনিক করা।  

 

প্রতিবছর এস্টার সানডের পরের রোববার যা সেইন্ট টমাস সানডে হিসেবে পরিচিত, গ্রিসের রিজানা গ্রামের কয়েকটি পনটিক পরিবার স্থানীয় কবরস্থানে যান এবং মৃত পূর্বপুরুষদের কবরের কাছে পিকনিক করেন।

 

তারা ফোল্ডিং টেবিল ও চেয়ার, টেবিল ক্লথ, ঐতিহ্যবাহী খাবার, ভদকা, ফুল এবং মোমবাতি নিয়ে মার্বেলে বাঁধানো কবরের পাশে সেগুলো রেখে পিকনিক করেন। 

 

এদিন তাদের পূর্বপুরুষকে স্মরণ করে কান্নার কোনো নিয়ম নেই। বরং মৃত পূর্বপুরষদের স্মরণ করে উৎসবে মেতে ওঠেন তারা। পরিবারের সদস্যরা হাসিমুখে এদিন একে অন্যকে শুভেচ্ছা জানান। অন্যদিকে শিশুরা আনন্দ উল্লাস করে এবং কবরস্থানেই বিভিন্ন খেলায় মেতে ওঠে। 

 

ধারণা করা হয় এই মৃতের সঙ্গে পিকনিকের প্রথা হোমারের এপিকেও বর্ণনা করা হয়েছে। আর পনটিক গ্রিকদের মধ্যে এই প্রথার প্রচলণ এখনো আছে ।

 

অ্যাসোসিয়েশন অব রেপাট্রিয়েটেড পনটিকের সভাপতি স্টেফানোস অফলিডিস এর ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, ‘১৯০০ সালের শুরুতে হাজার হাজার গ্রিক পনটিক প্রাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়নের দেশগুলোতে চলে গেছে। আমরা সবাই সাধারণ মানুষ। কিন্তু আমরা জানি কীভাবে আমাদের পূর্বপুরুষদের সম্মান করতে হয়।’

 

তিনি আরো বলেন, ‘জায়গার অভাবে, তিন বছর অন্তর অন্তর কবর খোঁড়া হয়। কিন্তু এই বিষয়ে মৃতদের সম্মান জানানোর জন্য আমাদের চিন্তা হয়। এটি এড়িয়ে চলতে আমরা এমন একটি জায়গা খুঁজি যেখানে আমরা মৃতদেহ স্থায়ীভাবে কবর দিতে পারব।’

 

এক সময় কবরস্থানের জন্য নতুন জায়গা খোঁজার কাজ শুরু হয়। আর এটিই নবগঠিত অ্যাসোসিয়েশন অব রেপাট্রিয়েটেড পনটিকসের প্রধান কাজে পরিণত হয়।

 

এ সময়ই তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসে রিজানা গ্রামের এক বাসিন্দা। তিনি এ জন্য তার ১৫ একর জমি দান করেন। এ ব্যক্তির ছেলে খুব অল্প বয়সে মারা গিয়েছিল। তার ছেলের স্মরণে তিনি এটি দান করেন।

 

অফলিডিস জানান, যত দিন যাচ্ছে এ প্রথাতে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা তত কমছে।

 

এ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এই দিনে আগে যত আত্মীয়স্বজন আসত এখন আর আসে না। অনেক পনটিকস জার্মানিতে কাজ করেন। তাদের অনেকেই অর্থের অভাবে আসতে পারেন না। তবুও এ সংস্থাটি তাদের আয়োজন অব্যাহত রেখেছে।’ 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৭ মে ২০১৬/মারুফ/রুহুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়