ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

মেহেরপুরে নেপিয়ার ঘাস চাষে বিপ্লব

মহাসিন আলী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:৪৭, ১৬ জানুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মেহেরপুরে নেপিয়ার ঘাস চাষে বিপ্লব

ভ্যানে করে নেপিয়ার ঘাস বিক্রি হচ্ছে

মেহেরপুর প্রতিনিধি : মেহেরপুরে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ঘাসের চাষ হচ্ছে। ঘাস চাষে চাষিরা যেমন লাভবান হচ্ছেন তেমনি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা অল্প পুঁজি নিয়ে ঘাসের ব্যবসা করে ভালভাবে জীবিকা নির্বাহ করছেন।

গো-খাদ্যের সংকটের কারণেই বেড়েছে চাষ করা ঘাসের চাহিদা। আর এ সুযোগটি কাজে লাগিয়ে অনেকে ঘাস চাষকে জীবিকা নির্বাহের পথ হিসাবে বেছে নিয়েছেন। মেহেরপুর জেলায় এখন শ’ শ’ বিঘা জমিতে ঘাসের চাষ হচ্ছে। বিভিন্ন প্রকারের ঘাস থাকলেও নেপিয়ার ঘাস চাষে অধিক লাভ করা যায় বলে চাষিরা জানিয়েছেন। তাই তারা নেপিয়ার ঘাসের চাষ করে থাকেন।

তারা জানান, বিঘা প্রতি ১৫ হাজার টাকা ব্যয় করে বছরে ৩৬ হাজার টাকার ঘাস পাইকারি হিসাবে বিক্রি করা যায়। আর খুচরা বিক্রি করলে ৪৫ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করা সম্ভব।

ঘাসের সবচেয়ে বেশি চাহিদা সৌখিন গবাদি পশু পালনকারি ও খামার মালিকদের কাছে। বর্তমানে খৈল, ভুসি আর বিচালির দাম আকাশ ছোঁয়া। সঙ্গত কারণে তাজা নেপিয়ার ঘাস পশুপালনকারীদের কাছে বেশি পছন্দের। অন্যদিকে গাভী পালনকারীরা বেশি দুধ পাওয়ার আশায় সবুজ ঘাসকেই গোখাদ্য হিসাবে বেছে নিয়েছেন। ঘাসের এই চাহিদাকেও কাজে লাগাচ্ছেন জেলার ঘাস চাষিরা।

চাষিরা ঘাস চাষের জমিতে কেবল ঘাসই নয়, সাথী ফসল হিসাবে অন্য ফসলও ফলাচ্ছেন। ফলে এক জমি থেকেই ভালো লাভ তুলে নিচ্ছেন। এই ঘাসের বাজার এখন জেলার বাইরেও। মেহেরপুরে উৎপাদিত নেপিয়ার ঘাস জেলায় বিক্রির পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোতেও বিক্রির জন্য যাচ্ছে।

এ ঘাস মেহেরপুর শহরের হোটেল বাজার, নতুনপাড়া স্কুল মোড়, কোর্ট মোড়, বড় বাজার, কাথুলী বাসস্ট্যান্ড, ওয়াপদা মোড়, কলেজ মোড় ও পার্কের সামনে, সদর উপজেলার বামনপাড়া, আমঝুপি ও বারাদী বাজার, মুজিবনগর উপজেলার মোনাখালী, দারিয়াপুর, কেদারগঞ্জ, মহাজনপুর ও কোমরপুর বাজারে এবং গাংনী উপজেলা শহরের হাসপাতাল ও বাসস্ট্যান্ড এলাকা, জোড়পুকুরিয়া, বামুন্দি ও গাড়াডোব বাজারসহ জেলার বিভিন্ন হাটে-বাজারে ঘাস বিক্রি হচ্ছে।

মেহেরপুর জেলা শহরের লর্ড মার্কেটের বাসিন্দা মারুফুজ্জামান গোরা এ বছর ২৫ বিঘা জমিতে নেপিয়ার ঘাষের চাষ করেছেন।

ঈদগাপাড়ার ঘাস চাষি আশরাফুল জানান, এ বছর তিনি নিজেই ৭ বিঘা জমিতে নেপিয়ার ঘাস চাষ করেছেন। আর ব্যবসার জন্য আরও ২৫ বিঘা জমির ঘাস অন্য চাষির কাছ থেকে কিনেছেন।

তিনি জানান, প্রতি বিঘা জমিতে মাত্র ৩ হাজার টাকা খরচ করে ঘাস রোপণ করে প্রথম ৩ মাস পর থেকে ঘাস কাটা যায়। এরপর প্রতি ২ মাস অন্তর বছরে ৬ বার ওই জমি থেকে ঘাস সংগ্রহ করা যায়। প্রতিবার মাত্র ২ হাজার টাকার সার-পানি দিলে ৬ হাজার টাকার ঘাস বিক্রির জন্য বাজারে নেওয়া যায়।

মেহেরপুর শহরের উপকণ্ঠ দিঘীরপাড়ার ঘাস ব্যবসায়ি রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘৪/৫ বছর ধরে ঘাসের ব্যবসা করছি। দিনে দিনে মেহেরপুরে ঘাসের চাষ বেড়েই চলেছে। ঘাসের ব্যবসাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। মেহেরপুর ওয়াপদাপাড়া, ময়ামারি ও সিঙের মাঠসহ জেলার প্রায় প্রতিটি গ্রাম-গঞ্জের মাঠে নেপিয়ার ঘাস চাষ হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘শহরতলী এলাকার খেত থেকে ৪ টাকা আঁটি দরে ঘাস কিনে এনে বিক্রির জন্য শহরে বসি। ৫টাকা আটি দরে ওই ঘাস বিক্রি করি। প্রতিদিন কমপক্ষে ২০০ আঁটি ঘাস বিক্রি করি।’

ওয়াপদাপাড়ার ঘাস ব্যবসায়ি মুক্তি বলেন, ‘অন্যান্য ব্যবসায় পুঁজি বেশি লাগে। শারিরিক পরিশ্রমও করতে হয় অনেক বেশি। সেই তুলনায় ঘাসের ব্যবসায় কম পুঁজিতে ও কম পরিশ্রমে বেশি লাভ করা যায়। তাই ঘাসের ব্যবসা শুরু করেছি। প্রতিদিন ২০০ থেকে ২৫০ আঁটি নেপিয়ার ঘাস বিক্রি করছি।

 

 

 

রাইজিংবিডি/মেহেরপুর/১৬ জানুয়ারি ২০১৭/মহাসীন আলী/টিপু/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়