ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

মেয়েটার কারণে ছেলেটা রিকশা চালায়

রণজিৎ সরকার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:০৫, ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মেয়েটার কারণে ছেলেটা রিকশা চালায়

অলংকরণ : অপূর্ব খন্দকার

রণজিৎ সরকার : আকাশে মেঘ করেছে। বৃষ্টি হতে পারে। বৃষ্টিতে ভেজার ভয়ে পার্ক থেকে বের হলাম। আমি আর তিতি দাঁড়িয়ে আছি। রিকশার জন্য। তিতি আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘আজাদ, আজ মনে হয় বৃষ্টিতে ভিজতে হবে।’

বললাম, তিতি, মেঘ যত গর্জে, তত বর্ষে না। তা তো জানো?’
‘হ্যাঁ, তা জানি।’
‘তাহলে চুপ থাকো।’

এর মধ্যে একটা রিকশা দেখে ডাক দিলাম। একটা ছেলে রিকশা নিয়ে আমাদের কাছে এল। বললাম, নিউ বাসস্ট্যান্ডে যাবে?
রিকশাচালক ছেলেটা বলল, ‘একা, নাকি দুজন?’

ছেলেটার প্রশ্ন শুনে ভাবলাম, ভাড়া বেশি নেওয়ার জন্য এমন প্রশ্ন করছে হয়তো। বললাম, দুজন হলে তোমার সমস্যা কী?

রিকশার হাতল ধরে ছেলেটা বলল, ‘পুরুষ মানুষ দুজন হলে সমস্যা নেই। আমার রিকশায় মেয়েদের খুব কম উঠায়।’

মেয়েদের কথা শুনে তিতি সঙ্গে সঙ্গে বলল, ‘মেয়েদের কম উঠায় কেন? কারণ কী বলো তো?’
‘আপা, আমার সমস্যা হয়।’
‘কী সমস্যা হয়? বলো তো?’

রিকশাচালক ছেলেটা আমাদের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘আপনাদের দেখে অনেক ভালো লাগছে। আবার খারাপও লাগছে আমার।’
তিতি বলল, ‘কারণটা বলো?

রিকশাচালক ছেলেটা গামছা দিয়ে মুখ মুছে বলল, ‘আমার এই কথা কাউকে বলতে চাই না। বললে বেশি খারাপ লাগে আমার। কষ্ট পাই আমি। বুকের ভেতর কষ্টগুলো নাড়া দিয়ে উঠে। আমি ঠিক থাকতে পারি না।’

ছেলেটার কথা শুনে বুঝতে পারলাম, এই বয়সে কী হতে পারে। নিশ্চিত প্রেমঘটিত কোনো বিষয় হবে। আগ্রহ নিয়ে বললাম, আমাদের রিকশায় উঠাও। রিকশায় বসে তোমার কথাগুলো শোনা যাবে।
ছেলেটা রিকশার সিট গামছা দিয়ে পরিষ্কার করে বলল, ‘উঠেন।’

আমি আর তিতি রিকশায় উঠে বসলাম। রিকশা সামনের দিকে এগুতে লাগল। তিতি রিকশাচালক ছেলেটাকে উদ্দেশ্য করে বলল, ‘ভাই, তোমার রিকশাতে মেয়েদের ওঠাতে চাও না কেন? কারণটা এখন বলো।’

ছেলেটি পেছন দিকে তাকিয়ে বলল, ‘আপা, আমি একজনকে ভালোবাসতাম। সেও আমাকে ভালোবাসত। আমাদের ভালোবাসার কথা ধীরে ধীরে ওর পরিবারের অনেকেই জেনে যায়। তারপর নীলাকে বিয়ে দিয়ে দেয়। আমি চেষ্টার করেও ফেরাতে পারিনি। সামনে আমার এসএসসি পরীক্ষা ছিল, আমি পরীক্ষা না দিয়ে গ্রাম থেকে চলে আসি ঢাকায়। কাউকে না বলে। আমার এলাকায় রহিম ভাইয়ের কাছে। রহিম ভাই রিকশা চালান। আমিও এসে রিকশাচালাতে শুরু করলাম।

কিছুদিন চালানোর পর আবার গ্রামের ফিরে গেলাম। কিন্তু আমার বাবা বলেন, ‘পরীক্ষা বাদ দিয়ে তুই চলে গিয়েছিস, তোকে আর বাড়িতে যেন না দেখি। বাড়ি থেকে বের হয়ে যা।

আমি রাগ করে আবার বাড়ি থেকে চলে আসি। এসে রিকশা চালাতে থাকি। তাই রিকশায় মেয়েদের ওঠালে নীলার কথা খুব মনে হয়। আর সেজন্য আমি মেয়েদের রিকশায় ওঠাতে চাই না।’

ছেলেটার কথা আমি আর খুব মনোযোগ দিয়ে শুনলাম। ভাবলাম, হায় রে, ভালোবাসা। ছেলেটার দিকে ভালো করে তাকিয়ে দেখি তার চোখের পানি ঝরছে। গামছা দিয়ে পানি মুছছে ছেলেটা। আমি অবাক হলাম।

তিতিকে কিছু না বলে ছেলেটার দিকে তাকাতে ইশারা করলাম। আমি কিছু বললাম না, কারণ দেখি তিতি কিছু বলে কী না। তিতি ছেলেটার দিকে তাকাল। তাকানোর সঙ্গে সঙ্গে বলল, ‘এই ছেলে রিকশা থামাও।’
বললাম, রিকশা থামাতে বলছ কেন?

তিতি বলল, ‘ছেলেটার অবস্থা দেখছ না। যদি কোনো দুর্ঘটনা হয়! তার চেয়ে রিকশা থামাক। তারপর ওর কাছে থেকে আমার আরো কিছু জানার আছে।’

আমি মনে মনে ভাবলাম, যাক আমার মনের কথা তিতি বলে দিয়েছে। ছেলেটার কাছে থেকে আরো কিছু জানার আছে।

ছেলেটা রিকশা থামাল। টিপটিপ বৃষ্টি পড়তে শুরু করল। ছেলেটাকে নিয়ে পাশের একটা হোটেলে ঢুকলাম। ছেলেটাকে এমনভাবে বসালাম যেন সে বসে তার রিকশা দেখতে পারে। আমরা সবজি রুটি অর্ডার দিলাম। তারপর তিতি বলল, ‘এবার তোমার প্রেমের কথা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বলো।’
ছেলেটা ধীরে ধীরে বলতে লাগল তার প্রেমকাহিনি। শুনতে লাগলাম আমার।


 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫/রণজিৎ/সনি

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়