ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

মেয়েটির গোপন কথা

সনি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:২২, ২৮ জুলাই ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মেয়েটির গোপন কথা

রণজিৎ সরকার : আমি আর তিতি বসে আছি। ক্যাম্পাসের দক্ষিণ পাশে। আমগাছের শেকড়ের চার পাশে শানবাঁধানো জায়গায়। গল্প করছি। বিভিন্ন রকমের গল্প। আমাদের চার পাশে অনেকে জুটি বসে আছে। তারাও গল্প করছে।

 

তিতি আমার পাশ থেকে উঠে দাঁড়াল। আমার সামনে এসে তর্জনী নখটার মাঝে বৃদ্ধা আঙ্গুল রেখে বলল, ‘রশিদ, এখান থেকে উঠতে হবে।’
আমি বললাম, কেন?
তিতি আমার ডান হাতটা ধরল। তারপর বলল, ‘এখানে অনেক সময় হলো বসে আছি। চলো, একটু হেঁটে আসি।’

তিতির বিয়ষটা বুঝতে পারলাম আমি। মুচকি হাসি দিয়ে বললাম, খুব কী জরুরি?
আমার হাতটা জোরে টান দিয়ে তিতি বলল, ‘হ্যাঁ, জরুরি। চলো।’
আমি উঠে দাঁড়াল। বাঁ হাত দিয়ে প্যান্টের পেছনে নাড়া দিলাম। ময়লা পরিষ্কার করার জন্য। তিতি তার ডান হাত আমার বাঁ হাতে রাখল। তারপর হাত ধরে আমরা দুজন হাঁটতে লাগলাম।

তিতি বাঁ হাতটা তার কপালে রেখে বলল, ‘রশিদ, তোমাকে একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা বলব। বলব বলব করে অনেক কথার মাঝে সে কথা ভুলে গেছি।’
কী কথা তিতি? বলো।
‘কথাটা বলতে চাই কিন্তু, ইচ্ছাও করছে না আবার।’
কেন? আমার অপরাধ কী?
‘অপরাধ তো অবশ্যই। কারণ তুমিও তো তাদের দলের লোক।’
কী বলতে চাও তুমি? যা বলবে তা স্পষ্ট বলে ফেল। আমার কোনো সমস্যা নেই।
‘ঘটনাটা তো তোমার জানার কথা।’

 

পৃথিবীতে তো প্রতি মুহূর্তে কত ঘটনা ঘটছে। সব ঘটনা কী জানা সম্ভব? তুমি বলো?
‘না, সব সম্ভব না। কিন্তু তুমি যেহেতু রাজনীতি কর। এ ঘটনা অবশ্যই তোমার জানা উচিত। আমার বিশ্বাস এ ঘটনা তুমি জানো।’
ঘটনা কী সেটা বলো।
‘রাগ করবে না তুমি?’  
না। রাগ করব না। তুমি বলো।
‘তোমার কী বৃষ্টি মেয়েটার কথা মনে আছে?’
কোন বৃষ্টির কথা বলছ তুমি? আমাদের ক্যাম্পাসের কেউ?
‘না, ক্যাম্পাসের কেউ না। তবে মনে করে দেখতো, বৃষ্টি নামের কোনো মেয়ের জীবনের ঘটনা জানো কী না?’

 

আমি চিন্তায় পড়ে গেলাম। মাথায় ডান হাতটা দিয়ে চুল নাড়তে নাড়তে বললাম, না তো বৃষ্টি নামে কোনো মেয়েকে মনে পড়ছে না আমার।
‘তুমি কী রাজনীতি করো। তোমার দলের খোঁজখবর রাখ না।’
আসল ঘটনা কী। সেটা আমাকে খুলে বলো।
‘মেয়েটির পুরো নাম বলছি। তারপরও ঘটনাটা মনে করতে পার কী না।’
আচ্ছা। মেয়েটির পুরো নামটা বলো?
‘মেয়েটির নাম হলো, ফাতেমা তুজ জোহরা বৃষ্টি।’
আচ্ছা, নামটা কোথায় যেন দেখলাম। নাকি কার মুখে শুনলাম।’
‘তুমি রাজনীতি করো। দলের কর্মীদের খোঁজখবর একে বারেই রাখ না।’
বিষয়টা খুলে বলো তো। খুলে না বললে আমি আর এক পাও এখান থেকে নড়ব না।
তিতি জোরে হাত টান দিয়ে বলল, ‘বলছি, তোমাকে চলো হাঁটতে হাঁটতে বলছি।’
আচ্ছা, বলো।

 

‘শোনো তাহলে, ‘মেয়েটি অনাগত সন্তানের স্বীকৃতির জন্য কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ এবং আওয়ামী লীগের অনেক প্রভাবশালী নেতার কাছেই গিয়েছিলেন কাফরুল থানা ছাত্রলীগ নেত্রী ফাতেমা তুজ জোহরা বৃষ্টি। কিন্তু বৃষ্টির চোখের পানি কারো মনই গলাতে পারেনি। সবাই বলেছেন, ‘দেখব’ ‘দেখছি’ বলে সান্ত্বনার বাণী শুনিয়েছেন বৃষ্টিকে। কোনো কাজ হয়নি। অবশেষে অপমান সইতে না পেরে ১৯ জুন ঢাকার শেওড়াপাড়ার ভাড়া বাসায় ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছে সে।’
এ ঘটনা তুমি কোথা থেকে জানতে পারলে?

 

‘খবর কী আর বসে থাকে? পত্রিকায় পড়ে জানতে পেরেছি। তোমাকে বলব বলব করে বলা হয়নি আমার। সাহস পাইনি, আজ সুযোগ হলো বলে ফেললাম।’
ও তাই!
‘হ্যাঁ, তুমি কি জানো মেয়েটি আত্মহত্যা করার আগে তার ফেসবুকে স্ট্যাস্টাস দিয়েছিল?’
ফেসবুকে কি লিখেছিল? তোমার মনে আছে না কী?

 

হ্যাঁ, মনে আছে। তোমাকে বলছি। ‘‘ আমারে তোর প্রয়োজন আজ হোক বা কাল হইবই, হারামির বাচ্ছা ওইদিন তোরে আমি ঠিকই মাফ কইরা দিমু, কারও ভালো সময় চিরদিন থাকে না। ওহে চিরন্তন কুত্তা তোরও থাকব না, তুই বন্ধু নামের কলঙ্ক, শালা আবাল কোথাকার।’’
মনের যন্ত্রণার কথা লিখে গেছে।

 

‘হ্যাঁ, রশিদ তোমাকে নিয়ে তো আমার তো ভয় হচ্ছে।’
 কেন?
‘আমার অবস্থা তো বৃষ্টির মতো হবে না রশিদ?’
কি বলো। পাগলী কোথাকার। তুমি নিশ্চিত থাকো। তোমার অবস্থা বৃষ্টির মতো হবে না। তোমাকে বিয়ে করব আমি এটা নিশ্চত থাক।
তিতি মুচকি হাসি দিয়ে বলল, ‘তোমার কথা শুনে খুশি হলাম। কিন্তু তুমি তো রাজনীতিবিদ, তোমাদের কথার কোনো বিশ্বাস নেই। তুমি সত্যি বলছ তো।’

 

হ্যাঁ, সত্যি বলছি, সময় সব বলে দেবে। তুমি নিশ্চতায় থাক।
তিতি আমার চোখের দিতে তাকিয়ে বলল, ‘আমি কিছু কথা বলি, তুমি শোনো। রাজনীতির নামে ধান্দাবাজি না করে দেশের-দশের জন্য রাজনীতি কর। তবেই আমাদের সোনার দেশটা সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। আমরা পারব এগিয়ে নিতে দেশটাকে। মোদি বলেছেন তরুণরাই দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।’
তাই!
‘সত্যি বলছি, দেশের জন্য রাজনীতি করো।’
দেশ ও দশের সেবার জন্যই তো রাজনীতিতে এসেছি।
‘কিছু নেতা রাজনীতির ক্ষমতা দিয়ে কত নোংরামী করে। সেগুলো বন্ধ করতে হবে। নোংরামীর বলি হলো বৃষ্টি।’
ঠিক বলেছ। সবাই তো সমান না। এগুলো বন্ধ করতে হবে।
‘খুব দ্রুত করো।’
আমরা টয়লেটের কাছে এলাম। তিতি মহিলা টয়লেটে ঢুকল। পুরুষ টয়লেটে ঢুকলাম আমি।

 

 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৮ জুলাই ২০১৫/সনি

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়