ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

মোমিন বান্দা সর্বদাই আল্লাহর এবাদত করবে

আসিফ খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:৩৬, ২৩ জুন ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মোমিন বান্দা সর্বদাই আল্লাহর এবাদত করবে

আসিফ খান : মাহে রমজানের আজ ২৭তম দিন। এরপর আর দুই বা তিন দিন- তারপর বিদায় নিবে রমজান মাস। আমরা বিদায় দিচ্ছি রহমত, মাগফিরাত ও মুক্তি লাভের মোবারক মাসটিকে। সিয়াম পালনের পাশাপাশি আমরা অনেকে কোরআন তিলাওয়াত, তাকওয়ার অনুশীলন, ধৈর্য, সংযমের চর্চা করেছি।

মাহে রমজান একটি ঈমানী পাঠশালা, সারা বছরের পাথেয় উপার্জন, সারা জীবনের মাকসাদকে শানিত করার জন্যে এটি একটি রুহানি ময়দান। কিন্তু আমরা কি প্রকৃত তাকওয়া অর্জন করতে পেরেছি? আমরা কি রহমত, মাগফিরাত ও মুক্তি লাভের উপযোগী আমল করার চেষ্টা করেছি? যে ব্যক্তি মাহে রমজানে নিজেকে সংশোধন করতে পারল না সে আর কখন নিজের জীবন গঠন করবে ?

দেখা গেছে রমজান মাস শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা অনেকে নানা অনিয়ম, শরীয়ত পরিপন্থী কাজে মগ্ন হয়ে পড়ছি। রমজানে আল্লাহর সাথে যে ওয়াদা করেছি তা ভঙ্গ করার অনেক চিত্র সমাজে ফুটে উঠতে দেখা যায়। যেমন- ঈদের দিনেই জামাতে নামাজ আদায় ছেড়ে দেয়া। তারাবির মত সুন্নত নামাজে মসজিদ ভরা মুসল্লি থাকার পর এখন ফরজ নামাজের সময়ই মুসল্লির সংখ্যা খুব কমে যাওয়া। আবার ঈদের দিনেই অনেকে গান-বাদ্য ও সিনেমা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যায়।

তাহলে কি এভাবেই আমরা মাহে রমজানকে বিদায় জানাব ? এত বড় নেয়ামতের এটাই কি শোকর আদায়, এটাই কি আমল কবুল হওয়ার নিদর্শন ? নিশ্চয়ই নয়। বরং এটা আমল কবুল না হওয়ার আলামত। কেননা প্রকৃত রোজাদার ঈদের দিন রোজা ছেড়ে দিয়ে আনন্দিত হবে এবং রোজা পূর্ণ করার তাওফিক পাওয়ার দরুন তার প্রতিপালকের প্রশংসা করবে, কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে। সাথে সাথে এই ভয়ে কাঁদবে যে, না জানি আমার রোজা কবুল হয়নি। আমাদের পূর্বসূরীগণ মাহে রমজানের পর ছয় মাস পর্যন্ত আল্লাহর দরবারে কেঁদে কেঁদে রোজা কবুল হওয়ার দোয়া করতেন।

আমল কবুল হওয়ার আলামত হল, পূর্ববর্তী অবস্থার চেয়ে বর্তমান অবস্থা উন্নত হওয়া। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘মৃত্যু পর্যন্ত তোমার রবের এবাদত কর। (সূরা আল-হিজর:৯৯)। রাসূল (সা.) বলেন, ‘বল বিশ্বাস স্থাপন করলাম আল্লাহর প্রতি, এবং অবিচল থাক।’ (মুসলিম)

যদি আমরা সত্যিকার অর্থে রমজান পেয়ে লাভবান হয়েছি মনে করি, মোত্তাকিদের গুনাবলী অর্জন করে রোজা, তারাবির নামাজ সম্পাদন করে থাকি, তাহলে আল্লাহ তাআলার প্রশংসা করা উচিত। তার শোকর আদায় করা এবং তার কাছে মৃত্যু পর্যন্ত অটল থাকার তাওফিক কামনা করা প্রয়োজন।

সত্যিকার মোমিন বান্দা সর্বদাই আল্লাহর এবাদত করবে। কোন নির্দিষ্ট মাস, জায়গা অথবা জাতির সাথে মিলে আমল করবে না, বরং সর্বদা সে এবাদত করবে। মোমিন বান্দা মনে করবে যিনি রমজানের প্রভু তিনি অন্যান্য সকল মাসেরও প্রভু। তিনি সকল কাল ও স্থানের প্রভু। রমজান শেষ হয়ে গেলেও শাওয়ালের ছয় রোজা, আশুরা, আরাফা, সোমবার, বৃহস্পতিবার ইত্যাদি নফল রোজা রয়েছে।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজানের রোজার পর শাওয়ালের ছয়টি রোজা রাখতেন। আবু আইয়ুব আল আনসারি রা. হতে বর্ণিত: রাসূল (সা.) বলেছেন- ‘যে ব্যক্তি রমজানের রোজা রাখল, অত:পর শাওয়ালে ছয়টি রোজা রাখল, সে যেন (পূর্ণ) এক বছর রোজা রাখল।’ (মুসলিম)

আইয়ুব আল আনসারি(রা.) এ হাদিস বিশ্লেষণ করে বলেছেন, রমজানের রোজার বিনিময়ে দশ মাস এবং শাওয়ালের রোজার বিনিময় দু’ মাস মোট এক বছরের সমপরিমাণ সওয়াব পাবে। কেননা একটি সৎকাজের বিনিময় হচ্ছে দশ নেকি যা কোরআন ও সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত। যে ব্যক্তি শাওয়ালের রোজা রাখবে সে প্রথমে রমজানের কাজা আদায় করে নিবে, যদি তার দায়িত্বে রমজানের কাজা থেকে থাকে। এরপর শাওয়ালের রোজা রাখবে।

তারাবিহ নামাজ শেষ হয়ে গেলেও তাহাজ্জুদ নামাজ বাকি আছে সারা বছর। অতএব নেক আমল সব সময় সব জায়গাতেই করা যায়। নেক আমলের চেষ্টা করতে হবে। অলসতা করা যাবে না। যদি কেউ নফল আদায় করতে না চায়, তাহলে অন্তত ফরজ, ওয়াজিব যেন ছেড়ে না দেই। যেমন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতের সাথে আদায় করা এবং গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে দ্বীনের ওপর অটল থাকার তাওফিক দান করুন। -আমিন।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৩ জুন ২০১৭/আসিফ/এনএ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়