ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

মোশাররফ হত্যাকাণ্ড : ১৮ শিক্ষার্থীর নামে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি

শাহরিয়ার সিফাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:১২, ২৭ মে ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মোশাররফ হত্যাকাণ্ড : ১৮ শিক্ষার্থীর নামে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি

আবু সাদাত খালেক মোশাররফ

নিজস্ব প্রতিবেদক, টাঙ্গাইল : টাঙ্গাইলে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (মাভাবিপ্রবি) ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে সংগঠনের নেতা আবু সাদাত খালেক মোশাররফ নিহতের ঘটনায় ১৮ শিক্ষার্থীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। গত ২৫ মে একটি জাতীয় পত্রিকায় এই বিষয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

 

তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব ড. মোহাম্মদ খাদেমুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও ছাত্রলীগ নেতা নিহতের ঘটনায় গঠিত ১৮২তম রিজেন্ট বোর্ড কর্তৃক এই বিজ্ঞপ্তি দেন। বিজ্ঞপ্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮ শিক্ষার্থীকে গত ১৩ মে ও ৬ মে বিশ্ববিদ্যালয়ে সংগঠিত ঘটনায় আগামী ১৪ জুন রোববার সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়ে কারণ দর্শানোর কথা বলা হয়েছে।

 

বিজ্ঞপ্তিতে বিশ্ববিদ্যায়ের যে ১৮ শিক্ষার্থীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে তারা হলেন- ১. বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী এস এম রবিউল হাসান সাজু (স্টুডেন্ট আইডি- সিএইচ ১২০২৭), ২. ইএসআরএম বিভাগের প্রথম বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী মো. ওমর ফারুক (স্টুডেন্ট আইডি-ইআর ১৪০৪৮), ৩. টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী মো. ওমর ফারুক (স্টুডেন্ট আইডি-টিই ১২০১৬), ৪. ক¤িপউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী আশিকুর রহমান (স্টুডেন্ট আইডি-সিই ১৩০৩৪), ৫. টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী মোহাইমিনুল কাইয়ুম (স্টুডেন্ট আইডি-টিই ১২০৫৩), ৬. ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি বিভাগের প্রথম বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী এম এ আহাদ খান (স্টুডেন্ট আইডি-আইটি ১৪০১৭), ৭. ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি বিভাগের প্রথম বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী বাবু কিশোর দে (স্টুডেন্ট আইডি-আইটি ১৪০১৮), ৮. কম্পিউটার সায়েন্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী মনিরুল ইসলাম (স্টুডেন্ট আইডি- সিই ১১০১৩), ৯. ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের চতুর্থ বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী সাইদুর রহমান (স্টুডেন্ট আইডি-সিপি ১০০৪২), ১০. ফুড টেকনোলজি অ্যান্ড নিউট্রিশনাল সায়েন্স বিভাগের তৃতীয় বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী নিবিড় পাল (স্টুডেন্ট আইডি-এফএন ১২০২১), ১১. ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী ইয়াসিন আরাফাত (স্টুডেন্ট আইডি-আইটি ১৩০৪৯), ১২. পদার্থবিদ্যা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী মো. রাজিব মোল্লা (স্টুডেন্ট আইডি-পিএইচ ১১০২৫), ১৩. এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী মানিক শীল (স্টুডেন্ট আইডি-ইআর ১৩০২৪), ১৪. ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের মাস্টার্স তৃতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থ মো. হাসান আল তোহা (স্টুডেন্ট আইডি-সিপি ০৯০২৫), ১৫. এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের মাস্টার্স তৃতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী জেসন শাহরিয়ার (স্টুডেন্ট আইডি-ইআর ০৯০২৪), ১৬. কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী রোয়েতা ইসলাম বিপা (স্টুডেন্ট আইডি-সিএইচ ১৩০২৪), ১৭. বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী মো. রাশেদুল ইসলাম বাঁধন (স্টুডেন্ট আইডি- বিজি ১১০০৬), ১৮. পদার্থবিদ্যা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী আলী আহমেদ ফয়সাল (স্টুডেন্ট আইডি-পিএইচ ১৩০১৯)।

 

জাতীয় দৈনিকে উল্লেখিত শিক্ষার্থীদের হাজিরা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মোহাম্মদ খাদেমুল ইসলাম মুঠোফোনে রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘অনেক সময় চিঠি পাওয়ার পরও শিক্ষার্থীরা নোটিশ পায়নি বলে দাবি করে। তাই পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিষয়টি প্রকাশ করা হয়েছে।’

 

মোশাররফ নিহতের ঘটনায় তার বাবা শহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে যে ১৪ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেছেন, সেই ১৪ জন পত্রিকায় নাম দেওয়া ১৮ জনের মধ্যে আছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে প্রক্টর খাদেমুল ইসলাম বলেন, ‘তদন্ত কমিটির তদন্তের প্রয়োজনে যাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করেছে, তাদেরকেই চিঠি ও পত্রিকায় নাম দেওয়া হয়েছে। আর মামলার বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দেখছে। তাই মামলায় কারা আছে সেটা তারাই বলতে পারবে।’

 

এ ব্যাপারে টাঙ্গাইল গোয়েন্দা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) গোলাম মাহফীজুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে রাইজিংবিডিকে তিনি বলেন, ‘তদন্তের সার্থে এখনই মামলার তালিকা প্রকাশ করা যাচ্ছে না। তবে শিগগিরইতালিকা কোর্টে পাঠানো হবে। তখন তালিকা প্রকাশ করা হবে।’

 

উল্লেখ্য, গত ১৩ মে বিশ্ববিদ্যালয়ে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগ নামধারী দুই গ্রুপ মোশাররফ ও মনিরুল ইসলাম মনির গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে মনির গ্রুপের লোকজন এ এস কে মোশাররফ ও তার অপর দুই সমর্থক ছাত্রকে কুপিয়ে ও লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে মারাত্মক আহত করে। আহত মোশারফকে প্রথমে টাঙ্গাইল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে সাভারের এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ড. গৌতম ঘোষ তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। নিহত মোশাররফ বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ তত্ত্ব ও পুলিশ বিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্স দ্বিতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী ছিলেন। তার বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার মুক্তগাছা উপজেলার মুজাটি চরপাড়া গ্রামে।

 

এই ঘটনার পরের দিন গত ১৪ মে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ভিসি ও ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ের রিজেন্ড বোর্ডের সদস্য শরীফ ইনামুল কবিরকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অপর সদস্যরা হলেন- প্রফেসর ড. আমির হোসেন খান, প্রফেসর এ কে এম সাইদুল হক চৌধুরী, প্রফেসর হাবিবুর রহমান, প্রক্টর ড. খাদিমুল ইসলাম। এই সভা থেকেই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯ ছাত্রকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।


 

 

রাইজিংবিডি/টাঙ্গাইল/২৭ মে ২০১৫/শাহরিয়ার সিফাত/সাইফুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়