ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

যাও এসএমএস বলো তারে...

শাহিদুল ইসলাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:১৯, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
যাও এসএমএস বলো তারে...

শাহিদুল ইসলাম : কথাশিল্পী শরৎ বাবু আমন্ত্রিত হয়ে একবার এক সাহিত্য সভায় বক্তৃতা দিতে গিয়েছিলেন। বক্তৃতার এক পর্যায়ে শ্রোতাদের উদ্দেশ্য বললেন- আপনারা যারা কবিতা লেখেন তারা একটু দয়া করে হাত তুলবেন কি? দেখা গেল তার ধারণার চেয়ে বেশি লোক হাত তুললেন। শরৎ বাবু তাদের উদ্দেশে বললেন- ‘আপনারা কবিতা লেখা ছেড়ে দিন।’ শুনে তো উপস্থিত সবাই অবাক! বলেন কি? এক শ্রোতা উঠে দাঁড়িয়ে বলল আপনি নিজেও কবিতা লেখেন তো আমাদের নিষেধ করছেন কেন? তখন শরৎচন্দ্র জবাব দেন- ‘আমি লিখতাম এখন আর লিখি না। কারণ যা-ই লিখতে যায় সেটাই দেখি রবীন্দ্রনাথ নামে একজন অনেক আগেই লিখে গেছেন।’

 

প্রিয় পাঠক, ভালোবাসা নিয়ে কিছু লিখতে বসে আমার অবস্থা ঠিক শরৎ বাবুর মতোই। যা-ই লিখতে চাই সেটাই দেখি কেউ না কেউ লিখে গেছেন। তাই নতুন করে আমার আর কিছু লেখার নেই, কিছু বলার নেই। তারপরও কিছু লিখছি। কারণ শরৎচন্দ্রও শেষ পর্যন্ত লেখা চালিয়ে গিয়েছিলেন কি না!

 

যাও এসএমএস বলো তারে...

অাগের দিনে বলা হতো ‘যাও পাখি বলো তারে’ আর এখন বলা হয় ‘যাও এসএমএস বলো তারে’। বদলে যাচ্ছে ভালোবাসার ভাষা ও সংজ্ঞা। বিশ্বায়নের এই যুগে ভালোবাসায়ও চলছে বিশ্বায়ন। কোটামুক্ত বিশ্বের মতো এখন যে কেউ ঢুকে যেতে পারে যে কারো মনে। তবে কোটামুক্ত বিশ্বে পণ্য বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ধনী দেশগুলো যেমন স্বল্পোন্নত দেশের তুলনায় বেশি সুবিধা ভোগ করে, সেই একই রকমভাবে ভালোবাসার ক্ষেত্রে ধনীর দুলাল-দুলালিরা ক্লিয়ারলি এহেড ( একধাপ এগিয়ে)।

 

ভালোবাসায় বিবর্তনবাদ...

পবিত্র ভালোবাসা বলতে ‘একজন শুধু অন্য একজনের জন্য’ বলে যে বিশুদ্ধ ভাবনা আছে, তার অস্তিত্ব কম-বেশি পাওয়া যায়। তবে আধুনিকতার দোহাই দিয়ে এই সময়ে অনেক ছেল তিন-চারজন গার্লফ্রেন্ডে বিশ্বাসী, তেমনি একটি মেয়ের চার-পাঁচজন ফ্রেন্ড। বলে রাখা ভালো, ডারউইনের মতবাদের মতো ভালোবাসায়ও এসেছে বিবর্তনবাদ। এখন ভালোবাসার মানুষকে কেউ প্রেমিক বা প্রেমিকা বলে না। বিবর্তনের চোটে প্রেমিক হয়েছে বয়ফ্রেন্ড আর প্রেমিকা হয়েছে গার্লফ্রেন্ড। লাইলি-মজনু ,  রোমিও-জুলিয়েটের পর ধাপে ধাপে ‘আশিক বানায়া আপনে’ বা ‘তুমহে আপনা বানায় কা জুনুন’ টাইপের ভালোবাসা। ভালোবাসার ব্যাপারিনীদের কাছে ভালোবাসার কাঙালরা আজ জিম্মি গুয়ানতানামো বে কারাগারের বন্দিদের মতো। এখন যতভাবে ভালোবাসার শুরুটা হয় তার মধ্যে একটি এ রকম- ফেইসবুকে পরিচয় তারপর ফুসকা বা ফাস্ট ফুড, কখনো সখনো লংড্রাইভ। প্রাথমিকভাবে খরচটা মজনুরাই বহন করে। এরপর শুধুই সুখ স্বপ্ন। প্রেমের রঙিনতম বন্দরগুলোয় নাউ ভাসানো। এভাবে কিছুদিন চলার পর হঠাৎ করে ভালোবাসায় ছেদ পড়ে। মেয়েটি কান্নাজাড়িত মধুর কণ্টে বলে দেয়, দেখ আমার বাড়িতে না জানাজানি হয়ে গেছে! আমার পক্ষে আর সম্ভব না। অপরদিকে ছেলেটির অবস্থা তখন, `খাইছে ধরা আকবরে`। টাকা থাকলে দেবদাসী খাওন ( প্যাক মারা) না থাকলে পোটলা।

 

কথায় আছে ব্যর্থ প্রেমিকেরা সবাই কবি হয়। বাংলাদেশে তাই দুই `ক` কবি ও কাকের সংখ্যা এত বেশি। শুধু বাংলাদেশের কথা বলি কেন? পৃথিবীর সবখানে একই অবস্থা। ইংরেজ কবি শেলি তার বিখ্যাত সব কবিতাই লিখেছিলেন তার প্রথম প্রেমিকা ও স্ত্রী হেরিয়েট ওয়েস্টবুকের মৃত্যুর পর।

 

দেবদাসের একাল সেকাল...

ক্রিস গেইলের স্ট্রাইকিং রেটের গতিতে ভালোবাসায় চলছে বিবর্তনবাদ। আগের দিনের দেবদাসরা মরার জন্য বেছে নিত পার্বতী তথা প্রেমিকার বাড়ি কিন্তু এখনকার দেবদাসরা মরতে চায় না, করতে চায় একাধিক প্রেম। আর ভালোবাসার সংজ্ঞা নিয়ে যে বিতর্ক যুগ যুগ ধরে বিদ্যমান তার সুরাহা আজো হয়নি। মান্না দে গেয়ে ওঠেন, ‘হৃদয় আছে যার সেইতো ভালোবাসে, প্রতিটি মানুষের জীবনে প্রেম আসে।’ অথচ সুবীর নন্দী বলেন, ‘পৃথিবীতে প্রেম বলে কিছু নেই।’ কবিগুরু রবী ঠাকুর স্বয়ং প্রশ্ন তোলেন  ‘সখি ভালোবাসা কারে কয়? সেকি কেবলই যাতনাময়?’

 

ভালোবাসার সংজ্ঞা নিয়ে যুগে-যুগে চলমান যে বিতর্ক তার সমাধান কখনো হবে বলে মনে হয় না। তো কি আর করা? ভালোবাসা থাক, ভালোবাসাবাসি থাক। ভালোবাসার সাতরঙে রঙিন হোক প্রেমিকের হৃদয়, প্রেমিকার জীবন-মন।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬/রাসেল পারভেজ

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়