ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

যে দিনটিতে সূচিত হয়েছিল সত্য-মিথ্যার পার্থক্য

শাহ মতিন টিপু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:৩৫, ৪ জুলাই ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
যে দিনটিতে সূচিত হয়েছিল সত্য-মিথ্যার পার্থক্য

শাহ মতিন টিপু : আজ রমজানের ১৭তম দিন। আজকের দিনটি একটি ঐতিহাসিক দিন। হিজরি দ্বিতীয় বর্ষে রমজান মাসের এই দিনে বদর প্রান্তরে সম্মুখযুদ্ধে মহান রাব্বুল আলামিন সরাসরি সাহায্য দানের মাধ্যমে মুসলমানদের বিজয়ী করেন। এদিন ইসলামের ইতিহাসে প্রথম যুদ্ধ সংঘটিত হয়। বদর প্রান্তরে সংঘটিত এই সম্মুখ সমর ইতিহাসে ‘বদরের যুদ্ধ’ নামে পরিচিত। তাই এ দিবসকে ইয়াওমুল ফুরকান বা সত্য-মিথ্যার পার্থক্যের দিন বলা হয়। সত্যপথের অনুসারী অল্পসংখ্যক রোজাদার মুসলমানের বিশাল অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত মিথ্যার অনুসারী কাফের মুশরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়লাভ করার মধ্য দিয়ে সত্য-মিথ্যার পার্থক্য সূচিত হয়ে যায়।

 

এ বছর থেকেই একমাস রোজা রাখবার বিধান ফরজ হয়। এর মধ্যেই মক্কার অবিশ্বাসীরা হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর ওপর বদরের যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়। তখন রোজা রাখা অবস্থায় রাসুল (সা.) তাঁর ৩১৩ জন সাহাবি নিয়ে বদরের প্রান্তরে হাজির হন। বিপরীতে অবিশ্বাসীদের সরদার আবু জাহেল ১ হাজার যোদ্ধা নিয়ে সেখানে উপস্থিত হয়। ওই রাতেই আল্লাহ পাক রহমতের বৃষ্টি বর্ষণ করেন। বৃষ্টি কাফেরদের ওপর মুষলধারায় বর্ষিত হয়। যার কারণে তাদের অগ্রগমনে বাধার সৃষ্টি হয়।

 

পক্ষান্তরে মুসলমানদের ওপর বর্ষিত হয় হালকা বৃষ্টি আল্লাহর রহমত স্বরূপ। ফলে মুসলমানগণ পাক-পবিত্র হওয়ার সুযোগ পেলেন, তাদের পদতলের বালুকা শক্ত হলো এবং পা রাখার মতো অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হলো। তাদের মনও মজবুত হলো। রাসুল (সা.) তাঁর সাহাবিদের নিয়ে অবিশ্বাসীদের আগেই বদরের তালাব বা জলাশয়ের কাছে পৌঁছে গেলেন এবং জলাশয়ের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিলেন (আর রাহিকুল মাখতুম, সিরাতে ইবনে হিশাম)।

 

মহান রাব্বুল আলামিন সুরা আল ইমরানে ঘোষণা করেন- ‘আল্লাহ তায়ালা বদর (যুদ্ধে)-এর ক্ষেত্রে এমন অবস্থায় তোমাদের সাহায্য করেছিলেন, যখন তোমরা সম্পূর্ণ সহায়-সম্বলহীন ছিলে। সুতরাং তোমরা অন্তরে (কবল) আল্লাহর ভয়কেই জায়গা দিও, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞ হতে পার।’ (সুরা আল ইমরান : আয়াত-১২৩)

 

এই আয়াতে হক আর বাতিলের ওই বিশাল যুদ্ধক্ষেত্রের প্রতি ইঙ্গিত রয়েছে যে, ঐতিহাসিক যুদ্ধে মাত্র ৩১৩ জন অসহায় দুর্বল অস্ত্রহীন সাহাবি মহানবী হজরত মুহম্মদ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নেতৃত্বে সর্বপ্রথম বিশ্ববুকে কাফেরদের এক মহাভীতিকর অবস্থায় নিক্ষেপ করেছিলেন।

 

মদিনা থেকে ৬০ মাইল পূর্ব-দক্ষিণে অবস্থিত একটি বাণিজ্যকেন্দ্রের নাম ছিলো বদর। তখনকার দিনে এখানে পানির প্রাচুর্য থাকায় স্থানটির গুরুত্ব ছিল অত্যাধিক। এখানের এই যুদ্ধ ছিল মূলত ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিজয়।

 

এদিকে মুসলমানদের বিজয়ের পর রাসুল (সা.) মদিনার লোকদের কাছে এই সুখবর জানানোর জন্য আবদুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা, জায়েদ বিন হারেছাকে (রা.) দূত করে পাঠালেন। মদিনার মুসলমানগণ বিজয়ের খবর শুনে আনন্দে মেতে ওঠেন। আল্লাহু আকবার ধ্বনিতে মদিনার আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত হয়ে ওঠে।

 

সেদিন বদর প্রান্তরের যুদ্ধের ইতিহাস ছিল এ রকম- স্বল্পসংখ্যক মুসলমানদের দলটিকে অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সুসজ্জিত আরবের যোদ্ধাদের মুখোমুখি এনে দাঁড় করিয়ে দেয়। আবু জাহেলের নেতৃত্বাধীন এই বিশাল বাহিনী ছিল লৌহবর্ম পরিহিত। আর যেহেতু মুসলমানরা যুদ্ধের প্রস্তুতি ছাড়া বেরিয়েছিলেন, তাই তারা ছিলেন একেবারেই বলতে গেলে খালি হাতে।

 

আরবদের তৎকালীন সমরনীতির আলোকে ব্যাপকভাবে যুদ্ধ শুরুর আগে প্রথমে এককভাবে তিনজনের সঙ্গে মোকাবিলা হয়। একক যুদ্ধে হজরত হামযা (রা.) কাফের নেতা শাইবাহকে এবং হজরত আলী (রা.) ওয়ালিদকে হত্যা করতে সক্ষম হন। একক তৃতীয় যুদ্ধে হজরত ওবায়দা ইবনুল হারিস (রা.) তার প্রতিপক্ষ উতবা ইবনে রাবিয়্যাহকে চূড়ান্ত আক্রমণ করেন। কিন্তু এতে তিনি নিজেও আহত হন। তাকে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর সামনে রাখা হলো। কিছুক্ষণের মধ্যে তিনি শাহাদত বরণ করলেন।

 

এর পরপরই উভয় পক্ষের ভেতর শুরু হয়ে যায় তীব্র লড়াই। যারা নিমিষেই মুসলমানদের গিলে ফেলার নেশা নিয়ে এসেছিল, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর তাদেরই আর কোনো আশ্রয়স্থল ছিল না।

 

দেখতে দেখতে এই দুর্বল বাহিনীর হাতে কাফেরদের নামিদামি, বীর লড়াকু ৭০ জন যুদ্ধবাজ নেতা নিহত হয়। স্বয়ং আরবদের নেতা আবু জাহেল দুই মুসলিম বালকের হাতে নির্মমভাবে নিহত হয়। আরো ৭০ জন কাফের নেতা মুসলমানদের হাতে বন্দি হয়। এভাবে মক্কার কাফেরদের অহংকার মাটির সঙ্গে মিশে যায়।

 

সুরা আল ইমরানে আল্লাহ তায়ালা মুসলমানদের বদরের এই বিশাল বিজয়ের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘আল্লাহ তায়ালা সংখ্যায় কম হওয়া সত্ত্বেও বদর প্রান্তরে তোমাদের বিজয় ও সফলতা দিয়েছেন। সুতরাং একইভাবে ওইসব ক্ষেত্রেও তোমাদের সাহায্য করতে সক্ষম, যখন তোমরা সততা ও ইখলাস সহকারে তাঁর দীনকে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে এগিয়ে যাবে।’

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৫ জুলাই ২০১৫/টিপু/রাসেল পারভেজ

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়