ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

‘মৃত্যুসংবাদ লিখতে শিখিয়েছেন জলি ম্যাডামই’

তানজিমুল হক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:০৮, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘মৃত্যুসংবাদ লিখতে শিখিয়েছেন জলি ম্যাডামই’

তানজিমুল হক, রাজশাহী : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক আকতার জাহান জলির আত্মহত্যার ঘটনায় বিভাগের প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা প্রিয় শিক্ষককে নিয়ে স্মৃতিচারণ ও শোক প্রকাশ করেছেন বিভিন্নভাবে।

 

 

কেউ কেউ বলছেন, বিশাল মন আর ব্যক্তিত্বের অধিকারী প্রিয় এই মানুষ তাদের কীভাবে ছেড়ে যেতে পারেন।

  

মতিহার ছাপিয়ে এই বিষাদ সরব হয়ে উঠেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে। শিক্ষার্থীরা দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ফেসবুকের ওয়ালে প্রিয় শিক্ষকের মৃত্যু নিয়ে স্ট্যাটাস দিচ্ছেন।

 

এসব লেখায় বলা হয়েছে, তারা শোকাহত, মর্মাহত, নির্বাক, তাদের হৃদয় যেন বেদনায় লীন।

 

প্রিয় শিক্ষককে হারানোর শোকে ফেসবুকের প্রোফাইল পিকচার কালো করে দিয়েছেন অনেকেই।

 

বাংলানিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের রাবি প্রতিনিধি রফিকুল ইসলাম ফেসবুকে লিখেছেন, ‘... ম্যাম আমাদের রিপোর্টিং পড়াতেন। শিখিয়েছেন কীভাবে কারো মৃত্যু সংবাদ লিখতে হয়। আজ তারই মৃত্যু নিয়ে লিখতে হচ্ছে। লিখতে হচ্ছে তার কক্ষে পাওয়া সুইসাইড নোট নিয়ে।...’

 

আরেকটি স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন, ‘লাশকাটা ঘরে ফেলে এসেছি আপনার দেহ। কিন্তু ফেলতে পারিনি আপনার স্মৃতি। ... মায়ের অকাল মৃত্যুতে সন্তানদের অবস্থা কেমন হয়?’

 

বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী এনটিভির সিনিয়র রিপোর্টার আরাফাত সিদ্দিকী ফেসবুকে লিখেছেন, “যার লেখা সব সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্ল্যাকবোর্ডে দেখেছি, ইনকোর্স পরীক্ষার খাতাতে আমার ভুলগুলোর পাশে যিনি সুন্দর করে মন্তব্য লিখতেন, যা দেখে আমি মুগ্ধ হতাম, সেই হাতের লেখা দেখলাম আজ অনেকদিন পর, একটি ‘সুইসাইড নোটে’। ... আর তিনি এখন আছেন রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে।’

 

বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী যমুনা টেলিভিশনের বগুড়া ব্যুরো প্রধান মেহেরুল সুজন তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘... কয়েক মাস আগেও আমাকে ফোন করে আমাদের বন্ধু ওয়াহিদা সিফাতের হত্যা মামলার খোঁজখবর নিলেন ম্যাডাম। আর এখন তার অপমৃত্যুর খবর নিয়ে ছুটে বেড়াচ্ছেন আমার রাজশাহীর সহকর্মীরা। ভাবতেই কেমন যেন শূন্যতা অনুভব করছি চারপাশে।’

 

প্রথম আলোর রাজশাহী প্রতিনিধি মাহবুব আলম লিখেছেন, ‘আপনি তো অনেক যত্ন করেই রিপোর্টিং শেখাতেন ম্যাম; তারপরও কেন আজ আপনার রিপোর্ট লিখতে গিয়ে হাতটা কাঁপছিল, কেন সবকিছু গুলিয়ে যাচ্ছিল? রিপোর্টিং শিখিয়ে কী আজ সবচেয়ে বড় পরীক্ষাটা নিলেন আপনি? ...।’

 

বিভাগের শিক্ষার্থী বহ্নি মাহবুবা লিখেছেন, ‘... ভাইভা বোর্ডে কোনো একটা প্রসঙ্গে বলেছিলেন, যে অন্যায় করে তাকে কী সাপোর্ট দেওয়া উচিত? এই যে আপনি অসময়ে চলে গেলেন এইটা অন্যায় না? খুব অন্যায়। মানতে পারছি না। গলার কাছটায় দলা পাকিয়ে উঠছে।’

 

শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি রাজশাহীতে কর্মরত বিভিন্ন গণমাধ্যমের সংবাদকর্মীরাও অধ্যাপক আকতার জাহানকে নিয়ে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তারা কেউই আকতার জাহানের এমন চলে যাওয়া মানতে পারছেন না। তারা বলছেন, এমন ঘটনা শুধু অনাকাঙ্খিত নয়; রীতিমতো বিস্ময়ের।

 

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জুবেরী ভবনের ৩০৩ নম্বর কক্ষে থাকতেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আকতার জাহান জলি। শুক্রবার বিকেল ৫টার দিকে কক্ষের দরজা ভেঙে থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

 

কক্ষটির দরজা ভেতর থেকে লাগানো ছিল। ওই কক্ষে আকতার জাহানের লেখা একটি সুইসাইড নোটও পাওয়া গেছে। প্রাথমিকভাবে পুলিশ ধারণা করছে, তিনি আত্মহত্যা করেছেন।

 

কয়েক বছর আগে স্বামী তানভীর আহমদের সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ হয় আকতার জাহানের। সুইসাইড নোটে তিনি তার প্রাক্তন স্বামীর প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করেছেন। এতে তিনি লিখেছেন, ‘আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়। শারীরিক, মানসিক চাপের কারণে আত্মহত্যা করলাম। সোয়াদকে (ছেলে) যেন ওর বাবা কোনোভাবেই নিজের হেফাজতে নিতে না পারে। যে বাবা সন্তানের গলায় ছুরি ধরতে পারে- সে যেকোনো সময় সন্তানকে মেরে ফেলতে পারে বা মরতে বাধ্য করতে পারে।’

 

 

 

রাইজিংবিডি/রাজশাহী/১০ সেপ্টেম্বর ২০১৬/তানজিমুল হক/এসএন

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়