ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

পুতুলনাচ ও শিবানী সুন্দরী

আমিনুল ই শান্ত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:২২, ২ ডিসেম্বর ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
পুতুলনাচ ও শিবানী সুন্দরী

শিবানী সুন্দরী নাটকের মহড়ার দৃশ্য

আমিনুল ই শান্ত : বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টা। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির স্টুডিও থিয়েটার হল। লিফট থেকে নামতেই দেখা মেলে কালো রঙের পোশাকে একজন পায়চারি করছেন। আর সঙ্গে সংলাপ আওড়াচ্ছেন। সামনে এগিয়ে সাজ ঘরে ঢুকে যাই। সেখানে দেখা যায়- এক ঋষি হাঁটাহাঁটি করছেন। পরে জানা যায় এ ঋষির নাম ঋষিসদানন্দ। পাশেই মেকআপ নিচ্ছেন শিবানী সুন্দরী, নন্দকুমার, মমিন সওদারসহ অনেকে।

 

১৪ বছর পর মঞ্চে আসছে শিবানী সুন্দরী নাটকটি। নাটকটি মঞ্চে নিয়ে আসছে নাট্যদল মহাকাল। গতকাল বৃহস্পতিবার ছিল এ নাটকের টেকনিক্যাল প্রদর্শনী। নাটকটির প্রদর্শনী শুরু হওয়ার আগে এমন দৃশ্য দেখা যায়।

 

আজ শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল হলে এ নাটকের পুনঃমঞ্চায়ন হবে। নাটকটি রচনা করেছেন সালাম সাকলাইন। নির্দেশনায় রয়েছেন দেবাশীষ ঘোষ।

 

পুতুলনাচ লোকনাট্যের প্রাচীনতম একটি মাধ্যম। কিন্তু এর ব্যবহার এখন তেমন একটা চোখে পড়ে না। মজার ব্যাপার হলো ‘শিবানী সুন্দরী’ নাটকে পুতুল ব্যবহার করা হয়েছে। যেটা বাংলার পুতুল।

 

 

ব্যস্ততার এক ফাঁকে এ বিষয়ে কথা হয় নির্দেশক দেবাশীষ ঘোষের সঙ্গে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘লোক আঙ্গিক নিয়ে গ্রুপ থিয়েটার কাজ করছে। মানে লোক আঙ্গিকটা ফিরিয়ে আনার কাজ করছে। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দুটির মিশ্রণ ঘটিয়ে আমরা থিয়েটার করার অনেক চেষ্টা করেছি। আমি লোকনাট্য নিয়ে অনেক কাজ করেছি। কিন্তু সবই পালা ফর্মে। বাংলাদেশে পালা ফর্মটাই বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে। যেমন- ইসলাম উদ্দিনের প্যাটার্নে কাজ হয়েছে। মনসার প্যাটার্ন নিয়েও কাজ হয়েছে। সঙ নিয়ে কাজ হয়েছে। কিন্তু পুতুল নিয়ে বড় আকারের কোনো কাজ কেউ হাতে নিচ্ছেন না। শিল্পকলার পক্ষ থেকেও এটা নিয়ে অনেকবার চেষ্টা করা হয়েছে। এ কাজটি আসলে অনেক পরিশ্রমসাধ্য। রীতিমতো গষেণামূলক। কারণ যারা স্ট্রিং পাপেট তৈরি করেন তাদের হাত ঠিক হতেই ৫ থেকে ৬ বছর সময় লেগে যায়। সেখানে আমি পুতুল নিয়ে কাজ করার রিস্ক নিয়েছি। আমি চেয়েছি, অন্তত শুরুটা আমি করি। ইদানিং অনেকে এই কাজটি জানেই না। শিবানী সুন্দরী নাটকের কাজ শুরু করে আমার এমন অভিজ্ঞতা হয়েছে। তাদের কাছে মুস্তফা মনোয়ারের পাপেটটাই হচ্ছে বাংলার পাপেট। কিন্তু বাংলার পাপেট হচ্ছে- ওইটা, যেটাতে পাতার বাঁশি দিয়ে সংলাপ দেয়। আবার মুখে সংলাপ দেওয়ার প্যাটার্নও আছে। আমি এই দুইটাসহ অভিনেতার সংলাপ সংমিশ্রণ করে কাজটি করছি। আসলে এই পুতুলগুলোকে কীভাবে সম্মান দেওয়া যায়। অর্থাৎ সেও একজন অভিনেতা। তা ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি।’

 

ভারতে নাটক নিয়ে পড়াশোনা করেছেন দেবাশীষ। সেখানে ইন্টার্নশিপের বিষয় নিয়েছিলেন পাপেট। তারপর থেকেই এটা নিয়ে কাজ করার পরিকল্পনা করেন তিনি। তাও সেটা অল্প দিন নয়, কেটে গেছে ১৮ বছর। কিন্তু এতদিন কাজটি শুরু করার সাহস পাননি। নিজেকে প্রস্তুত করতে চেষ্টা চালিয়েছেন তিনি। তা ছাড়া দলও ঠিকমতো পাচ্ছিলেন না। কিছুদিন আগে নাট্যদল মহাকালের দলনেতা মীর জাহিদ হাসানের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন তিনি। তারপর তিনিও কাজটি করতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। অবশেষে দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ও অভিজ্ঞতার ফল শিবানী সুন্দরী। এমনটাই জানান দেবাশীষ ঘোষ।

 

 

২০০১ সালে প্রসেনিয়াম ফর্মেটে ‘শিবানী সুন্দরী’ মঞ্চে নিয়ে আসেন দেবাশীষ ঘোষ। তারপর কেটে গেছে দীর্ঘ ১৪ বছর। নতুন আঙ্গিকে নতুন কিছু মঞ্চে নিয়ে আসছেন নির্দেশক। কিন্তু এই গল্প কেন বেছে নিলেন এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, শিবানী সুন্দরী নাটকের গল্প লোক গল্প। আর পুতুল ব্যবহারের জন্য লোক গল্প প্রয়োজন ছিল। এখানে আমিনা সুন্দরী নাটকের গল্প নিলেও সমস্যা ছিল না। তবে নাটকটির স্ক্রিপ্টে অনেক পরিবর্তন আনা হয়েছে। আর মহাকাল নাট্যদল তার ভাবনার সঙ্গে একাত্মতা পোষণ না করলে কাজটি করা সম্ভব হতো না বলেও জানান তিনি।

 

নাটকের গল্পে দেখা যাবে, সোনামতি শহরে বনিক মনোহরের কন্যা শিবানী সুন্দরী রূপেগুণে অনন্যা। ঋষি সদানন্দর পুত্র নন্দকুমারকে ভালোবাসেন তিনি। কিন্তু ঋষি সদানন্দ এই সম্পর্কের কথা জেনে ভীষণ ক্রুদ্ধ হন। কারণ তার ইচ্ছে নন্দ তারই মতো সন্ন্যাস ধর্ম গ্রহণ করে আশ্রমের সেবা করুক। এই নিয়ে পিতা পুত্রের মধ্যে বাগবিতণ্ডা হয়। নন্দ ঋষির প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ঋষি তাকে আশ্রম থেকে বিতাড়িত করেন, নন্দ মনের কষ্টে ঋষি ও শিবানী থেকে অনেক দূরে জঙ্গলে চলে যায়। এভাবেই নাটকের কাহিনি এগিয়ে গেছে।

 

 

নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে রূপ দিয়েছেন সুরেলা নাজিম, বেবী শিকদার, ফারুক আহমেদ সেন্টু, বাবু স্বপ্নওয়ালা, রিফাত, বিপ্লব, মো. জাহাঙ্গীর, রাহুল, বাধন, মীর জাহিদ হাসান, মৈত্রী সরকার, সারমীন সুলতানা আশরা, শিবলী সরকার, সৈয়দ ফেরদৌস ইকরাম, সুফিয়া খানম শোভা, রাজিব হোসেন, তারকেশ্বর তারোক, শাহরিয়ার হোসেন পলিন, কবির আহমেদ, সামিউল জীবন, আসাদুজ্জামান রাফিন, ইকবাল চৌধুরী, ফারাবী আকন্দ হীরা ও সাইমুন।

 

 

মহাকাল নাটকের নেপথ্য শিল্পীরা হলেন- রচনায় সালাম সাকলাইন, পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় দেবাশীষ ঘোষ, পুতুল নাচ নির্দেশনা ও প্রশিক্ষণে খেলু মিয়া, মঞ্চ পরিকল্পনায় যুনায়েদ ইফসুফ, সুর ও গান রচনা এবং আবহ সংগীত পরিকল্পনায় শিশির রহমান, আলোক পরিকল্পনা, প্রপস পরিকল্পনা ও নির্মাণ পলাশ হেনড্রি সেন, পোশাক পরিকল্পনায় শিশির সবুজ, কোরিওগ্রাফিতে ফারাবী আকন্দ হীরা, রূপসজ্জা পরিকল্পনায় শুভাশীষ দত্ত তন্ময় এবং প্রযোজনা অধিকর্তা মীর জাহিদ হাসান।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২ ডিসেম্বর ২০১৬/শান্ত/এসএন/ইভা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়