ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

খালেদাকে প্রধানমন্ত্রী

‘আগে ক্ষমা চান, তারপর প্রস্তাব দিন’

এনআর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:০৮, ৩ ডিসেম্বর ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘আগে ক্ষমা চান, তারপর প্রস্তাব দিন’

নিজস্ব প্রতিবেদক : নির্বাচন কমিশন নিয়ে প্রস্তাব দেওয়ার আগে সরকার পতনের আন্দোলনের নামে পুড়িয়ে মানুষ হত্যার জন্য জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

 

শনিবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে এ আহ্বান জানান।

 

সম্প্রতি পানি সম্মেলন উপলক্ষে হাঙ্গেরিতে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফর বিষয়ে জানাতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

 

নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার প্রস্তাবের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা যখন ক্ষমতায় ছিল তখন যে নির্বাচন কমিশন গঠন করেছিল, সেগুলো কি তাদের স্মরণে আছে? সেগুলো একটু তাদের স্মরণ করে দেওয়া উচিত।

 

শেখ হাসিনা বলেন, এই নির্বাচন কমিশন আমরা কিন্তু সরকারে থেকে করিনি। সার্চ কমিটি করেই করা হয়েছে। ২০০৮ সালে সেভাবেই করা হয়েছিল। এখনো সেই প্রক্রিয়াই অনুসরণ করা হচ্ছে। এখন তিনি (খালেদা জিয়া) আবার নতুন করে কী প্রস্তাব দিয়েছেন, আমি জানি না। আপনারা তার প্রস্তাবের মাথা বা লেজের হদিস পেয়েছিন কি না, আমি জানি না? আপনারাও তো সেখানে প্রশ্ন করা ও ব্যাখ্যা চাওয়ার সুযোগ পাননি। কাজেই উনি কী বললেন, কী করলেন, তা তো কারো জানা নেই।

 

খালেদা জিয়ার নাম উল্লেখ না করে শেখ হাসিনা বলেন, তিনি তো জাতীয় ইলেকশন করেন নাই। একটা দলের প্রধান হিসেবে একটা ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে নির্বাচন থেকে বিরত থেকেছিলেন। এখন এতদিন পরে ওনার টনক নড়ল। উনি তো মানুষ খুন করে আওয়ামী লীগ সরকার উৎখাত করার জন্য আন্দোলন করেছিলেন।  তাই তার যেকোনো প্রস্তাব দেওয়ার আগে জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত ছিল মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করার জন্য। আগে সেই জবাবটা জাতির কাছে দিক। তারপর তার প্রস্তাব নিয়ে কথা বলব।

 

বিএনপির সরকারের পতন আন্দোলনের প্রসঙ্গ তুলে শেখ হাসিনা বলেন, উনি ৯২ দিন ওনার অফিসে বসে থাকলেন। আর মানুষ পোড়ালেন। তার কাছ থেকে কী আশা করবেন? ওনার প্রস্তাব উনি দিয়েছেন? উনি রাষ্ট্রপতিকে বলুক। এটা রাষ্ট্রপতি ভালো বুঝবেন। রাষ্ট্রপতি যে পদক্ষেপ নেবেন, সেটাই হবে। এখানে আমাদের বলার কিছু নেই।

 

প্রধানমন্ত্রী আক্ষেপ করে বলেন, কার জন্য বলব? তার ছেলে মারা গেছে। দেখতে বাড়ি গিয়েছিলাম।দরজা বন্ধ করে দিলেন। অভদ্রতারও একটা সীমা থাকে। এ ধরনের অভদ্র যারা, তারা কি প্রস্তাব দিল, না দিল ওটা নিয়ে আমার মতামত চান কেন আপনারা? এ ধরনের অভদ্রতা যারা করে তাদের কোনো মতামত নিয়ে মতামত দেওয়ার কোনো অভিপ্রায় আমার নেই। ওরা খুনি। খুনিদের কথা নিয়ে কি বক্তব্য দেব? তারা আজকে এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। কালকে ওই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। তাদের তো সিদ্ধান্তের কোনো মিল নাই। পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তারা জিতেছিল। তখন ইসি নিয়ে অভিযোগ করল না কেন? তখন কিন্তু কথা বলে নাই। তারা জিতলে সব ভালো, হারলে খারাপ। আর একটায় অংশগ্রহণ করবে। আবার আরেকটায় করবে না। যে নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত দেবার মতো কোনো ক্ষমতাই নাই, জাতি তার কাছ থেকে কী আশা করে? শুধু সাজুগুজু করে বসে থাকলেই সব হয় না।

 

মধ্যবর্তী নির্বাচন প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা কি এখনো মধ্য পথে আছি? আমাদের (সরকার) তিন বছর হয়ে যাচ্ছে। এখন তো মধ্যে নাই। মধ্য ক্রস করে গেছি। কাজেই ওরা যদি এখনো মধ্যবর্তী বলে থাকে তাহলে মনে হয় পরবর্তী ইলেকশনের কথা বলছে।

 

টেলিভিশন মালিক ও শিল্পীদের আন্দোলন প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ওখানে (ভারত) যদি আমাদের টেলিভিশন দেখাতে ৫ কোটি টাকা ফি ধরে। তাহলে আমাদের এখানে এত কম কেন? আমাদের ফি কে নির্ধারণ করে? আমাদের এখানে তো সরকারের কোনো ফি নাই। তাহলে আমরা দেড় লাখ টাকা কেন করলাম? কেবল ব্যবসা তো আমি করি না। জানিও না। আপনারা করেন। আপনারাই বলতে পারবেন। আর আপনারাই তাদের সাথে যোগাযোগ রাখেন। কার চ্যানেলটা আগে যাবে। আপনারাই সেটা ম্যানেজ করেন। এটা নিয়ে আলোচনা চলছে। আপনারা গরম গরম ভালো বক্তব্য দিয়েছেন। আমার একটু শোনার সৌভাগ্য হয়েছে। এটা নিয়ে আলাপ আলোচনা চলছে। নিশ্চয়ই একটা ব্যবস্থা হবে।

 

জাতীয় সংসদ ভবনের মূল নকশার বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, লুই আই কানের বিশ্বব্যাপী যে কয়েকটা স্থাপত্যকর্ম আছে তার মধ্যে আমাদের এ সংসদ ভবন অত্যন্ত গুরুপ্তপূর্ণ এবং শিক্ষণীয়।

 

রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে এতো অমানবিক ঘটনা ঘটে যখন মানুষ একেবারে অসহায় হয়ে পড়ে। তাদের আশ্রয় না দিয়ে উপায় থাকে না। এটা বাস্তবতা। তবে আমি বলব, কয়েকটি লোক এর জন্য দায়ী। এরা প্রথমে মিয়ানমারের নয়জন বর্ডার গার্ড পুলিশকে হত্যা করল। এ কারণে ১০০ আর্মি গিয়ে তাদের ওপর আক্রমণ করল। এখান থেকেই ঘটনার সূত্রপাত। দোষ দিতে হলে যারা প্রথমে ঘটনার সূত্রপাত করেছিল তাদের ব্যাপারে আগে চিন্তাভাবনা করা উচিত। তাদের ধরে দেওয়া উচিত। কারণ, এদের কারণেই আজকে হাজার হাজার নারী-পুরুষ কষ্ট পাচ্ছে। এটাই হচ্ছে সবচেয়ে দুঃখজনক। এটাই হচ্ছে সবচেয়ে দুশ্চিন্তার বিষয়। এ ব্যাপারে বিশ্বব্যাপী সবারই সচেতন হওয়া উচিত। বিশ্বনেতাদের আরো বেশি সোচ্চার হওয়া উচিত ছিল।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩ ডিসেম্বর ২০১৬/এনআর/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়