ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

রোমাঞ্চকর জয়ে ফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ

ইয়াসিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:০৫, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
রোমাঞ্চকর জয়ে ফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ

ইয়াসিন হাসান, মিরপুর থেকে : বাংলাদেশকে ৩ উইকেটে হারিয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ভারতের বিপক্ষে ১১তম অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

 

বৃহস্পতিবার মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে বাংলাদেশ টসে জিতে ব্যাটিং করতে নেমে সবকটি উইকেট হারিয়ে ২২৬ রান সংগ্রহ করে। জবাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ইনিংসের ৪৮.৪ ওভারে ৩ উইকেট হাতে রেখে জয় নিশ্চিত করে।

 

বাংলাদেশ হেরে গেলেও খুব কষ্ট করেই জিততে হয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং তিন বিভাগেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ ছিল আপ টু দ্য মার্ক। অন্যদিকে পুরো টুর্নামেন্টে দাপটের সঙ্গে খেলে প্রথমবারের মত সেমিফাইনালে উঠা বাংলাদেশ বিগ ম্যাচের ‘ভার’ নিতে কিছুটা সময় নিয়ে নেন। সে সুযোগটি খুব ভালোমতই কাজে লাগিয়ে ২০০৪ সালের পর দ্বিতীয়বারের মত যুব বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠল ওয়েস্ট ইন্ডিজ যুবারা। তবে ম্যাচের শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত লড়াই করে যান মেহেদী হাসান মিরাজরা। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে ‘জয়’ নাম সোনার হরিণটা এদিন আর নিজেদের আয়ত্বে নিয়ে আসতে পারেনি জুনিয়র টাইগাররা। স্বপ্নের শিরোপার জন্যে অপেক্ষা করতে হবে ২০১৮ সাল পর্যন্ত। যুব বিশ্বকাপের পরবর্তী আসরটি হবে নিউজিল্যান্ডে।     

 

বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের শুরু থেকেই ছিল চরম নাটকীয়তা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের দুই পেসার আলজারি জোসেফ ও চেমার হোল্ডার প্রথম দুই ওভারে বল করেন ২০টি! ছিল ৬ ওয়াইড ও ২ নো বল। দ্বিতীয় ওভারে চেমার হোল্ডার ছিলেন বেশি খরুচে। পঞ্চম বলে প্রথম বৈধ বলের স্বাদ নেন! তবে ওই ওভারেই ক্যারিবীয়নাদের সাফল্য এনে দেন হোল্ডার। ১০ বলে রানের খাতা খুলতে না পারা পিনাক ঘোষকে থার্ড ম্যান অঞ্চলে তালুবন্দি করান হোল্ডার। অতিরিক্ত খাত থেকে রান পাওয়ার দিনে বাংলাদেশের ব্যাট থেকে প্রথম রান আসে দ্বিতীয় ওভারের পঞ্চম বলে। তখন বাংলাদেশের রান ছিল ৯।

 

দ্রুত প্রথম উইকেট হারানো পর বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে পারেনি বাংলাদেশ। স্বভাবসুলভ খেলার ভঙ্গি থেকে বের হয়ে এসে ব্যতিক্রম কিছু করতে গিয়ে জোসেফের বলে স্কয়ার লেগে ক্যাচ উঠিয়ে দেন সাইফ (১৬ বলে ১০)। দলের স্কোরকে টেনে নিয়ে দ্রুত মাঠে নামতে হয় সেরা ব্যাটসম্যান নাজমুল হাসান শান্তকে। কিন্তু বড় ম্যাচে ফ্লপ ছোট্ট তারকা। ২৪ বলে ১ বাউন্ডারি ১১ রান করে জনের বলে ভুল শট করে আউট বাহাতি এ ব্যাটসম্যান।

 

কোয়ার্টার ফাইনালের অঘোষিত নায়ক জাকির হাসানকে নিয়ে চতুর্থ উইকেটে জুটি বাঁধেন এক প্রান্ত আগলে ধরে খেলে যাওয়া জয়রাজ শেখ। বাউন্ডারি কিংবা ওভার বাউন্ডারি থেকে ‘চুরি’ করে সিঙ্গেল কিংবা ডাবলস নিতেই বেশি মনযোগী ছিলেন তারা। ৩০ রান যোগ করেন ৮.৪ ওভারে, যেখানে বাউন্ডারির মার ছিল ২টি।

 

৮৮ রানে এ জুটি ভাঙেন পেসার স্পিঙ্গার। আগের মতই সেট হয়ে বড় স্কোর গড়তে না পারার আক্ষেপ করতে হয় জয়রাজ শেখকে। ৫৪ বলে ৫ বাউন্ডারিতে ৩৫ রান করে স্পিঙ্গারের এমন বলে আউট হলেন, যা শুধুই কষ্ট বাড়িয়েছে। বের হয়ে যাওয়া বল খোঁচা মারতে গিয়ে বিপদ ডেকে আনেন জয়রাজ। এরপর ক্রিজে আসেন অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ। জাকিরকে নিয়ে ২৫ রান যোগ করলেও ম্যাচের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ৮৫ রান যোগ করেন ষষ্ঠ উইকেটে মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনকে নিয়ে। এতে মিরাজের সংগ্রহ ছিল ৬০। সাইফউদ্দিন করেন ৩৬ রান। তাদের দায়িত্বশীল ব্যাটিং বাংলাদেশ ২২৬ রানের লড়াকু পুঁজি পায়। মিরাজ ৭৪ বলে ৭ বাউন্ডারিতে ৬০ ও সাইফউদ্দিন ৫৫ বলে ৩ বাউন্ডারিতে করেন ৩৬ রান। ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে বল হাতে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নেন কেমো পল।

 

ব্যাটিংয়ে দলীয় সর্বোচ্চ রান করার পর শুরুতেই বোলিংয়ে চলে আসেন মেহেদী হাসান মিরাজ। তবে শুরুটা একেবারেই বাজে! প্রথম দুই ওভারে খরচ করেন ২০ রান। তবে নিজের দিনে কতটা ভয়ংকর তা প্রমাণ করতে সময় নেননি মিরাজ। ব্যক্তিগত তৃতীয় ওভারের শেষ বলে তেভন এমলিচকে সাজঘরের পথ দেখান ডানহাতি এ অফস্পিনার। প্রথম সাফল্য পাওয়ার আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের যুব দানব জিডরন পোপকেও আউট করতে পারত বাংলাদেশ। ব্যক্তিগত ২৩ রানে মেহেদী হাসান রানার বলে শর্ট বলে পুল করতে গিয়ে শর্ট ফাইন লেগে ক্যাচ উঠিয়ে দেন পোপ। ফিল্ডিং থাকা শাওন গাজী ক্যাচটি নিতে পারলে হয়ত সেখানেই শেষ হতে পারত পোপ, ওয়েস্ট ইন্ডিজ! সুযোগ পেয়ে বড় ইনিংস খেলতে ব্যর্থ পোপ। ঘাতক সেই মিরাজ। অফস্পিনারের ২০ বলে ৩০ রান করা পোপ বোল্ড হন মিরাজের বলে। তার ইনিংসে ছিল ২টি ছয় ও ৪টি চার। এত মার খেয়েও দমে যাননি মিরাজ। প্রতিশোধ নিয়েছেন ঠিকই। সরাসরি বোল্ড করে মিরাজ ফিরেছেন স্বরূপে।

 

১২ রানের ব্যবধানে ২ উইকেট হারালেও তৃতীয় উইকেটে আবারও টাইগারদের বিপক্ষে প্রতিরোধ গড়ে তুলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। অধিনায়ক শিমরন হেটমায়ারের সঙ্গী কেসি কার্টি। ৬২ রান যোগ করেন ৭৭ বলে। বিপদজনক হয়ে উঠা এ জুটি ভাঙেন শাওন গাজী। দলীয় ১১৮ রানে কার্টিকে বোল্ড করেন। সতীর্থের বিদায়ের পর বাংলাদেশের বোলারদের একাই সামলে নেন হেটমায়ার। তুলে নেন হাফসেঞ্চুরি। চতুর্থ উইকেটে স্পিঙ্গারকে নিয়ে তুলে নেন ২৯ রান। খুব সাবলীলভাবে যখন বাংলাদেশের স্পিনারদের সামলে নিচ্ছিলেন তখনই মিরাজ বোলিংয়ে আনেন পেসার সাইফউদ্দিনকে। ২৮তম ওভারের নিজের দ্বিতীয় স্পেলে এসে প্রথম বলেই বাউন্ডারি হজম করতে হয় হেটমায়ারকে। প্রতিশোধ নিয়ে নেন তৃতীয় বলে। সাইফউদ্দিনের স্লোয়ারে সার্কেলের ভিতরে ক্যাচ তুলে নেন হেটমায়ার। পিছনে দৌড়ে অসাধারণ ক্যাচ লুফে নেন সাইফ হাসান। ৫৯ বলে ৭ চার ১ ছক্কায় ৬০ রানের ইনিংসে থেমে যায় সেখানেই। এরপর বাহাতি স্পিনার শাওন গাজী এক ওভারে ক্যারিবীয় যুবাদের ২ উইকেট তুলে নেন। জিড গুলি (৯) ও কেমো পল (৪) সাজঘরে ফেরেন।   

 

ষষ্ঠ উইকেটে ৩৬ রান যোগ করে দলকে জয়ের পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন মিচেলে ফ্রেউ ও স্পিঙ্গার। জয়ের থেকে ১০ রান দূরে থেকে এ জুটি ভেঙে রোমাঞ্চ নিয়ে আসেন সাইফউদ্দিন। ফ্রেউকে উইকেটের পিছনে তালুবন্দি করান সাইফউদ্দিন। ৪৬তম ওভারে বোলিংয়ে এসে মাত্র ১ রান খরচ করেন ডানহাতি এ পেসার। শেষ ১৮ বলে ৮ রান প্রয়োজন ওয়েস্ট ইন্ডিজের। কাজটা ৮ বল হাতে রেখেই করে ফেলেন রায়ান জন (২) ও স্পিঙ্গার (৬২)।   

 

বাংলাদেশের সেরা বোলার সালেহ আহমেদ শাওন। ৩৭ রানে নেন ৩ উইকেট। ২টি করে উইকেট নেন মিরাজ ও সাইফউদ্দিন।

 

                                                        

 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬/ইয়াসিন/আমিনুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়