ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

রোহিঙ্গা : আরো সাড়ে ১৬ কোটি ডলার নেওয়ার উদ্যোগ

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:০৩, ১৯ নভেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
রোহিঙ্গা : আরো সাড়ে ১৬ কোটি ডলার নেওয়ার উদ্যোগ

কেএমএ হাসনাত : মিয়ানমারে সামরিক বাহিনীর নির্যাতনে বিতাড়িত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন কাজে ব্যবহারের জন্য বিশ্ব ব্যাংকের কাছ থেকে আরো সাড়ে ১৬ কোটি ডলার আর্থিক সহায়তা নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

‘ইমারজেন্সি মাল্টি-সেক্টর রোহিঙ্গা ক্রাইসিস রেসপন্স প্রজেক্ট’ শীর্ষক প্রকল্পের অধীনে এ সহায়তা নেওয়া হবে বলে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, দাতা সংস্থাটির সঙ্গে নেগোসিয়েশন করার জন্য ইআরডি’র অতিরিক্ত সচিব মাহমুদা বেগমকে দলনেতা করে ২১ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে আর্থিক সহায়তা পাওয়ার বিষয়ে আলোচনা করবে।

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর চরম নির্যাতনের মুখে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের আনুমানিক ৭ লাখ ২ হাজার ১০ জন বাংলাদেশের সীমান্ত অতিক্রম করে কক্সবাজার জেলায় প্রবেশ করে। এতে কক্সবাজার জেলায় আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গার মোট সংখ্যা ৯ লাখ ১৪ হাজার ৬৭৮ এ উন্নীত হয় যা পৃথিবীর দ্রুততম জোরপূর্বক স্থানচ্যুত সংকটগুলির মধ্যে অন্যতম। উখিয়া ও টেকনাফ- এ দুটি উপজেলায় বেশির ভাগ স্থানচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী (ডিআরপি) বসতি স্থাপন করেছে। কুতুপালং মেগাক্যাম্প বিশ্বের বৃহত্তম শরণার্থী শিবিরে পরিণত হয়েছে।

কক্সবাজারে মোট জনসংখ্যার প্রায় এক তৃতীয়াংশ হিসেবে ডিআরপিদের গণনা করা হয়েছে যা ইতোমধ্যে ঘনবসতিপূর্ণ এবং গুরুতর উন্নয়ন চ্যালেঞ্জগুলির মুখোমুখি হয়েছে। স্থানচ্যুত রোহিঙ্গারা পাহাড়ি প্রান্তে অনিশ্চিত অবস্থায় বাস করছে, মৌলিক অবকাঠামোসমূহ দূরবর্তী এলাকায় অবস্থিত এবং পরিসেবাসমূহে সর্বনি¤œ প্রবেশাধিকার রয়েছে। শিবির স্থাপন করার ফলে দ্রুত বনের জঙ্গল কাটা হয়েছে। ভূমিধস ও বন্যা থেকে সর্বাধিক ঝুঁকিপূর্ণ পরিবারের পূনর্বাসন চলছে। কিছু সর্Ÿোচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ শ্রেণির জন্য উপযুক্ত জায়গা নেই। ফলে বিদ্যমান অবকাঠামোকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে। পানি এবং স্যানিটেশন সুবিধা ও স্বাস্থ্যসেবা ক্ষেত্রে চাপ বেড়েছে। তাছাড়া ডিআরপি সংখ্যাগরিষ্ঠ নারী ও শিশু যারা বৈষম্য ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা ও অন্যান্য সামাজিক সমস্যাগুলির মুখোমুখি হচ্ছে।

রোহিঙ্গা ও স্থানীয় জনগনের জীবনমান উন্নয়নকল্পে ‘ইমারজেন্সি মাল্টি-সেক্টর রোহিঙ্গা ক্রাইসিস রেসপন্স প্রজেক্ট’ নামক প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বিশ্বব্যাংক রিফিউজি সাব উইন্ডো থেকে ১৬ কোটি ৫০ লাখ ডলার আর্থিক সহায়তা দেবে। প্রকল্পটি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হবে। এ লক্ষ্যে বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন চুক্তি, প্রকল্প মূল্যায়ন দলিল, ব্যায় ও আর্থিক তথ্যাবলী পত্র পাঠিয়েছে। প্রকল্পটি বর্তমান অর্থবছরের ঋণ কর্মসূচিতে অন্তর্ভূক্ত আছে বলে সূত্র জানিয়েছে।

সূত্র জানায়, রোহিঙ্গাদের মৌলিক পরিসেবাদির প্রবেশাধিকার উন্নত করা এবং স্থানচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর (ডিআরপি) স্বাভাবিক জীবনযাত্রা উন্নত করার লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট কতগুলো উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে অতিরিক্ত আর্থিক সহায়তা নেওয়া হচ্ছে। এসব উদ্দেশ্যর মধ্যে রয়েছে ৬০ হাজার ডিআরপি প্রধানত নারী, কর্মবয়স্ক শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কমিউনিটি সেবা সরবরাহের মাধ্যমে স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি, কমিউনিটি ওয়ার্ক অ্যাফেয়ার উন্নয়নের মাধ্যমে মৌলিক সেবা সম্প্রসারণ ও ৪০ হাজার ডিআরপির অন্তর্ভূক্তকরণ। উৎপাদনমূলক কর্মকা-ে লিঙ্গ সংবেদনশীল শ্রমঘন কাজের ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ যুবক ও মহিলাদের অগ্রাধিকার প্রদান করা, স্থানীয় সরকার বিভাগ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং অন্যান্য সরকারি সংস্থার ডিআরপি সংশ্লিষ্ট সংকট ব্যবস্থাপনায় সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ এবং আকস্মিক প্রাকৃতিক দুর্যোগ অবস্থা মোকাবেলা।

এ প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১৬ কোটি ৫০ লাখ ডলার। এরমধ্যে ১৩ কোটি ৭৫ লাখ ডলার অনুদান এবং ২ কোটি ৭৫ লাখ ডলার ঋণ হিসেবে বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে পাওয়া যাবে। এরমধ্যে ২ কোটি ৭৫ লাখ ডলারের ঋণ কোন তৃতীয় পক্ষ কর্তৃক বাই ডাউন পদ্ধতিতে ঋণ থেকে অনুদানে পরিবর্তিত হবে। ফলে সম্পূর্ণ অর্থায়নটি অনুদান হিসেবে বিবেচিত হবে বলে জানা গেছে। 



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৯ নভেম্বর ২০১৮/হাসনাত/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়