লাউ চাষে সচ্ছল মেহেরপুরের চাষিরা
মহাসিন আলী || রাইজিংবিডি.কম
লাউ দেখাচ্ছেন চাষিরা
মহাসিন আলী, মেহেরপুর : লাউ চাষ করে ভাত-কাপড়ের সংস্থান করেছেন মেহেরপুর সদর উপজেলার আমঝুপি ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের চাষিরা। ধান-গম চাষ করে যখন চাষিরা ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন, তখন লাউ চাষ তাদের কাছে আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। লাউ চাষ তাদের মুখে হাসি ফুটিয়েছে। এখন লাউ বিক্রি করে ছেলেমেয়ের লেখাপড়া করাচ্ছেন তারা। কেউ করেছেন বাড়ি। আবার কেউ কিনেছেন গাড়ি।
মেহেরপুর সদর উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, চলতি বছরে মেহেরপুর সদর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের ৪৭৫ বিঘা জমিতে লাউ চাষ হয়েছে। লাউয়ের ফলনও ভালো হয়েছে। ভালো ফলন কৃষকের মনে আনন্দ এনেছে।
মেহেরপুর সদর উপজেলার আমঝুপি ইউনিয়নের মদনাডাঙ্গা, আমঝুপি, সুবিদপুর, চাঁদবিল তেরোঘরিয়াসহ কয়েকটি গ্রামের মাঠে গিয়ে দেখা যায় মাঠের পর মাঠে চাষ হয়েছে লাউ।
চোখেমুখে আনন্দ নিয়ে কেউ লাউখেত পরিচর্যা করছেন। কেউ তুলছেন খেত থেকে লাউ। কথা হয় পুরাতন মদনা গ্রামের বেনাগাড়ীর মাঠে লাউখেত পরিচর্যাকারী চাষি রবিউল ইসলামের সঙ্গে। তিনি সাত-আট বছর ধরে লাউ চাষ করছেন।
মেহেরপুরের বিভিন্ন গ্রামের মাঠে এভাবে মাচায় ঝুলছে লাউ
তিনি জানান, লাউ চাষে তার ভাগ্য ফিরেছে। ২ বিঘা জমি বিক্রি করে বিদেশে গেলেও টাকা ওঠাতে পারেননি। দেশে ফিরে লাউ চাষ করে আবারও ২ বিঘা জমি কিনেছেন। তিনি এ বছর দেড় বিঘা জমিতে লাউ চাষ করেছেন। ছেলেমেয়ে নিয়ে তার ছয়জনের সংসার ভালোভাবে চলছে।
তার পাশে ছিলেন আরো এক লাউচাষি নাজিরুল ইসলাম। তিনি ওই গ্রামের চাঁদ আলীর ছেলে।
তিনিও জানান, লাউ চাষ করে তিনি ভালো আছেন।
রবিউল ইসলাম পৌষ মাসে লাউ চাষ করেছেন। গত বছর তিনি এক বিঘা জমিতে লাউ চাষ করেছিলেন। এ বছর তিনি দেড় বিঘা জমিতে লাউ চাষ করেছেন। জমি চাষ থেকে লাউ তোলা পর্যন্ত তার ১২ হাজার টাকা খরচ হবে। এক মাস আগে থেকে লাউ তোলা ও বিক্রি করা চলছে তার খেত থেকে। সামনে আরো দুই মাস লাউ বিক্রি করা যাবে। ইতিমধ্যে লাউ চাষের খরচ উঠে গেছে। সামনের দুই মাসে লাউ বিক্রির যে টাকা পাবেন সেটাই তার লাভ হবে। তিনি মনে করেন আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে কম করে হলেও তিনি ৫০ হাজার টাকার লাউ বিক্রি করতে পারবেন।
খোঁজ নিয়ে আরো জানা গেছে, পুরাতন মদনাডাঙ্গা গ্রামের জয়নাল এ বছর এক বিঘা ৫ কাঠা, হযরত আলী ১০ কাঠা, মুরাদ আলী এক বিঘা, আবদুল মালেক এক বিঘা জমিতে লাউ চাষ করেছেন। আবদুল মালেক গেল বছরে ২ বিঘা জমিতে লাউ করেছিলেন। এতে তিনি ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকার লাউ বিক্রি করেছিলেন।
চাষিদের খেতে উৎপাদিত লাউ জেলার চাহিদা মিটিয়ে ঢাকা, বরিশাল, পটুয়াখালী ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় রপ্তানি হয় বলে জানালেন চাষিরা।
মেহেরপুর সদর উপজেলার আমঝুপি ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামের বাসিন্দা গোপালপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেম একজন ভালো সবজিচাষি।
অন্য জেলায় লাউ রপ্তানির জন্য লাউ কিনছেন বহিরাগত ব্যবসায়ীরা
তিনি জানালেন, ধান-পাট ও গম চাষ করে দাম না পেয়ে প্রতিবছরই এলাকার চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তাই এ এলাকার চাষিরা সবজি চাষের দিকে ঝুঁকছেন। তিনি মনে করেন এক যুগ আগেও এলাকার চাষিরা ছিলেন ঋণগ্রস্ত। বর্তমানে এলাকার চাষিরা পাকা বাড়ি করেছেন। ঘরে ঘরে একটি করে মোটরসাইকেল কিনেছেন। ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া শোখাচ্ছেন। অভাব তাদের ছুঁতে পারছে না।
মেহেরপুর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এ কে এম কামরুজ্জামান বলেন, লাউসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করে মেহেরপুর এলাকার চাষিরা সচ্ছলতা ফিরিয়েছেন। এতে কৃষি বিভাগও খুশি। কৃষকদের এসব সবজিতে রোগবালাই দমন ও প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিতে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা নিজ নিজ দায়িত্বপ্রাপ্ত এলাকার এ-প্রান্ত থেকে ও-প্রান্ত ছুটছেন। চাষিদের এসব সবজি যাতে বিষমুক্ত হয় সে বিষয়েও কৃষি বিভাগ তাদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
রাইজিংবিডি/মেহেরপুর/৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬/মহাসিন আলী/রুহুল/ এএন
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন