ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

যেখানের আশ্রয়কেন্দ্রগুলো ভরসাহীন

মাওলা সুজন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:২৪, ১৪ নভেম্বর ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
যেখানের আশ্রয়কেন্দ্রগুলো ভরসাহীন

নোয়াখালীর একটি আশ্রয় কেন্দ্র

মাওলা সুজন, নোয়াখালী : ঘূর্ণিঝড় ও বন্যা-জলোচ্ছ্বাসের সময় উপকূলের মানুষের জীবনরক্ষায় অন্যতম ভরসা সাইক্লোন শেল্টার বা আশ্রয়কেন্দ্র। অথচ নোয়াখালীর চরাঞ্চলের উপকূলীয় এলাকায় রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির আশ্রয়কেন্দ্রগুলোর অধিকাংশই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। মূলত সংস্কারের অভাবেই আশ্রয়কেন্দ্রগুলো বেহাল। এতে বড় দুর্যোগে এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নেওয়া আরো বেশি ঝুঁকির কারণ হয়ে উঠতে পারে।

 

রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি নোয়াখালী ইউনিটের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বর প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছাসে নোয়াখালীর উপকূলীয় অঞ্চলের অর্ধলক্ষাধিক মানুষ প্রাণ হারায়। মারা পড়ে লক্ষাধিক গরু, মহিষ, ছাগল, হাঁস-মুরগি ও পাখ-পাখালি। এমন প্রাণহানি থেকে উপকূলকে রক্ষা করতে ১৯৮৬ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে জেলার উপকূলীয় নদী-তীরবর্তী উপজেলা হাতিয়া, সুবর্ণচর ও কোম্পানীগঞ্জে ৪০টি আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়। রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির উদ্যোগে নির্মিত আশ্রয়কেন্দ্র্রগুলোর প্রত্যেকটি ৪০ ফুট উচ্চতার। নিচের ১০ ফুট খালি রেখে এগুলো নির্মাণ করা হয়েছে।

 

সূত্র জানায়, ৪০টি আশ্রয়কেন্দ্রের মধ্যে কোম্পানীগঞ্জের চরফকিরা ইউনিয়নের চর কচ্চপিয়া শেল্টারটি সাত-আট বছর আগে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এ ছাড়া সুবর্ণচর ও হাতিয়ার আটটি আশ্রয়কেন্দ্র অতিঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় সেগুলো ভেঙে ফেলা হয়েছে। বর্তমানে কোম্পানীগঞ্জের চর ল্যাংটা শেল্টারটি নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার পথে। এটিসহ মোট তিনটি আশ্রয়কেন্দ্র ভেঙে ফেলার জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। এ তিনটি ভেঙে ফেলা হলে রেড ক্রিসেন্টের আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা দাঁড়াবে ২৮টি।

 

সূত্র আরো জানায়, আশ্রয়কেন্দ্রগুলো দেখাশোনার জন্য স্থানীয় ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করা হলেও এগুলো সংস্কারের কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। নির্মাণের পর থেকে কেন্দ্রগুলো একই অবস্থায় পড়ে আছে। কোনো কোনোটি নির্মাণের ৩০ বছর পেরিয়ে গেলেও সংস্কারের জন্য কোনো বাজেট নেই।

 

কোম্পানীগঞ্জ, সুবর্ণচর ও হাতিয়া উপজেলায় দেখা যায়, সব আশ্রয়কেন্দ্রের দেয়ালের পলেস্তারা খসে পড়ছে। পিলারগুলোর পলেস্তারা খসে পড়ে রড দেখা যাচ্ছে। বৃষ্টির সময় ছাদ চুইয়ে পানি পড়ায় সিলিং ড্যাম হয়ে গেছে। কোম্পানীগঞ্জের চর ল্যাংটা আশ্রয়কেন্দ্রটি একদিকে ঝুঁকিপূর্ণ, অন্যদিকে নদী মাত্র কয়েক গজ দূরে। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই এটি নদীগর্ভে চলে যাবে বলে আশঙ্কা স্থানীয়দের। এ উপজেলার চরকলমী আশ্রয়কেন্দ্রটি ভাঙাচোরা। সুবর্ণচরের পশ্চিম চরবাটা আশ্রয়কেন্দ্রের অবস্থাও প্রায় একই।

 

কোম্পানীগঞ্জের চরকলমী এলাকার বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন (৬০) জানান, চারবার নদীভাঙনের শিকার হয়েছেন তিনি। কলমীতে এসে সরকারি খাসজমিতে বসবাস শুরু করলে প্রভাবশালীরা সেখান থেকে তুলে দিয়েছে। বর্তমানে ঝুপড়ি ঘর তুলে বসবাস করছেন। সামান্য ঝড় হলেই হেলে পড়ে তার ঘর। কিন্তু ঝড়-বৃষ্টি বা বড় ধরনের ঘূর্ণিঝড় হলেও তিনি আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে চান না। বেশি মানুষ আশ্রয় নিতে গেলে সেটিও ভেঙে যাবে বলে মনে করেন তিনি।

 

রেড ক্রিসেন্টের শেল্টার ব্যবস্থা কমিটির একাধিক ব্যক্তি জানান, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির যেসব আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে, সেগুলোও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এরই মধ্যে ১০টির বেশি ভেঙে ফেলা হয়েছে। বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দিলে এ কেন্দ্রগুলোয় দুর্গতদের আশ্রয় দেওয়া কঠিন হবে। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো ভেঙে ফেলে নতুন করে আধুনিক আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের দাবিও জানান তারা।

 

রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির অধিকাংশ আশ্রয়কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার কথা স্বীকার করেন সোসাইটির নোয়াখালী ইউনিট কার্যনির্বাহী কমিটির সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট এবিএম জাকারিয়া। তিনি বলেন, ‘ঝুঁকিপূর্ণ শেল্টারগুলোর কয়েকটি ভেঙে ফেলা হয়েছে। এ ছাড়া কয়েকটি ভাঙার প্রক্রিয়া চলছে।’ নতুন করে কোনো আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করার পরিকল্পনা নেই বলে জানান তিনি।

 



রাইজিংবিডি/নোয়াখালী/১৪ নভেম্বর ২০১৬/সুজন/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়