ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

শহীদজননী জাহানারা ইমামের ২২তম মৃত্যুবার্ষিকী

শাহ মতিন টিপু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:৫৩, ২৬ জুন ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
শহীদজননী জাহানারা ইমামের ২২তম মৃত্যুবার্ষিকী

শহীদজননী জাহানারা ইমাম

শাহ মতিন টিপু : শহীদজননী জাহানারা ইমামের ২২তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি দূরারোগ্য ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ১৯৯৪-এর ২৬ জুন মৃত্যুবরণ করেন। তার নেতৃত্বেই চব্বিশ বছর আগে ’৭১-এর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং মৌলবাদী-সাম্প্রদায়িক রাজনীতি নিষিদ্ধকরণের দাবিতে নাগরিক আন্দোলন সূচিত হয়েছিল।

তিনি ১৯৯২ সালের ১৯ জানুয়ারি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সব রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক-পেশাজীবী, ছাত্র-নারী-মুক্তিযোদ্ধা সংগঠনের সমন্বয়ে গঠন করেন ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল জাতীয় সমন্বয় কমিটি।’ এই কমিটির উদ্যোগেই ১৯৯২ সালের ২৬ মার্চ ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত গণ-আদালতে গোলাম আযমের প্রতীকী বিচার হয়।

মহান গৌরবময় স্বাধীনতা যুদ্ধে তার ছেলে শাফী ইমাম রুমী শহীদ হন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি স্বামী শরীফ ইমামকেও হারান। ৭১ সালে স্বামী আর সন্তান হারানো জননী অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেন স্বাধীনতা উত্তর এদেশের মুক্তিকামী মানুষের। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবীতে এই শহীদ জননীকে রাস্তায় নামতে হয়েছিলে। ততদিনে তার সারা শরীরে দুরারোগ্য ক্যান্সার বাসা বেঁধেছে। তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীদের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে যায়। একদিকে রাষ্ট্রপক্ষ তাদের রাজনৈতিক বান্ধব দলের মানুষরূপী পশুদের বাঁচানোর জন্য মরিয়া, অন্যদিকে রাস্ট্রপক্ষের মদদপুষ্ট হয়ে সরাসরি আক্রমন করে বসে ৭১ সালের হায়েনাদের দল। জাহানারা ইমামের বিরুদ্ধে মামলা হয় রাষ্ট্রদ্রোহীতার। অবশেষে, রাষ্ট্রদ্রোহীতার মামলা মাথায় নিয়েই জাহানারা ইমাম ২৬ জুন ১৯৯৪ সালে দেশের বাইরে মিশিগানে ইন্তেকাল করেন।

জাহানারা ইমাম, মুক্তিযুদ্ধ. শহীদ জননী জাহানারা ইমামের লেখা ‘একাত্তরের দিনগুলি’ বাংলা সাহিত্যে মুক্তিযুদ্ধের বিষয়ক অনন্য সংযোজন। একাত্তরের দিনগুলি বাংলাদেশী কথাসাহিত্যিক জাহানারা ইমাম রচিত মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক গ্রন্থ। বইটি ব্যক্তিগত দিনলিপি আকারে লেখা, যার শুরু ১৯৭১ সালের ১ মার্চ এবং সমাপ্তি সেই বছরের ১৭ ডিসেম্বর। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ঢাকা শহরের অবস্থা ও গেরিলা তৎপরতার বাস্তব চিত্র এতে উঠে এসেছে।

তিনি‘একাত্তরের দিনগুলি’ রচনা করে পৌঁছে যান পাঠকপ্রিয়তার শীর্ষে। তার রচনার ও অনুবাদের মধ্যে রয়েছে- অনুবাদ : তেপান্তরের ছোট্ট শহর, নদীর তীরে ফুলের মেলা, সাতটি তারার ঝিকিমিকি, নগরী, ডালাস, অব ব্লাড এন্ড ফায়ার। উপন্যাস ও অন্যান্য : গজকচ্ছপ, ভেতর আগুন, নাটকের অবসানে, দুই মেরু, নিঃসঙ্গ পাইন, নয় এ মধুর খেলা, মূল ধারায় চলেছি। স্মৃতিকথা : অন্য জীবন,একাত্তরের দিনগুলি, প্রবাসের দিনলিপি। জীবনী গ্রন্থ : বীরশ্রেষ্ঠ। ছোটগল্প¬ : জীবন মৃত্যু,একাত্তরের দিনগুলি-র কিশোর সংস্করণ- বিদায় দে মা ঘুরে আসি, চিরায়ত সাহিত্য। আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ :‘ক্যান্সারের সাথে বসবাস’।

দেশের বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় নানা কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে সর্বজন শ্রদ্ধেয় জননী সাহসিকা জাহানারা ইমামকে স্মরণ করবে আজ।

শহীদ জননী জাহানারা ইমামের জন্ম ১৯২৯ সালের ৩ মে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলায়। তিনি ছিলেন সুশিক্ষিত। ৪২ সালে এসএসসি, ৪৪ সালে রংপুর কারমাইকেল কলেজ থেকে আইএ পাশ করেন। ১৯৪৫ সালে ভর্তি হন কলকাতার লেডি ব্রেবোর্ন কলেজে। এরপর ১৯৬০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএড শেষ করেন। ১৯৬৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সার্টিফিকেট ইন এডুকেশন ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৬৫ সালে আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ করেন।

তার কর্মজীবনও ছিল বর্ণাঢ্য। শিক্ষক হিসাবে তার কর্মময় জীবনের প্রথম কাল কাটে ময়মনসিংহ শহরে। সেখানে বিদ্যাময়ী বালিকা বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসাবে ১৯৪৮ থেকে ১৯৪৯ সাল পর্যন্ত তিনি কর্মরত ছিলেন। এরপর তিনি ঢাকায় চলে আসেন। ঢাকার সিদ্ধেশ্বরী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (১৯৫২-১৯৬০), বুলবুল একাডেমি কিন্ডারগার্টেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক (১৯৬২-১৯৬৬)এবং ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজের প্রভাষক (১৯৬৬‌-১৯৬৮)হিসাবে তার কর্মজীবন অতিবাহিত হয়। তিনি কিছুদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটেও খন্ডকালীন শিক্ষক হিসাবে কাজ করেন। ১৯৯১ সালে শহীদ জননী জাহানারা ইমাম বাংলা একাডেমী পুরস্কার পান। এছাড়াও তিনি পেয়েছেন অসংখ্য পুরস্কার।


রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৬ জুন ২০১৬/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়