ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

শাহজালাল বিমানবন্দর উন্নয়নের অর্থায়ন নিয়ে দোটানায় মন্ত্রণালয়

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:০০, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
শাহজালাল বিমানবন্দর উন্নয়নের অর্থায়ন নিয়ে দোটানায় মন্ত্রণালয়

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর

কেএমএ হাসনাত : প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল ভবন নির্মাণ ও অন্যান্য অবকাঠামো উন্নয়নের পরিকল্পনা নিয়েছে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। প্রকল্পে জাপানের উন্নয়ন সংস্থা জাইকা এবং চীন অর্থায়নের আগ্রহ প্রকাশ করায় প্রকল্পটির অর্থায়ন নিয়ে দোটানায় পড়েছে তারা। এ অবস্থায় বিমানবন্দরের উন্নয়নে গৃহীত কর্মসূচি দ্রুত সম্পন্ন করতে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের পরামর্শ চেয়েছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন।

 

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি দেশের সঙ্গে আন্তর্জাতিক যোগাযোগের মূল মাধ্যম হিসেবে কাজ করছে। বর্তমানে প্রতিবছর বিমানবন্দর টার্মিনাল দিয়ে প্রায় ৭০ লাখ যাত্রী আসা-যাওয়া করছে। আর দিন দিন এর সংখ্যা বাড়ছে। ধারণা করা হচ্ছে, ২০১৮ সালের মধ্যে এ সংখ্যা ৮০ লাখ ছাড়িয়ে যাবে। যা বর্তমান টার্মিনালের সক্ষমতার সর্বোচ্চ পর্যায়। এরপর অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা বিদ্যমান টার্মিনালের পক্ষে সম্ভব হবে না। এই প্রয়োজনীয়তার কথা মাথায় রেখে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল ভবন নির্মাণ ও অন্যান্য অবকাঠামো উন্নয়নের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

 

সূত্র জানায়, এরই মধ্যে প্রায় ৩৯ কোটি টাকা ব্যয়ে আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কোরিয়ার ইয়োসিন ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন, সিঙ্গাপুরভিত্তিক সিপিজি কনসালট্যান্ট প্রাইভেট লিমিটেড এবং বাংলাদেশের ডেভেলপমেন্ট ডিজাইন কনসালট্যান্ট লিমিটেড যৌথভাবে প্রকল্পের ইএলএ, সম্ভাব্যতা যাচাই, মাস্টারপ্ল্যানিং, বেসিক ডিজাইন, কস্ট এস্টিমেট প্রণয়নের কাজ সম্পন্ন করেছে। সে আলোকে প্রকল্পটির উন্নয়ন প্রকল্প ছক (ডিপিপি) মোট ১৩ হাজার ৪৬৫ কোটি ১৭ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে।

 

সূত্র জানায়, প্রকল্পের বৈদেশিক সহায়তা সংগ্রহের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ২০১৪ সালের ৯ জুন পরিকল্পনা কমিশনে প্রস্তাব পাঠানো হয়। ওই প্রস্তাবের আলোকে একই বছর ৯ জুলাই প্রকল্পটি গ্রহণের বিষয়ে নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয় এবং বৈদেশিক অর্থায়নের জন্য অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে (ইআরডি) প্রস্তাব পাঠানো হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৪ সালের ২ ডিসেম্বর বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় থেকে অর্থায়নের বিষয়ে সর্বশেষ অগ্রগতি জানানোর জন্য ইআরডিকে চিঠি দেওয়া হয়। ওই চিঠির উত্তরে ৯ ডিসেম্বর ইআরডি জানায়, প্রকল্পে অর্থায়নে জাইকাকে অনুরোধ করা হয়, কিন্তু কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

 

সূত্র জানায়, এর মধ্যে প্রকল্পে জি টু জি এবং বিল্ড ওন ট্রান্সফার (বিওটি) অর্থায়নের বিষয়ে চীন ও মালয়েশিয়ার বেশ কটি প্রতিষ্ঠান আগ্রহ প্রকাশ করে তাদের প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। প্রকল্পটি জরুরি বিধায় প্রস্তাবগুলোর জন্য মন্ত্রণালয় থেকে একটি তুলনামূলক যাচাই-বাছাই কমিটি গঠন করা হয়। প্রস্তাবগুলো ওই কমিটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে। বর্তমানে জি টু জি অর্থায়নে সামর্থ্যসম্পন্ন চীনা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এমওইউ স্বাক্ষরের পর্যায়ে রয়েছে। পরবর্তী সময়ে সার্বিক বিষয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অবহিত করা হলে তিনি জি টু জি অর্থায়নে চীনা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে দ্রুততর সময়ে আলোচ্য প্রকল্পের কাজ সম্পাদনের মৌখিক নির্দেশনা দেন। বর্তমানে জাইকা আলোচ্য প্রকল্পে অর্থায়নের বিষয়ে আগ্রহ দেখিয়েছে বলে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

 

সূত্র জানায়, এরই মধ্যে দেশে বিভিন্ন বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্পে চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোর অতিমাত্রায় আগ্রহ থেকে মন্ত্রণালয়গুলোকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। এ ছাড়া জাইকা নতুন করে আগ্রহ প্রকাশ করায় প্রকল্পে অর্থায়নের বিষয় নিয়ে নতুন করে জটিলতা দেখা দিয়েছে। কারণ, জাইকা যে সব প্রকল্পে অর্থায়ন করে সেসব প্রকল্পের কাজের গুণগত মান যেমন ভালো হয় একই সঙ্গে অর্থায়নের শর্তও অনেক সহজ থাকে। এ অবস্থায় অর্থমন্ত্রীর ওপর নির্ভর করছে প্রকল্পের অর্থায়ন কোন দেশের কাছ থেকে নেওয়া হবে।

 

সূত্র জানায়, প্রকল্পটির কাজ দ্রুত সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন করা অত্যন্ত জরুরি। বর্তমানে জি টু জি অর্থায়নে প্রকল্পের কাজ শুরু করলেও তা শেষ করতে আনুমানিক তিন থেকে চার বছর সময়ের প্রয়োজন হবে। অর্থমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে বলা হয়েছে, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের টার্মিনালের সক্ষমতা অতিক্রম হবে। এ অবস্থায় কাজটি দ্রুত সময়ে সম্পাদনের জন্য অর্থমন্ত্রীর পরামর্শ চাওয়া হয়েছে।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬/হাসনাত/শাহনেওয়াজ/ এএন

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়