ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

প্রতিমায় রং তুলির শেষ আচর আঁকতে ব্যস্ত শিল্পীরা

আলী আকবর টুটুল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:০৭, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
প্রতিমায় রং তুলির শেষ আচর আঁকতে ব্যস্ত শিল্পীরা

কাজ সম্পন্ন হওয়া প্রতিমার একটি চিত্র

আলী আকবর টুটুল, বাগেরহাট : বাগেরহাটে শারদীয় দুর্গাপূজায় এ বছরের চমক ৬০১ প্রতিমার বৃহৎ পূজামণ্ডপ। বাগেরহাট সদরে খানপুর ইউনিয়নের হাকিমপুর গ্রামের শিকদারবাড়ি মন্দিরের পূজামণ্ডপে এই আয়োজন করা হয়েছে।

 

পাঁচ মাস ধরে মহাধূমধামে চলেছে প্রতিমা গড়ার কাজ, এখন চলছে প্রতিমা শিল্পীর তুলির শেষ আঁচড়। দুর্গাপূজার অবিচ্ছেদ্য প্রতিমাগুলোর সঙ্গে বাড়তি এসব প্রতিমা স্থাপন করে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে রামায়ণ ও মহাভারতের বিভিন্ন কাহিনী ও দেবণ্ডদেবীদের প্রতিরূপ, থাকছে আলোকসজ্জা।

 

আয়োজকরা বলছেন, প্রতিমার সংখ্যা ও আড়ম্বতার দিক থেকে এ বছর এটাই হবে উপমহাদেশের সব থেকে বড় মণ্ডপ। মণ্ডপের নেতৃবৃন্দ আশা করছেন, তাদের মণ্ডপে ভক্ত দর্শনার্থীদের ভিড় থাকবে নজরকাড়া। জেলার বিভিন্ন স্থান, অন্য জেলা এমনকি পশ্চিমবঙ্গ থেকেও দর্শনার্থীরা আসবেন তাদের মণ্ডপ দর্শনে ও পূজা দিতে।

 

 

বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ্বাস জানান, জেলার নয়টি উপজেলায় এ বছর মোট ৫৮৩টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে স্থানীয় প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছে।

 

এদিকে এবার সব থেকে বড় আকর্ষণ হলো কৈলাশ পর্বতের কাহিনীর কিছু বিষয় তুলে ধরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থী দিব্যতনু দাসের নেতৃত্বে ১০ জন চারুশিল্পী পুকুরের মাঝখানে ৪০ ফুট উঁচু প্রতিমা স্থাপন করেছেন। যেখানে সবার উপরে থাকবে মহাদেব। এরপর রাম লক্ষণ, সীতা ও হনুমান। মহাদেব ও রামের হাত আর্শিবাদ করা অবস্থায় থাকবে।

 

শিকদারবাড়ি দূর্গাপুজা উদযাপন কমিটির সভাপতি দুলাল শিকদার বলেন, ‘ব্যাক্তিগত উদ্যোগের শুরু থেকেই এলাকার মানুষের উৎসাহ এবং সহযোগিতা পেয়ে আসছি। তাদের পরামর্শ ও উপদেশ আমার অনেক কাজে লাগছে। ২০১০ সালে ৩০১টি প্রতিমা নিয়ে এই মন্দিরে দুর্গাপূজা শুরু হয়। এ বছর আমরা ৬০১টি প্রতিমা নিয়ে উপমহাদেশের সব থেকে বড় দুর্গাপূজা আয়োজন করেছি। এর আগে গত বছর ৪৫১টি প্রতিমা নিয়ে তৈরি হয় মণ্ডপ। আশা করি এখানে আসলে দর্শনার্থীদের মন ভরে যাবে।’

 

 

তিনি আরও বলেন, ‘দেড় বিঘা জমির প্রাচীর ঘেরা এই মণ্ডপে ভবিষ্যতে ৪৫ ফুট উচ্চতাসম্পন্ন সার্বজনীন মন্দিরে রুপান্তরের পরিকল্পনা রয়েছে। আশা করছি অল্প সময়ের মধ্যে মন্দির বাস্তবায়নের কাজ শুরু করতে পারব।’

 

শিকদারবাড়ি পূজামণ্ডপে চৌদ্দজন সহকারী নিয়ে পাঁচ মাস ধরে প্রতিমা তৈরি করেছেন খুলনার কয়রা উপজেলার হাতিয়ার ডাঙ্গা গ্রামের কারিগর বাবু বিজয় কৃষ্ণ বাছাড়। তিনি বলেন, ‘গত বৈশাখ মাস থেকে ১৪ জন শ্রমিক নিয়ে একটানা ৬০১টি প্রতিমা নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। আর মাত্র কয়েকদিন পরেই শারদীয় দুর্গোৎসব শুরু হবে। সেই বিষয়টি মাথায় রেখে দিনণ্ডরাত রং তুলির কাজে ব্যস্ত রয়েছি। এ ছাড়া আমরা হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য অন্যান্য আনুসাঙ্গিক কাজগুলো চালিয়ে যাচ্ছি।’

 

তিনি আরো বলেন, ‘আমার প্রতিমা তৈরির কাজের ২৫ বছরের মধ্যে এবারই প্রথম একটি মণ্ডপে এত প্রতিমা তৈরি করতে পেরে আমি নিজেকে ধন্য মনে করছি।’

 

 

আয়োজকদের অন্যতম ব্যবসায়ী লিটন সিকদার বলেন, ‘বিভিন্ন প্রতিমার পাশাপাশি মণ্ডপের বিশেষ আকর্ষণ হয়ে উঠবে পুকুরের মাঝখানে ৪০ ফুট উচ্চতায় দণ্ডায়নরত শিব ও নিচে থাকা রাম প্রতিমা।’

 

বাগেরহাট জেলার পুলিশ সুপার পঙ্কজ চন্দ্র রায় জানান, সবচেয়ে বড় পূজামণ্ডপ শিকদার বাড়িসহ জেলার ৫৮৩টি মণ্ডপে প্রতিমা তৈরির কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। প্রতিমা নির্মাণকে ঘিরে বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। পুলিশের পাশাপাশি জনপ্রতিনিধিরাও সহায়তা করছেন।

 

 

বাগেরহাট জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি অমিত রায় বলেন, ‘বাগেরহাটে জাকজমকপূর্ণ পরিবেশে শারদীয় দুর্গোৎসব উদ্যাপিত হবে। এ বছর জেলার বেশ কয়েকটি মন্দিরেই শতাধিক প্রতিমার মণ্ডপ তৈরি হয়েছে। তবে সব থেকে বড় শিকদার বাড়ির পূজামণ্ডপ।’

 

 

রাইজিংবিডি/ বাগেরহাট/২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬/টুটুল/টিপু/রুহুল

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়