ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

শিল্পোন্নত দেশগুলোকেই এগিয়ে আসতে হবে

এনএ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:১৯, ২১ নভেম্বর ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
শিল্পোন্নত দেশগুলোকেই এগিয়ে আসতে হবে

মরক্কোর মারাকাশে নানা আলোচনা, তর্ক-বিতর্কের পর কিছু প্রতিশ্রুতির মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলন। এটি ছিল জাতিসংঘের ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশনের অন্তর্গত কার্যক্রম হিসেবে কনফারেন্স অব পার্টিজের (কপ) ২২তম অধিবেশন।

 

এতে ১৯৬ দেশের প্রতিনিধি, যাদের মধ্যে ৮০টি দেশের সরকার অথবা রাষ্ট্রপ্রধান উপস্থিত ছিলেন । সম্মেলনে জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন সংস্থার সমন্বয়কারী এবং মূল উদ্যোক্তার ভূমিকা সম্পর্কে ঘোষণা পুনর্ব্যক্ত করেছেন। কিন্তু এ সম্মেলনের পর্দা নেমেছে শুধু কিছু প্রতিশ্রুতির মধ্য দিয়ে যা হতাশাজনক।

 

আমাদের এই বাসযোগ্য পৃথিবীর অস্তিত্বের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন। আর এই বিপদ ডেকে এনেছে মানুষ নিজেই। বিভিন্ন দেশ শিল্প কারখানা, বিদ্যুৎ উত্পাদনকারী প্ল্যান্ট এবং জীবাশ্ব জ্বালানি চালিত যানবাহনের ব্যবহার ক্রমশ বাড়িয়ে চলেছে। এতে কার্বন গ্যাস উদ্গিরণের মাত্রা বেড়ে চলেছে। যে কারণে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে মেরু অঞ্চলে বরফ গলছে এবং দিনে দিনে তা বাড়ছে।

 

জলবায়ুর পরিবর্তনে কোথাও অতিবৃষ্টি আবার কোথাও অনাবৃষ্টির ঘটনা ঘটছে। বৃদ্ধি পেয়েছে সমুদ্রের উচ্চতা। এতে সমুদ্র তীরবর্তী অনেক দেশের নিম্নাঞ্চল পানির নিচে তলিয়ে গেছে। বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলবর্তী এলাকায় অনেক জমি জলমগ্ন হয়েছে। এভাবে সমুদ্রের উচ্চতা বাড়তে থাকলে আরো বেশি এলাকা জলমগ্ন হয়ে পরিবেশের বিপর্যয় ঘটাবে।

 

এবার মারাকেশের সম্মেলনে বিশেষ করে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার এবং মোকাবিলার জন্য আর্থিক সাহায্য প্রদানের বিষয় আলোচ্য সূচির অন্তর্ভুক্ত ছিল। অনুন্নত দেশগুলোর ক্ষতিপূরণে প্রতিবছরে একশ বিলিয়ন মার্কিন ডলার দেওয়া হবে। বৈশ্বিক দুর্যোগ মোকাবেলায় ২০০৯ সালে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত পঞ্চদশ শীর্ষ সম্মেলন  ধনী দেশগুলো এ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।  কিন্তু তা কবে এবং কোন ভিত্তিতে দেওয়া হবে সে সম্বন্ধে চূড়ান্তভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। এবার কপ-২২ সম্মেলনেও এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

 

মারাকাশে এবারের সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিরোধে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এখন সিদ্ধান্ত বাস্তবে রূপ দেওয়ার সময় এসেছে। গত বছর প্যারিসে ঐতিহাসিক চুক্তি সম্পাদিত হবার পর এবারের জলবায়ু সম্মেলনের বিশেষ তাত্পর্যের ওপর আলোকপাত করেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন , প্যারিস চুক্তি জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিরোধের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি স্থাপন করেছে যার ওপর অর্থবহ ও কার্যকর আন্তর্জাতিক সহযোগিতার কার্যক্রম শুরু করা যেতে পারে।

 

জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য বেশিরভাগ দায়ী শিল্পোন্নত দেশগুলো। কিন্তু এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাংলাদেশসহ বিশ্বের ছোট দেশগুলো।  সম্মেলনে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলায় নিজ উদ্যোগে ৪০ কোটি ডলারের একটি তহবিল গড়ে তুলেছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বাংলাদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কৌশল ও কর্মসূচির উল্লেখ করেন। অথচ দুর্যোগ মোকাবেলায় বাংলাদেশ যে ভূমিকা নিয়েছে, উন্নত বিশ্ব তার ধারে কাছে নেই।

 

বাস্তবতা হচ্ছে, জলবায়ু পরিবর্তনের বিপর্যয় মোকাবেলায় আর্থিক সহায়তা, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ও সক্ষমতা উন্নয়নে শিল্পোন্নত দেশগুলোর যথাযথভাবে এগিয়ে আসা প্রয়োজন। শুধু প্রতিশ্রুতির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে কাজের কাজ কিছুই হবে না,  প্রয়োজন এসবের বাস্তবায়ন।

 

 

রাইজিংবিডি/২১ নভেম্বর ২০১৬/এনএ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়