ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

ম্যাড়মেড়ে ম্যাচে খুলনাকে হারিয়ে ফাইনালে রাজশাহী

পরাগ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৫৩, ৭ ডিসেম্বর ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ম্যাড়মেড়ে ম্যাচে খুলনাকে হারিয়ে ফাইনালে রাজশাহী

খুলনার উইকেট পতনের পর রাজশাহীর খেলোয়াড়দের সেই ট্রেডমার্ক ‘সেলফি উদযাপন’

আবু হোসেন পরাগ, মিরপুর থেকে : ম্যাচটার অফিশিয়াল নাম দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার হলেও আসলে এটি ছিল সেমিফাইনাল। জিতলে ফাইনালে হারলে টুর্নামেন্ট শেষ- এমন সমীকরণের সামনে দাঁড়িয়ে মুখোমুখি হয়েছিল খুলনা টাইটান্স ও রাজশাহী কিংস। কিন্তু ম্যাচটা যে সেমিফাইনাল, সেটি অন্তত মিরপুরের গ্যালারির দিকে তাকিয়ে বোঝার উপায় ছিল না!

 

এবারের বিপিএলে গ্যালারিতে দর্শক-খরা আরেকবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখাল। ম্যাচ শুরুর দিকে তো গ্যালারির দর্শক হাতে গোনা যাচ্ছিল। পরে দর্শক কিছুটা বাড়লেও ম্যাচে ছিল না তেমন কোনো উত্তাপ। খুলনার উইকেট পতনের পর রাজশাহীর খেলোয়াড়দের ট্রেডমার্ক হয়ে যাওয়া ‘সেলফি উদযাপন’ই যা একটু দর্শকদের বিনোদন দিতে পারল।

 

তাছাড়া অনেকটাই ম্যাড়মেড়ে ম্যাচে খুলনার করা ১২৫ রান ৩ উইকেট হারিয়ে ৪ বল বাকি থাকতেই টপকে গেল রাজশাহী। ৭ উইকেটে ম্যাচ জিতে ড্যারেন স্যামির দল উঠে গেল ফাইনালে। যেখানে আগে থেকেই অপেক্ষা করছে ঢাকা ডায়নামাইটস। আগামী শুক্রবার শিরোপা-যুদ্ধে মুখোমুখি হবে এই দু’দল।

 

প্রথম কোয়ালিফায়ারে ঢাকাকে ১৪০ রানে বেঁধে ফেলেও ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় ৮৬ রানেই অলআউট হয়ে ৫৪ রানে ম্যাচ হেরেছিল খুলনা। বুধবার রাজশাহীর বিপক্ষেও বাজে ব্যাটিংয়ের প্রদর্শনী মেলে ধরল খুলনার ব্যাটসম্যানরা। দ্বিতীয় ওভারেই রানআউট হয়ে উইকেট বিলিয়ে দিয়ে এলেন দুই ওপেনার হাসানুজ্জামান ও আব্দুল মজিদ। শুরুর সেই ধাক্কা আর সামলে উঠতে পারল না খুলনা। তারা ২০ ওভারে করতে পারল মাত্র ১২৫।

 

১২৬ রান তাড়ায় রাজশাহীর শুরুটা যদিও ভালো হয়নি। দ্বিতীয় ওভারেই কেভন কুপারের বলে প্রথম স্লিপে আব্দুল মজিদকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন মুমিনুল হক। দ্বিতীয় উইকেটে দলকে ৩৪ পর্যন্ত টেনে নিয়েছিলেন নুরুল হাসান ও আফিফ হোসেন। পঞ্চম ওভারে নুরুল মোশাররফ হোসেনের বলে শর্ট মিডউইকেটে হাসানুজ্জামানকে ক্যাচ দিলে ভাঙে ২৯ রানের এ জুটি।

 

দ্রুত রান তোলার তাড়া ছিল না, তৃতীয় উইকেটে সাব্বির রহমান ও আফিফ মিলে তাই দলকে ধীরে ধীরে এগিয়ে নিতে থাকেন। তবে দলীয় ৬৭ রানে মাহমুদউল্লাহর বলে শট খেলতে গিয়ে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে পড়েন আফিফ (২৭ বলে ২৬)। জয়ের জন্য তখন রাজশাহীর চাই ৫১ বলে ৫৯।

 

আফিফ ফিরলেও চতুর্থ উইকেটে জেমস ফ্রাঙ্কলিনের সঙ্গে ৬২ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে দলকে জিতিয়ে তবেই মাঠ ছাড়েন সাব্বির। ৫২ বলে ২ চার ও এক ছক্কায় সাব্বির অপরাজিত ছিলেন ৪৩ রানে। ফ্রাঙ্কলিন ২৪ বলে ৩০ রানে অপরাজিত থাকেন। শেষ ওভারের দ্বিতীয় বলে মাহমুদউল্লাহকে লং অনের ওপর দিয়ে বিশাল এক ছক্কা হাঁকিয়ে দলের জয়সূচক রানও নেন ফ্রাঙ্কলিন।

 

এর আগে টস জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন খুলনার অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। কিন্তু ব্যাটিংয়ের শুরুটা মোটেই ভালো হয়নি। তৃতীয় ওভারে তিন বলে মধ্যে রানআউটে কাটা পড়েন দুই ওপেনার হাসানুজ্জামান ও আব্দুল মজিদ। দুজনই উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসেন।

 

কেসরিক উইলিয়ামসের দ্বিতীয় বল কভারে ঠেলে দিয়ে সিঙ্গেল নিতে চেয়েছিলেন মজিদ। অন স্ট্রাইক প্রান্তে থাকা হাসানুজ্জামানও দৌড় দেন। কিন্তু ফিরে যান মজিদ, হাসানুজ্জামান আর ফেরেননি, দুই ব্যাটসম্যানই এক প্রান্তে। ফিল্ডার থ্রোটাও করেছিলেন ওই প্রান্তেই, তবে উইকেটকিপার নুরুল হাসান দৌড়ে এসে নন স্ট্রাইক প্রান্তের স্টাম্প ভেঙে দেন, হাসানুজ্জামান রানআউট।

 

তৃতীয় বলটি শর্ট মিড উইকেটে ঠেলে দিয়ে আবার সিঙ্গেল নিতে দৌড় দিয়েছিলেন মজিদ, তাতে সাড়া দেননি নিকোলাস পুরান। মজিদ ফেরার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু ততক্ষণে সরাসরি থ্রোয়ে স্টাম্প ভেঙে দেন মেহেদী হাসান মিরাজ, মজিদও রানআউট। পরের ওভারে ফরহাদ রেজার বলে বাজে শট খেলে মিড অনে নাজমুল ইসলামকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন শুভাগত হোমও। খুলনার স্কোর তখন ৩ উইকেটে ১৭।

 

চতুর্থ উইকেটে দলকে ৫৪ পর্যন্ত টেনে নিয়েছিলেন পুরান ও মাহমুদউল্লাহ। অফ স্পিনার আফিফের বলে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে লং অফে রেজান হাতে ক্যাচ দেন পুরান। ১০ বলে ২টি করে চার ও ছক্কায় ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যান করেন ২২ রান। নতুন ব্যাটসম্যান বেনি হাওয়েলও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। ১৩ বলে ১২ রান করে সামিত প্যাটেলের বলে স্যামিকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। খুলনার স্কোর তখন ৫ উইকেটে ৭৪।

 

প্যাটেল নিজের পরের ওভারে এসে খুলনাকে সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা দেন। এই ওভারে খুলনার মূল ভরসা মাহমুদউল্লাহকে সাজঘরের পথ দেখানোর পর কুপারকেও বিদায় করেন তিনি। তার প্রথম বলে সুইপ করতে গিয়ে টপ এজ হয়ে কভার পয়েন্টে নাজমুলের হাতে ধরা পড়েন মাহমুদউল্লাহ (২৮ বলে ২২)। পঞ্চম বলে নুরুলের গ্লাভসবন্দি হয়ে ফেরেন কুপার। খুলনার স্কোর তখন ৭ উইকেটে ৮৭।

 

এরপর দ্রুত আরো ২ উইকেট হারায় খুলনা। তাতে খুলনার স্কোর দাঁড়ায় ৯ উইকেটে ১০২। এরপর আরিফুল হকের ২৯ বলে অপরাজিত ৩২ (২ চার, ১ ছক্কা) রানের সুবাদে কোনোমতে ১২৫ করতে পারে খুলনা। যেটি সহজেই টপকে গিয়ে ফাইনালে উঠে গেল রাজশাহী। ৪ ওভারে ১৯ রানের বিনিময়ে ৩ উইকেট নিয়ে খুলনাকে কম রানে বেঁধে ফেলতে বড় ভূমিকা রেখেছিলেন স্যামিত প্যাটেল। ম্যাচসেরাও হয়েছেন তিনিই।

 

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

 

খুলনা টাইটান্স: ২০ ওভারে ১২৫/৯ (আরিফুল ৩২*, পুরান ২২, মাহমুদউল্লাহ ২২, হাওয়েল ১২; পাটেল ৩/১৯, স্যামি ১/৮, আফিফ ১/৯, উইলিয়ামস ১/১৮, রেজা ১/২৮)

 

রাজশাহী কিংস১৯.২ ওভারে ১২৯/৩ (সাব্বির ৪৩*, ফ্রাঙ্কলিন ৩০*, আফিফ ২৬, নুরুল ১৪; মাহমুদউল্লাহ ১/১০)

 

ফলরাজশাহী কিংস ৭ উইকেটে জয়ী।

 

ম্যান অব দ্য ম্যাচ: স্যামিত প্যাটেল।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৭ ডিসেম্বর ২০১৬/পরাগ/আমিনুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়