ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

শিশুশ্রম বন্ধে প্রয়োজন সরকারের সদিচ্ছা

মো. মনির হোসাইন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৪৭, ৩ আগস্ট ২০১৪   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
শিশুশ্রম বন্ধে প্রয়োজন সরকারের সদিচ্ছা

ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত শিশু (ফাইল ফটো)

মো. মনির হোসাইন : জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদ ও আমাদের দেশের শিশু আইন, ২০১৩-তে ১৮ বছরের নিচের বয়সি সবাইকে শিশু বলে অভিহিত করা হয়েছে। এই শিশুদের যেকোনো কাজে নিয়োজিত করাই হলো শিশুশ্রম, যা পৃথিবীর সব দেশে আইনত নিষিদ্ধ।

কিন্তু আমাদের দেশে শিশুশ্রমের ভয়াবহ চিত্র দেখলে বোঝার কোনো উপায় নেই যে আমাদের আইনেও শিশুশ্রমকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আবার অনেক সময় দেখা যায়, মালিকপক্ষ জানেই না, শিশুকে কোনো কাজে নিয়োজিত করার ব্যাপারে রয়েছে নানা বিধিনিষেধ। জানে না, শিশুদের ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োগদাতাদের জন্য দেশের আইনে রয়েছে শাস্তির বিধান। জানবেই বা কীভাবে? কারণ আমাদের সরকারকে শুধু আইন প্রণয়ন করতে দেখা যায়। কিন্তু আইন প্রয়োগের ভূমিকায় তো আর তাদের দেখা মেলে না।

আবার দেখা যায়, অনেক মালিক সচেতনভাবেই ‘শিশু শ্রমিক নেওয়া হয় না’- এমন ব্যানার টানিয়ে ভেতরে কাজে লাগাচ্ছেন কোমলমতি শিশুদের।

শিশু আইনে বলা রয়েছে, কোনো শিশুকে একান্ত প্রয়োজনে অভিভাবকের ইচ্ছায় রেজিস্টার্ড ডাক্তারের শারীরিক সক্ষমতার সার্টিফিকেটের ওপর ভিত্তি করে নির্দিষ্ট কিছু কাজে নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে এমন দৃষ্টান্ত খুঁজে পাওয়া দুরূহ। বরং ক্ষেত্রবিশেষে এসব শিশু-কিশোরকে জাহাজকাটা শিল্প থেকে শুরু করে ওয়েল্ডিং কারখানা, এসি, রেফ্রিজারেটর মেরামতের কারখানায় নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এ কাজগুলো অতিমাত্রায় ঝুঁকিপূর্ণ হলেও এ ব্যাপারে যেন মাথাব্যথা নেই কারো।

প্রচলিত শিশু আইন বলে, শিশুশ্রম নিষিদ্ধ এবং শিশুদের ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত ব্যক্তি দণ্ডিত হবেন- অর্থদণ্ডে এমনকি কারাদণ্ডেও। কিন্তু বাস্তবতা হলো, পরিবারে আর্থিক সচ্ছলতা আনতে বাংলাদেশের দরিদ্র পরিবারের অধিকাংশ শিশুই কোনো-না-কোনো কাজে নিয়োজিত। তবে হতাশাব্যঞ্জক ব্যাপার হলো, তাদের অধিকাংশই ঝুঁকিপূর্ণ কাজের সঙ্গে জড়িত, যা তাদের মানসিক ও শারীরিক বৃদ্ধির অন্তরায়ই নয়, কোনো কোনো ক্ষেত্রে মৃত্যুরও কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আমাদের দেশের একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী আর্থিক দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে শিশুদের ব্যবহার করছে এসব ঝুঁকিপূর্ণ কাজে। আবার অনেক সময় শ্রম অনুযায়ী পারিশ্রমিকও জোটে না এসব সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের।

দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক শিশু। আর এই শিশুদের শতকরা প্রায় ৪০ ভাগ বাস করে দারিদ্র্যসীমার নিচে। দেশে বর্তমানে মোট শিশুশ্রমিকের সংখ্যা কারোই জানা নেই। কয়েকটি বেসরকারি সংস্থার হিসেবমতে, দেশে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত শিশুশ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ৫০ লাখ। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সারা দেশে একটি শিশু মতামত জরিপ চালায় জাতিসংঘের নারী ও শিশুবিষয়ক তহবিল ইউনিসেফ। জরিপে অংশ নেওয়া অধিকাংশ শিশুর মতামত ছিল, ‘শিশুরা ভোটার নয় বলে রাজনৈতিক দলগুলো শিশুদের অধিকার আদায়ে সচেষ্ট নয়।’ শিশুশ্রম যখন প্রতিনিয়ত কেড়ে নিচ্ছে শিশু অধিকার আর সরকার যখন আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে সর্বদা নীরব ভূমিকায়, তখন জরিপে অংশ নেওয়া শিশুদের মতামত যে যুক্তিযুক্ত এবং গ্রহণযোগ্য তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই।

মূলত শ্রম আইনের দুর্বল প্রয়োগ ও আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে আমাদের দেশের শিশু-কিশোররা বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় সম্পৃক্ত। উন্নত বিশ্বে শিশুশ্রম বন্ধে কড়াকড়ি থাকলেও আমাদের দেশে এ আইন কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ। ফলে প্রতিবছর বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত শিশু-কিশোররা মৃত্যুমুখে পতিত হলেও মিলছে না কোনো প্রতিকার।

সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আমরাও দেখতে চাই, শিশুশ্রম বন্ধ হোক। আমাদের কোমলমতি শিশু-কিশোরদের শৈশব ও কৈশোরটা হোক উৎকণ্ঠা ও শঙ্কাহীন, যেখানে শিশুদের প্রাপ্য সব সুযোগ-সুবিধা সরকার পরিপূর্ণভাবে নিশ্চিত করবে। এ ব্যাপারে সরকারের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সবার সমন্বিত উদ্যোগও দরকার।

 লেখক : শিশু সাংবাদিক, হ্যালো ডট বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩ আগস্ট ২০১৪/কমল কর্মকার

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়