ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

শেকড়ের টানে বাড়ি ফেরার যুদ্ধ

শফিকুল ইসলাম লেনিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৩৭, ২৪ জুলাই ২০১৪   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
শেকড়ের টানে বাড়ি ফেরার যুদ্ধ

কমলাপুর স্টেশনে ঘরমুখো মানুষের ভিড় (ছবি : মেহেদী জামান)

শফিকুল ইসলাম লেনিন : আকাশছোঁয়া আনন্দ নিয়ে দরজায় কড়া নাড়ছে পবিত্র ঈদুল ফিতর। এক মাস সিয়াম সাধনার পর ঈদ পরম শুদ্ধতা ও পবিত্রতা নিয়ে বয়ে আনে অনাবিল আনন্দের বার্তা। সবাই চান এ আনন্দ প্রিয়জনের সঙ্গে উপযাপন করতে। তাই ঈদ উদযাপনে শেকড়ের টানে বাড়ি ফিরছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।

এবার ঈদুল ফিতরে অনেকেই টানা নয় দিন ছুটি কাটানোর সুযোগ পাচ্ছেন। ঈদুল ফিতরে তিন দিনের ছুটির আগে ও পরে সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় এমনটি হচ্ছে। তাই বাড়ি ফিরে প্রিয়জনদের সান্নিধ্যে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করার এ সুযোগ হাতছাড়া করতে নারাজ নগরবাসী।

কংক্রিটের শহর ঢাকায় বসবাসরত লোকজন অনেকদিন পর মিলিত হবেন গ্রামে থাকা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে। আর এ টানে বাড়ি ফেরার যুদ্ধ শুরু হয়েছে বৃহস্পতিবার থেকেই। লাখ লাখ মানুষ বাস, ট্রেন ও লঞ্চে বাড়ি ফেরা শুরু করেছেন।

প্রতিদিন রাজধানী থেকে সড়ক, নৌ ও রেলপথে বাড়ি ফিরবে গড়ে ১৫ লাখ লোক। তবে মূল চাপ থাকবে আগামী রবি ও সোমবার। সরকারি-বেসরকারি পরিবহন ছাড়া ব্যক্তিগত গাড়িতেও অনেকে বাড়ি যাবেন সেদিন। কমলাপুর থেকে বিভিন্ন পথে প্রতিদিন ঈদে ঘরমুখো হবেন প্রায় ৬০ হাজার যাত্রী। ঈদে বাড়ি ফেরার ক্ষেত্রে একই সময়ে সড়ক, রেল ও নৌপথে যাত্রী পরিবহনের চাপ পড়ে। এতে মহাসড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়।

কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে আসা বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মী তাহমিনা জেসমিন বলেন, ‘বাসে যেতে হলে মহাসড়কের যানজট, প্রচণ্ড ভিড় মোকাবিলা করতে হবে। সারারাত জেগে লাইনে দাঁড়িয়ে ভাগ্য ভালো থাকায় ট্রেনে টিকিট পেয়েছিলাম। তাই ট্রেনে বাড়ি যাচ্ছি। অনেক দিন পর দেখব কিছু প্রিয় মুখ। অনেক মধুর স্মৃতিবিজড়িত গ্রাম দেখার জন্য ব্যাকুল দুই চোখ। এ পরম প্রাপ্তির জন্য কিছু কষ্ট তো মেনে নিতেই হবে।’

এ প্রসঙ্গে কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার মো. খায়রুল বশির বলেন, ‘আজ বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে ট্রেনের ঈদ স্পেশ্যাল সার্ভিস। তিনটি রুটের চলবে ট্রেন। সকাল ৮ টা ৪৫ মিনিটে ছেড়ে গেছে দেওয়ানগঞ্জ এক্সপ্রেস। বিকেল ৬টায় ছেড়ে গেছে পার্বতীপুর এক্সপ্রেস এবং রাত ৯টা ২৫ মিনিটে ছাড়বে খুলনা এক্সপ্রেস। এভাবে ২৮ জুলাই পর্যন্ত প্রতিদিন এ সময়ে ছেড়ে যাবে স্পেশ্যাল ট্রেন।’

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, পূর্ব ও পশ্চিম রেলে সব মিলিয়ে ৩৩৫টি ট্রেনে পরিবহন করা হবে ঈদের যাত্রী। পূর্ব ও পশ্চিম রেলে ৮৮টি আন্তনগর ট্রেন, ৬২টি মেইল ও এক্সপ্রেস ট্রেন, ১৩ জোড়া বিশেষ ট্রেন যাত্রী পরিবহন করবে ৪০০ রেলস্টেশনে।

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জন্যও বৃহস্পতিবার বিকেল থেকেই বিশেষ সার্ভিস চালু করেছে নৌ কর্তৃপক্ষ। ঈদে রাজধানী থেকে প্রায় ৩০ লাখ মানুষ যাবে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায়। সে লক্ষ্যেই নতুন করে ১৬টি লঞ্চ যুক্ত হয়েছে সদরঘাট টার্মিনালে। এ ছাড়া যেসব লঞ্চ অবসরে থাকে রোটেশন পদ্ধতিতে সেই সব লঞ্চও যাত্রী পরিবহনে যুক্ত হয়েছে বৃহস্পতিবার থেকে।

লঞ্চ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এবার ঈদের ছুটি বেশি দিন হওয়ায় যাত্রীর চাপ বাড়বে। তবে যাত্রী বেশি হলেও যাত্রা পথে কোন সমস্যা হবে না। কেননা ঈদে বিশেষ সার্ভিস চালু থাকবে।

বরিশালের আগরপুর গ্রামে স্বজনদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে মো. কামাল হোসেন পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে এসেছেন সদরঘাট। রাইজিংবিডিকে তিনি বলেন, ‘কেবিনের কোন টিকিট পাইনি। তাতে কি, সকাল থেকেই চাদর পেতে বসে আছি লঞ্চের ডেকে। যাই হোক না কেন, বাড়ি আমাদের যেতেই হবে।’

ভোলা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, চাঁদপুরসহ দক্ষিণাঞ্চলের ১৬ জেলার যাত্রীদের দ্বিগুণ দামে টিকিট কিনতে হয়েছে বলে অনেক যাত্রীই অভিযোগ করেছেন। এ ছাড়া ঘাটে মালামাল পরিবহন নিয়েও তাদের হয়রানি করছেন কুলিরা।

এ প্রসঙ্গে লঞ্চ মালিক সমিতির সদস্যসচিব মো. ছিদ্দিকুর রহমান পাটওয়ারী জানান, কালোবাজারিদের কাছে কোনো টিকিট বিক্রি করা হয়নি। সরকারি রেটেই ভাড়া নেওয়া হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘রাজধানী থেকে যাত্রী পরিবহনে এবারও পরিবহনের অভাব দেখা দেবে। তবে প্রশাসনের অনুমতি সাপেক্ষে আমরা পাঁচ হাজার মিনিবাস যাত্রী পরিবহনের সেবায় রাখতে পারি।’

এদিকে বৃহস্পতিবার থেকে বিশেষ পরিবহন সেবা শুরু করেছে বিআরটিসি। সরকারি এ পরিবহন সংস্থার এসি ও নন-এসিসহ সব মিলিয়ে ৯০০ বাস ঈদে যাত্রী পরিবহন করবে।

মহাসড়কের দীর্ঘ যানজট, সড়কের বেহাল অবস্থা, পথে পথে চরম ভোগান্তি এত সব দুর্ভোগের আগাম খবর জেনেও মানুষ ঈদ উৎসবের জন্য নাড়ির টানে বাড়ি ফিরছেন। বসে, দাঁড়িয়ে বা পায়ে হেঁটে যেভাবে হোক আপনজনের কাছে তাদের পৌঁছাতেই হবে।

এসব ঝুঁকি মেনে নিয়েই মানুষ ঈদ উপলক্ষে শুরু করেছে বাড়ি ফেরা। প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ করতে জামালপুর যাচ্ছেন বেসরকারি কর্মকর্তা রাতুল হোসাইন। রাইজিংবিডিকে তিনি বলেন, ‘আগামীকাল শুক্রবার এবং শনিবার ভিড় অনেক ভাড়বে। তাই দুপুরেই অফিস থেকে ছুটি নিয়ে মহাখালী বাস র্টামিনালে পরিবারের সবাইকে নিয়ে বাসের অপেক্ষায় বসে আছি। কেননা আজ না গেলে পথে অসহনীয় যানজটে পড়তে হবে।’

যানজট নিয়ন্ত্রণসহ সার্বিক পরিস্থিতি প্রসঙ্গে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সড়ক বিভাগের সচিব এম এ এন ছিদ্দিক বলেন, ‘মহাসড়কে যান চলাচল নির্বিঘ্ন রাখতে প্রস্তুতি নিয়েছে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন। মহাসড়কে বিকল গাড়ি রাখা হবে না। যেখানে সেখানে গাড়ি থামানো ও চাঁদাবাজি বন্ধ করা এবং উন্নয়ন কাজ বন্ধ রাখাসহ সকল প্রস্তুতি বাস্তবায়নে কাজ করছে স্থানীয় প্রশাসন।’

মহাসড়কে যানজট রোধে পুলিশ কোন গাড়ি থামাবে না। এ ছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-টাঙ্গাইল, ঢাকা-মানিকগঞ্জ, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-মাওয়া, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের বাসস্ট্যান্ড ও বাজার এলাকায় যানজট নিরসনে বিশেষ নজর রাখার জন্য প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান এম এ এন ছিদ্দিক।

যোগাযোগ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, মহাসড়ক সচল রাখতে ঈদের তিন দিন আগে ও দুই দিন পরে তৈরি পোশাক, জ্বালানি ও পচনশীল খাদ্য ছাড়া অন্যান্য পণ্যবাহী ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখা হবে। এ ছাড়া মহাসড়কে বন্ধ করে দেওয়া হবে নিষিদ্ধ নছিমন-করিমন-ভটভটি চলাচল। ওভারটেকিং বন্ধ করতে টহল দেবে মহাসড়ক পুলিশের ভ্রাম্যমাণ দল।


 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৪ জুলাই ২০১৪/লেনিন/সাইফুল/নওশের

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়