ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

শ্রমিকের ন্যায্য মজুরি ও স্বীকৃতি দাবি

হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:০৪, ২০ আগস্ট ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
শ্রমিকের ন্যায্য মজুরি ও স্বীকৃতি দাবি

ফাইল ফটো

নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক সকল খাতের শ্রমিকের ন্যায্য মজুরির পাশাপাশি কাজের মর্যাদা এবং স্বীকৃতি দাবি জানিয়েছেন রাজনীতিবিদ, সরকারি কর্মকর্তাসহ বিশিষ্টজনেরা।

 

বৃহস্পতিবার দুপুরে ডেইলি স্টার ভবনের আজিমুর রহমান হলে অনুষ্ঠিত অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রম এবং গৃহ শ্রমিকদের অধিকার-সুরক্ষা বিষয়ক সেমিনারে বক্তারা এ কথা বলেন।

 

তারা বলেন, শ্রমিককে তার কাজের প্রাপ্য মর্যাদা স্বীকৃতি না দিলে সমাজে কোনোদিনই গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, মানবিক সংস্কৃতি তৈরি হবে না। তাই অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিকদের স্বীকৃতি এবং অধিকার সুরক্ষায় আলাদা আইন প্রণয়ন বা বিদ্যমান শ্রম আইনে শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া জরুরি।

 

অক্সফাম চিবি’র সহযোগিতায় বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ (বিলস) সেমিনারের আয়োজন করে। সংগঠনের সম্পাদক এবং সাবেক সংসদ সদস্য রৌশন জাহান সাথীর সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য ড. শামসুল আলম।

 

‘জাতীয় অর্থনীতি ও উন্নয়নে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত ও গৃহকর্মে নিয়োজিত শ্রমিকদের অবদানের স্বীকৃতি: গ্রাম ও শহরের সম্পর্ক’ শীর্ষক সেমিনারে গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. সায়মা হক বিদিশা এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. জাকির হোসাইন।

 

ড. শামসুল আলম তার বক্তব্যে বলেন, সমাজে কোনো একজন মানুষের শ্রমের স্বীকৃতি না থাকাটাই তো অমর্যাদাকর। অথচ জাতীয় অর্থনীতিতে গৃহ শ্রমিকদের অবদান ব্যাপক। ২০১৩ সালের সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী দেশের অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করছে ৮৯ শতাংশ শ্রমিক। সেখানে কৃষির পরপরই গৃহ শ্রমিকের সংখ্যাই বেশি।

 

এই গৃহকর্মী বা অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিকদের সুরক্ষায় নীতিমালা হলেও তার বাস্তবায়ন না হওয়াকে দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেন তিনি।

 

শ্রম আইনে অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিকদের শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ারও পক্ষে মত দিয়ে এই সদস্য বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলপত্র গৃহিত হয়েছে। অচিরেই তা পাস হবে। সরকার শিক্ষাখাত এবং দারিদ্র্য বিমোচন খাতকে সামাজিক নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। আগামী ২০২০ সালের মধ্যে দারিদ্র্যের হারকে আট শতাংশে নিয়ে আসা হবে।

 

গৃহ শ্রমিকদের শ্রমের মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় সামাজিক চেতনার বিকাশ ঘটানো প্রয়োজন বলেও উল্লেখ করেন শামসুল আলম।

 

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, দেশে প্রতি বছর প্রায় চার শতাংশ হারে শ্রমশক্তি বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে মোট জনসংখ্যার ৩৭.৮৬ শতাংশ শ্রমশক্তি। এই মোট শ্রম শক্তির ৮৯ শতাংশই অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে শ্রম দিয়ে যাচ্ছে। যাদের কাজের কোনো স্বীকৃতি নেই, নিরাপত্তা নেই, মর্যাদা নেই।

 

দেশ যেকোনো আয়ের পর্যায়ে উন্নীত হোক না কেন, সমাজে শ্রমের মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত না হলে কোনো কিছুই কার্যকর হবে না।

 

সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ইসরাফিল আলম এমপি বলেন, দেশে গৃহ শ্রমিকদের অবস্থা খুবই ভয়াবহ। কেবল বাংলাদেশের গৃহ শ্রমিকদের জন্যই নয়, পার্শ্ববর্তী বা বিভিন্ন দেশের গৃহ শ্রমিকদের জন্যই আইএলও কনভেনশনে নীতিমালায় বাংলাদেশের স্বাক্ষর করা উচিত।

 

গৃহ শ্রমিকদের অধিকার এবং আইনি সুরক্ষায় আইনের খসড়া দুই বছর আগে চূড়ান্ত হলেও তা সংসদে পাস না হওয়া দুঃখজনক বলে বন্তব্য করেন তিনি।

 

বিলস’র সম্পাদক শ্রমিকনেতা ড. ওয়াজেদুল ইসলামের সঞ্চালনায় সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন, বিলস’র উপদেষ্টা এবং স্কপের আহ্বায়ক শাহ মুহাম্মদ আবু জাফর, অক্সফামের কান্ট্রি ডিরেক্টর স্নেহাল ভি সনঝি, এফইএস’র প্রতিনিধি হেনরিক মাইহাক, স্কপের প্রতিনিধি রাজেকুজ্জামান রতন, জাতীয় শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইন, শ্রমিকনেতা আবুল হুসাইনসহ আরও অনেকে।

 

সেমিনারে বক্তারা বলেন, পেশা হিসেবে গৃহকর্ম পৃথিবীর প্রাচীন এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমখাত। সারা বিশ্বে প্রায় ৮৩ শতাংশ নারী শ্রমিক গৃহশ্রমের সঙ্গে যুক্ত। বাংলাদেশে ২০ লাখেরও বেশি শ্রমিক গৃহশ্রমের সঙ্গে যুক্ত আছে। কিন্তু কোনো নীতিমালা বা আইন না থাকায় তারা শ্রমিকের মর্যাদা পাচ্ছেন না। প্রাপ্য মজুরি থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন।

 

বক্তারা বলেন, ২০০৬ সালে শ্রমজীবী মানুষের সুরক্ষায় সনদ হলেও এই আইনে গৃহশ্রম বা গৃহ শ্রমিকদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। ফলে গৃহ শ্রমিকদের আইন অধিকার পাওয়ার বা প্রতিকার চাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তাই প্রতিনিয়তই এসব গৃহ শ্রমিকদের নানা অত্যাচার, নির্যাতন সহ্য করতে হচ্ছে।

 

 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২০ আগস্ট ২০১৫/হাসান/নওশের

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়