শ্রীমঙ্গল গিয়ে যা দেখবেন
ফেরদৌস জামান || রাইজিংবিডি.কম
লাউয়াছরায় বিদেশি পর্যটক
ফেরদৌস জামান
এ দেশে `চায়ের রাজধানী’র কথা বললেই প্রথমে মনে পড়বে শ্রীমঙ্গলের নাম। পাহাড়ি এই এলাকায় মাইলের পর মাইল চা বাগান। বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত মানের চায়ের একটি অংশ এই বাগানগুলো থেকেই পাওয়া যায় এবং বিদেশে রপ্তানী হয়। এখানে চা বাগানের পাশাপাশি রয়েছে রাবার, লেবু ও আনারসের বাগান। বাংলাদেশের লেবুর চাহিদার বড় যোগান আসে শ্রীমঙ্গল থেকে। সবুজ প্রকৃতির মায়াবি রূপের কারণে শ্রীমঙ্গলের রয়েছে আলাদা পরিচিতি। শুধু দেশে নয়, বিদেশের পর্যটনপিপাসুদের কাছেও এই জায়গাটির কদর রয়েছে। ফলে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে শ্রীমঙ্গলের অবস্থান প্রথম সারিতে। তাছাড়া রাজধানী ঢাকার কাছাকাছি এত অপূর্ব কোনো পর্যটন কেন্দ্র নেই। সুতরাং মুক্ত প্রকৃতি এবং নির্মল হাওয়ার জন্য শ্রীমঙ্গল হতে পারে আপনার প্রথম পছন্দ।
শীতেশ বাবুর চিড়িয়াখানা : ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়ে ওঠা দেশের একমাত্র চিড়িয়াখানা শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত। শীতেশ নামক স্থানীয় এক প্রকৃতিপ্রেমী একেবারেই ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়ে তুলেছেন এই মিনি চিড়িয়াখানা। দিনে দিনে তার সংগ্রহে যুক্ত হয়েছে অনেক প্রজাতির পশুপাখি। সাদা বাঘ, মুখপোড়া বানর, সজারু, হরিণ, উল্লুক, ধনেশ পাখি, একাধিক প্রজাতির কাঠবিড়ালি এর অন্যতম। শ্রীমঙ্গল রেল স্টেশন থেকে চিড়িয়াখানায় পৌঁছতে পনেরো টাকা রিকশা ভাড়া লাগে। ভেতরে প্রবেশ করতে দশ টাকার টিকিট কাটতে হয়।
ক্ষুদ্র জাতিসত্তা পল্লী : দেশের চা বাগানের প্রায় নব্বই শতাংশ শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত। এই বাগানের শ্রমিকরা প্রায় সকলেই মণিপুরী এবং খাঁসি (খাঁসিয়া) জাতিসত্তার অধিকারী। সেই ইংরেজ আমলে যখন চা চাষের শুরু, তখন থেকে আজ পর্যন্ত শ্রমিক বলতে তারাই। যুগে যুগে ঘটেছে তাদের বংশ বিস্তার। বর্তমানে তারা স্থানীয় জনসংখ্যার মোটামুটি একটি অংশ হয়ে উঠেছে। আপন সংস্কৃতিতে বৈচিত্রময় তাদের জীবন। অনাদীকালের সংস্কৃতি ধরে রেখেছে তারা হৃদয়ে। এটা তারা পালনও করে যা আমাদের জন্য দেখার মত একটি বিষয় হয়ে ওঠে। পর্যটকেরা চাইলেই ঘুরে দেখতে পারেন তাদের পল্লী বা বসতি।
সাত রং চা : চায়ের রাজধানী শ্রীমঙ্গল গেলেন অথচ সাত রং চায়ের স্বাদ গ্রহণ করলেন না, তা হয় না। একই গ্লাসের মধ্যে স্তরে স্তরে সাজানো সাত রং এর চা! চা ভর্তি গ্লাসটি যখন আপনার সামনে পরিবেশিত হবে হয়তো বিস্মিত হয়ে ভাববেন, তরল পানীয়কে কীভাবে সাতটি স্তরে সাজানো সম্ভব! ব্যাপারটি বিস্ময়েরই বটে। অর্ডার করলে গোপন ঘরে প্রস্তুত করার পর সেই চা আপনাকে পরিবেশন করা হবে। প্রতি গ্লাসের মূল্য ৭০-৯০ টাকা।
টি এস্টেট : পর্যটকেরা চাইলে শ্রীমঙ্গলের চা কারখানাও ঘুরে দেখতে পারেন। টি রিসার্স ইনস্টিটিউট হতে পারে পরিদর্শনের অন্যতম একটি জায়গা। দেখতে পাবেন চা প্রস্তুত প্রণালী। বাগানের ভেতর শ্রমিকদের সঙ্গে খানিকটা সময়ও কাটানো যেতে পারে। শ্রীমঙ্গলে থাকার জায়গা হিসেবে টি রিসার্স ইনস্টিটিউটের ‘টি রিসোর্ট’ অত্যান্ত চমৎকার একটি জায়গা। টিলার উপর বিশাল জায়গা নিয়ে নির্মিত রিসোর্টে রয়েছে দশ-বারোটি কটেজ। বৃক্ষের ছায়া তলে অনেক দূরে দূরে একেকটি কটেজ। বড়সর রেস্তোরাঁর সঙ্গে রয়েছে পুরনো আমলের সুইমিংপুল। পাশেই নেট দিয়ে ঘেরা জায়গার মধ্যে চরে বেড়ায় বেশ ককেটি চিত্রল হরিণ। কেবল রিসোর্ট সীমানার মাঝে অবস্থান করে ও আশপাশের চা বাগান দেখেই কাটিয়ে দেয়া সম্ভব দু’দিন দিন।
মাধবপুর লেক : কোন কালে সৃষ্টি হয়েছে এই লেকের তা কেউ বলতে পারে না। সমতল থেকে উঁচুতে পাহাড়ে লেকটির অবস্থান। এখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশ খুব সুন্দর। সময় করে লেকের চারপাশ প্রদক্ষিণ করতে পারলে নিঃসন্দেহে তা হবে এক দারুণ অভিজ্ঞতা।
চাইলে নিজ ব্যবস্থাপনাতেই শ্রীমঙ্গল ও তার আশপাশের এলাকা ভ্রমণ করা সম্ভব। ঢাকা থেকে ট্রেনে যাওয়া সবচেয়ে নিরাপদ ও আরামদায়ক। জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস, পারাবত এক্সপ্রেস, উপবন এক্সপ্রেস এবং সুরমা মেইল কমলাপুর থেকে সিলেট নিয়মিত যাতায়াত করে। আপনাকে নামতে হবে শ্রীমঙ্গল স্টেশনে। এ ছাড়াও ঢাকা সায়দাবাদ, মহাখালী ও ফকিরাপুল থেকে সারাদিনই বাস সার্ভিস রয়েছে। শ্যামলী, সোহাগ পরিবহণ, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, সৌদিয়া এই রুটের অন্যতম বাস। শ্যামলী পরিবহণ-০২-৭৫৪০৯৯৩,০২৭৫৫০০৭১। সোহাগ পরিবহণ-০২-৯৩৪৪৪৭৭, ০১৭১১-৬১২৪৩৩। সৌদিয়া -০১৯১৯-৬৫৪৮৫৮,০১৯১৯-৬৫৪৮৬১।
থাকার জন্য রয়েছে টি রিসোর্ট। ফোন-০১৭১২-৯১৬০০১। হোটেল প্লাজা-৮৬২৬৫২৫, ০১৭১১-৩৩২৬০৫। রেইন ফরেস্ট রিসোর্ট-০১৯৩৮-৩০৫৭০৬। হোটেল গ্র্যান্ড সুলতান (পাঁচ তারকা)-০১৫৫২-৬৮৩৪৫৪।
শ্রীমঙ্গল, সিলেট ভ্রমণে টুর অপারেটরদের বছরজুড়েই অফার থাকে। ৭,৮০০ থেকে ৮,৫০০ টাকায় তাদের মাধ্যমে শ্রীমঙ্গল ঘুরে আসা সম্ভব। কোনো কোনো অপারেটর প্যাকেজে সিলেটসহ শ্রীমঙ্গল ভ্রমণের অফার দিয়ে থাকে। যোগাযোগ করতে পারেন এদের সঙ্গে :
সাউথ এশিয়ান টুরিজম, ফোন : ০১৭১৬-৪৬৬০৪৭। সাবরিনা ট্রাভেলস অ্যান্ড টুরস্, ফোন : ০১৭৭৪৭৫৫১৩১। গ্রীন বাংলাদেশ টুরস, ফোন : ০২-৮৬৫২২৫৪, ০১৮১৯-৪৮০৫৪০। দ্য গাইড টুরস লিমিটেড, ফোন : ০২-৯৮৮৬৯৮৩, ০১৭১১-৬৯৬৩৩৭। ক্যাপ্টেইন হলিডেজ, ফোন : ০১৯৭৭০৫৮৪৫২। লেজার টুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস লি. ফোন : ০২-৯৩৪৮৭০৬, ০১৭১২-১১১১১১।
রাইজিংবিডি/ঢাকা/২২ জুলাই ২০১৫/তাপস রায়
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন