ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

জীবন যখন মূল্যবান

মাওলা সুজন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৪৫, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
জীবন যখন মূল্যবান

মাওলা সুজন, নোয়াখালী : প্রতিটি মানুষকেই মৃত্যুর স্বাদ নিতে হয়। আমরা সবাই এ কথা জানি। তারপরও কেউ কেউ নিজের জীবনকে অন্যরকমভাবে উপস্থাপন করি। মহিমান্বিত করে থাকি যে যেমনভাবে পারি।

 

বীরশ্রেষ্ঠর মার্যাদা কিন্তু সবাই পাননি। পেয়েছে কেবল সাতজন। রুহুল আমিন ওই সাতজনের একজন। মুক্তিযুদ্ধের সময় নিজের জীবনকে তিনি অবলীলায় দান করেন দেশের জন্য। সেই সময় তার কাছে নিজের জীবন হয়ে ওঠে মূল্যহীন। দেশটিই হয়ে ওঠে তখন মূল্যবান।

 

বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলায় বাগপাঁচড়া (বর্তমান রুহুল আমিন নগর) গ্রামে জন্ম নেন, ১৯৩৪ সালে। তার বাবা আজহার পাটোয়ারী ও মা জুলেখা খাতুন। রুহুল আমিন ১৯৫০ সালে নাবিক হিসেবে পাকিস্তান নৌবাহিনীতে যোগ দেন।

 

রুহুল আমিন ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। জীবন বাজী ধরে লড়াই করে শেষমেষ জীবনটাই দিয়ে দেন ১০ ডিসেম্বর, পাকিস্তানি বিমান বাহিনীর বোমা বর্ষণে।

 

ইতিহাস ঘেটে জানা যায়, বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন পিএনএস বখতিয়ার ত্যাগ করে ২নং সেক্টরে যোগ দেন। অনেক স্থল যুদ্ধে অংশ নিয়ে বহু সাফল্যও লাভ করেন।

 

পরে যুদ্ধ জাহাজ ‘পলাশ’ এর আর্টিফিসার অফিসার হিসেবে দায়িত্ব নেন। ৯ ডিসেম্বর রাতে কোনো বাধা ছাড়াই ‘পলাশ’ হিরণ পয়েন্টে প্রবেশ করে। ১০ ডিসেম্বর খুলনা শিপইয়ার্ডের কাছাকাছি পৌঁছলে শক্র পক্ষের একটি বোমারু বিমান পলাশে চড়াও হয়। সেটির বোমা বর্ষণে তিনি মারা যান।

 

হয়তো তিনি প্রাণে বাঁচতে পারতেন। কিন্তু যোদ্ধা তিনি, ভয় পাওয়ার পাত্র নন। বীরের মতো লড়াই করে মৃত্যুকেই বেছে নেন। শেষ পর্যন্ত তার এই আত্মত্যাগের জন্য বীরশ্রেষ্ঠ খেতাব লাভ করেন। তিনি শুধু নোয়াখালী জেলার নয়, পুরো বাংলাদেশের গর্ব।

 

বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ মো. রুহুল আমিন গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর

 

বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনকে মনে রেখেছে দেশবাসী। তাকে সম্মান জানাতে কোনো কার্পণ্য করেনি। ২০০৮ সালের প্রথমদিকে তার নামে নাম রাখা হয় একটি সড়কের। একটি গ্রন্থাগার নির্মাণ করে নাম রাখা হয় ‘বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ মো. রুহুল আমিন গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর’ । বর্তমানে এখানে প্রায় চার হাজার বই রয়েছে।

 

১৯৯৪ সালে এলাকার আবুল কাশেম নামে এক এক ব্যক্তির উদ্যেগে প্রতিষ্ঠা করা হয় বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ রুহুল আমিন একাডেমি। বর্তমানে সেখানে দশম শ্রেণির পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীন কম্পিউটার ও ড্রেস মেকিং অ্যান্ড টেইলারিং কোর্স চালু। এ ছাড়া চালু রয়েছে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ এসএসসি কোর্স।

 

এই স্কুলেরই শিক্ষার্থী সপ্তম শ্রেণির আফরোজা আক্তার ও ৯ম শ্রেণির নুর উদ্দিন বলেন, বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন আমাদের গ্রামের সন্তান। তার নামে নাম রাখা স্কুলে লেখাপড়া করতে পেরে আমরা গর্বিত।

 

বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ রুহুল আমিন একাডেমি

 

এলাকার কয়েকজন জানান, ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উদ্যোগে বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর গড়ে তোলা হয়। ওই সময়েই তার বাড়িতে যাওয়ার রাস্তাটিরও নাম রাখা হয় বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন সড়ক।

 

প্রতি বছর ১০ডিসেম্বর নোয়াখালী জেলা প্রশাসন, সোনাইমুড়ি উপজেলা প্রশাসন, মুক্তিযোদ্ধ সংসদ, বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘরের পক্ষ থেকে এ জাতীয় বীরকে স্মরণ করতে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

 

 

রাইজিংবিডি/নোয়াখালী/১৫ ডিসেম্বর ২০১৬/মাওলা সুজন/টিআর

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়