ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

সন্ত্রাসে অর্থায়ন ও স্বর্ণ চোরাচালান রোধে দুটি ইউনিট

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:০৯, ৪ আগস্ট ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সন্ত্রাসে অর্থায়ন ও স্বর্ণ চোরাচালান রোধে দুটি ইউনিট

কেএমএ হাসনাত : সন্ত্রাসে অর্থায়ন ও স্বর্ণচোরাচালান রোধে আরো কঠোর হতে যাচ্ছে সরকার।

 

এ বিষয়ে মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ আইনে চার সদেস্যের আলাদা দুটি ইউনিট করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ড. আসলাম আলম।

 

মঙ্গলবার দুপুরে সচিবালয়ে মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরাধ সংক্রান্ত এক বৈঠক শেষে সাংবাদিকেদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।

 

সচিব বলেন, বৈঠকে মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে সরকারের কার্যক্রম রিভিউ (পর্যালোচনা) করা হয়েছে। মানি লন্ডারিং আইনের একটি দিক হচ্ছে দুর্নীতি। দুর্নীতি সম্পর্কিত দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কাজ ভাল। এ নিয়ে অনেক মামলা হয়েছে। দুর্নীতি সংক্রান্ত এসব মামলার তদন্ত ও প্রসিকিউশন মোটামুটি সন্তোষজনক বলা যায়। তবে মানব পাচার ও সোনা চোরাচালান এবং সন্ত্রাসে অর্থায়ন নিয়ে অন্য আইনে মামলা হলেও এখন পর্যন্ত মানি লন্ডারিং আইনে কোন মামলা হয়নি। এ বিষয়টি এখনো উপেক্ষিত রয়ে গেছে।

 

ড. আসলাম বলেন, বৈঠকে এ বিষয়ে নজর দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সন্ত্রাসী ঘটনার জন্য সন্ত্রাস দমন আইনে অনেক মামলা, প্রসিকিউশন ও চার্জশিট হয়েছে। কিন্তু সন্ত্রাসের সঙ্গে যে অর্থায়ন জড়িত, এ নিয়ে কোন মামলা হয়নি। এ দুটি বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার জন্য দুটি ‘যৌথ তদন্ত ইউনিট’ গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একটা মানব পাচারের জন্য আরেকটি সন্ত্রাসের জন্য।

 

তিনি বলেন, এ পর্যন্ত টেরোরিজম আইনে যেসব মামলা হয়েছে, সেসব সন্ত্রাসী ঘটনার সঙ্গে অর্থায়নের যোগসূত্রের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। চার সদস্যের এ ইউনিটের মধ্যে থাকবেন বিএফআইইউ, দুদক, এনবিআর ও সিআইডির প্রতিনিধিরা।

 

সচিব বলেন, এপিজির প্রতিনিধিরা অক্টোবরে আসবে, তারা এক সপ্তাহের মত অবস্থান করবেন। এপিজির আসা উপলক্ষে প্রস্তুতি জোরদার করতে বৈঠকে বলা হয়েছে। তারা আসার আগে এ মাস থেকেই বিএফআইইউ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর কার্যক্রমের ওপর মৌখিক পরীক্ষা নেবে।

 

মানি ল্ন্ডারিং মানে শুধু সুইস ব্যাংকে টাকা পাঠানো নয়, এর আওতা অনেক ব্যাপক। অবৈধ বা ঘুষের টাকা অন্যত্র বিনিয়োগ করে সাদা করাটাও মানি লন্ডারিংয়ের আওতায় পড়ে। আবার বৈধ টাকাও অবৈধ হয়ে যেতে পারে। যেমন বৈধ অর্থ হুন্ডির মাধ্যমে দেশের বাইরে পাঠানো।

 

মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে ২০১৫-২০১৭ মেয়াদে ১১টি সুনির্দিষ্ট কৌশলগত উদ্দেশ্যের বিপরীতে ১১টি কৌশল নির্ধারণ করা হয়েছে। মুদ্রা পাচার বিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা দ্য ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্কফোর্সের (এফএটিএফ) পরামর্শে এ কৌশল নির্ধারণ করেছে মানিলন্ডারিং  ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে বিভিন্ন দিক-নির্দেশনা এবং নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গঠিত জাতীয় সমন্বয় কমিটি।

 

এ পর্যন্ত ২৮৫ অভিযোগের ২৫৫টির ক্ষেত্রে মামলা করা হয়েছে। এক্ষেত্রে টাকার অংকের পরিমাণ প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা। ১৬২টি মামলার চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। তিনটি মামলায় সাজা হয়েছে। ১৬৩ কোটি টাকা ফেরত আনা হয়েছে। প্রায় একই পরিমাণ অর্থ বাজেয়াপ্ত হয়েছে।

 

২০১৫-২০১৭ মেয়াদে কৌশল নির্ধারণের জন্য সমন্বয় কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর ও  বিএফআইইউ প্রধানের নেতৃত্বে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, এনবিআর, দুদকের প্রতিনিধি সমন্বয়ে আরেকটি কমিটি গঠন করে। কমিটি এফএটিএফের দিক-নির্দেশনা অনুসরণ করে ১১টি কৌশল নির্ধারণ করেছে।

 

কৌশলগুলোতে মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে বিবেচিত বিষয়গুলো হচ্ছে, মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়নের ঝুঁকি নির্ধারণ প্রক্রিয়া নিয়মিতভাবে হালনাগাদ করা এবং রিপোর্টিং এজেন্সিগুলোকে মনিটরিংয়ের ক্ষেত্রে ঝুঁকিভিত্তিক ব্যবস্থা প্রবর্তন করা। দুর্নীতিলব্ধ সম্পদের মনিলন্ডারিং প্রতিহত করা। সীমান্ত সুরক্ষা পদ্ধতির আধুনিকায়নের মাধ্যমে সোনা ও মাদক পাচার, মানব পাচার, অন্যান্য সংঘবদ্ধ অপরাধ ও তার অর্থায়ন প্রতিহত করা। অবৈধ অর্থ পাচার প্রতিরোধ করা, কর ফাঁকি প্রতিহত করা এবং বাণিজ্যভিত্তিক মানিলন্ডারিং বাধাগ্রস্ত করা।

 

এ ছাড়াও  বিদেশে পাচারকৃত অর্থ দেশে ফেরত আনার এবং ফাঁকি দেওয়া কর আদায়ের ব্যবস্থা করার  মাধ্যমে অর্থ পাচার নিরূৎসাহিত করা। নতুন নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ করার জন্য বিএফআইইউর সক্ষমতা বাড়ানো।

 

মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে এনজিওর মতো নতুন রিপোর্টিং এজেন্সির পরিপালন ব্যবস্থা উন্নত করা। মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন বিষয়ক তদন্ত ও বিচারকার্যের দক্ষতা বাড়ানো। নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সমন্বয় ও সহযোগিতা বাড়ানো এবং স্বচ্ছ, জবাবদিহিতামূলক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা।





রাইজিংবিডি/৫ আগস্ট ২০১৫/হাসনাত/নওশের

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়