ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

সব হার্বাল প্রসাধনই কি হার্বাল?

ডা. সজল আশফাক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:১০, ২৮ নভেম্বর ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সব হার্বাল প্রসাধনই কি হার্বাল?

মডেল: আফরি, ফটোগ্রাফি: অপূর্ব খন্দকার

ডা. সজল আশফাক : রূপচর্চার ব্যাপারে নারীর আগ্রহ চিরন্তন। এই রূপচর্চার জন্য হার্বাল সামগ্রীর প্রতি বরাবরই দুর্বলতা লক্ষ্য করা গেছে। যার ফলশ্রুতিতে রূপচর্চার ঘরোয়া হার্বাল উপকরণগুলো ক্রমান্বয়ে মনকাড়া কন্টেইনারে বন্দী হয়ে আধুনিক মোড়কে হাজির হচ্ছে নগরীর বিপণীবিতানে।

 

এখন ‘হার্বাল’ শব্দটি শুনলেই অনেকে ভাবেন এর চেয়ে নিরাপদ ও কার্যকর বুঝি আর কিছু নেই। সাধারণের আগ্রহকে পুঁজি করে প্রসাধনীর ক্ষেত্রে হার্বাল সামগ্রীর ব্যবসা এখন তুঙ্গে।

 

এখন কথা হচ্ছে সব হার্বাল সামগ্রীই কী নিরাপদ ও কার্যকর? এ নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, অধিকাংশ হার্বাল সামগ্রীই চিকিৎসা ক্ষেত্রে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পাচ্ছে না দাবিকৃত গুণাগুণ প্রমাণ করতে না পারার কারণে। অধিকাংশ হার্বাল সামগ্রী শুধুমাত্র ‘হার্বাল’ এই গুণ ছাড়া অন্য কোনো ইতিবাচক গুণাগুণ সর্বজন স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান কর্তৃক পরীক্ষিত নয়। প্রায় সব হার্বাল সামগ্রীর গুণাগুণ মানেই হচ্ছে প্রলুদ্ধকারক কথামালার ফুলঝুড়ি।

 

এ কারণে সাম্প্রতিককালে শিশুদের হার্বাল মেডিসিন গ্রহণের ব্যাপারে সর্তক করে দিয়েছে আমেরিকার ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বা এফডিএ। তবে হার্বাল প্রসাধন সামগ্রী ব্যবহারের ব্যাপারে ভোক্তাদেরই আগ্রহ বেশি বলে মনে হয়। যে কারণে অনেক কেমিক্যাল অর্থাৎ প্রচলিত প্রসাধন সামগ্রীও ‘হার্বাল’ এর লেবাসে বাজারে আসছে। এ ক্ষেত্রে উদাহরণ হিসেবে হেয়ার ডাই বা চুলের কলপের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। বাজারে এমন অনেক চুলের কলপ পাওয়া যায় যেগুলোর নাম দেখলে মনে হবে এগুলো অবশ্যই প্রাকৃতিক মেহেদী দিয়ে তৈরি, রাসায়নিক উপাদানে তৈরি কলপ নয়।

 

প্রসাধনের ক্ষেত্রে হার্বাল এর দাপট আরো এক ধাপ বেশি। কিন্তু অবাক ব্যাপার হচ্ছে নামী-দামি অনেক হার্বাল প্রসাধনই প্রকৃতপক্ষে একেবারেই হার্বাল উপাদানে তৈরি নয়। কন্টেইনারের মোড়কেই সুস্পষ্টভাবে তা উল্লেখও রয়েছে। কিন্ত হার্বাল ক্রেজে আক্রান্ত সৌন্দর্য সচেতনদের সে মোড়ক পড়ার সময়টুকু নেই। কিংবা অগাধ বিশ্বাস নিয়ে তারা তথাকথিত হার্বাল সামগ্রীগুলো ব্যবহার করছেন, ভুলেও মোড়কে উল্লেখকৃত উপাদানের নামগুলো পড়ে দেখছেন না। এদিক থেকে তথাকথিত হার্বাল সামগ্রী প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান ঠিকই এক ধরনের চতুর কৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে।

 

একদিকে তারা সামগ্রীর কাটতি বাড়ানোর জন্য মোড়কে বড় বড় হরফে হার্বাল শব্দটি ব্যবহারের পাশাপাশি কম্পোজিশনের তালিকায় কথিত হার্বাল সামগ্রীটি কী কী রাসায়নিক উপাদানে তৈরি সেটি উল্লেখ করে সত্য প্রকাশে সচেষ্ট থাকছে।

 

উদাহরণ হিসেবে একজন মহিলার নামে নামকরণকৃত পার্শ্ববর্তী দেশের তৈরি, সারা বিশ্বে সমাদৃত একটি হার্বাল প্রসাধন প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের একটি প্রোডাক্টের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। এর একটির নাম ‘শাব্রাইট’। এটি দাগ দূর করার ক্রীম। এই ক্রিমটিতে রয়েছে হাইডোকুইনোন। যা স্বাভাবিক ত্বকে দীর্ঘদিন ব্যবহারে ত্বকের ক্ষতি করে থাকে। এই হাইড্রোকুইনোনজনিত রোগের কারণে ত্বক কালো হলে সেক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়ে থাকে পরিমিত মাত্রায় ও ডার্মাটোলজিস্টের তত্ত্বাবধানে। এটি এক ধরনের কেমিক্যাল, গাছে ধরে না। এ ছাড়া বাজারে রং ফর্সা করার ক্রিমের নামে একটি বহুজাতিক কোম্পানির অতিপিরিচিত যে আয়ুর্বেদিক ক্রিমটি রয়েছে সেটির মোড়কে একদিকে বাংলা হরফে ঘৃতকুমারী, হরিদ্রা, কুমকুমাদি তেল ইত্যাদি উপাদানের কথা লেখা থাকলেও অন্যদিকে মূল উপাদান হিসাবে উল্লেখ রয়েছে বেশ কয়েকটি রাসায়নিক উপাদানের নাম।

 

আর এ কথা সবারই জানা যে কোনো রাসায়নিক উপাদানযুক্ত কোনো পণ্যকে আয়ুর্বেদ পণ্য বলা যায় না। এ ক্ষেত্রে রাসায়নিক উপাদানের সঙ্গে দু’একটি আয়ুর্বেদ উপাদানজুড়ে কোনো ক্রিমকে আয়ুর্বেদিক ক্রিম বলে চালিয়ে দেয়াটা এক ধরনের প্রতারণা ছাড়া কিছুই নয়। কারণ মানুষ সেই ক্রিমটিকে আয়ুর্বেদিক ক্রিম ভেবেই ক্রয় করছে।

 

 

 


রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৮ নভেম্বর ২০১৫/তারা/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়