ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

সমাজসেবার ক্ষেত্রে বাধা সামাজিক অস্থিরতা : ঝর্ণাধারা চৌধুরী

জাহাঙ্গীর আলম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২৩:৪৮, ১৪ জুলাই ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সমাজসেবার ক্ষেত্রে বাধা সামাজিক অস্থিরতা : ঝর্ণাধারা চৌধুরী

মানবসেবার ব্রত নিয়ে বড় বোনের সঙ্গে সংসার ছাড়েন ঝর্ণাধারা চৌধুরী। ১৯৫৬ সালে যোগ দেন মহাত্মা গান্ধী প্রতিষ্ঠিত অম্বিকা কালিগঙ্গা চ্যারিটেবল ট্রাস্টে (বর্তমানে গান্ধী আশ্রম ট্রাস্ট)। ১৯৬০ সালে বৃটিশবিরোধী আন্দোলনে সংসার ত্যাগীদের সংগঠন চট্টগ্রামের প্রবর্তক সংঘে যোগদানের মাধ্যমে সরাসরি মানবসেবা নিয়োজিত হন এই গান্ধীবাদী নারী। সমাজসেবার পাশাপাশি পড়ালেখাও চালিয়ে যান তিনি। চট্টগ্রামের খাস্তগীর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিকুলেশন, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক ও ঢাকা কলেজ থেকে স্নাতক পাস করেন।

 

১৯৭৯ সালে পূনরায় ফিরে আসেন গান্ধী আশ্রম ট্রাস্টে। ট্রাস্টের দায়িত্বে থাকা মহাত্মা গান্ধীর সহচর চারু চৌধুরীর মৃত্যুর পর ১৯৯০ সালের ১৩ জুন ট্রাস্টের সচিবের দায়িত্ব পান ঝর্ণা ধারা চৌধুরী।
সেই থেকেই আজ পর্যন্ত সন্তানের মতো আগলে রেখেছেন গান্ধী আশ্রম ট্রাস্টকে। সমাজসেবার স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন দেশি-বিদেশি অনেক পুরস্কার।

 

ঝর্ণাধারা চৌধুরীর ১৯৩৮ সালের ১৫ অক্টোবর বর্তমান লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ উপজেলার চণ্ডিপুর ইউনিয়নের কালুপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। প্রমথ চৌধুরী ও আশালতা চৌধুরীর ১১ সন্তানের মধ্যে দশম তিনি।

 

খ্যাতিমান এ সমাজসেবীর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রাইজিংবিডির নোয়াখালী প্রতিনিধি জাহাঙ্গীর আলম।

 

রাইজিংবিডি : কেমন আছেন?

ঝর্ণাধারা চৌধুরী : ভালো।

 

রাইজিংবিডি : আপনার শারীরিক অবস্থা কেমন?

ঝর্ণাধারা চৌধুরী : বয়সের মতো।

 

 

রাইজিংবিডি : শুনেছি আপনার শারীরিক অবস্থা ভালো নয়, চেকআপের জন্য কোথায় গিয়েছিলেন?

ঝর্ণাধারা চৌধুরী : ঠিক শুনেছেন। চেকআপের জন্য ঢাকায় গিয়েছিলাম।

 

রাইজিংবিডি : আপিন কখন সমাজসেবামূলক কাজ করার প্রয়োজন অনুভব করলেন ?  

ঝর্ণাধারা চৌধুরী : সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময় বিবাহিত নারীদের কপালের সিঁদুর পা দিয়ে মুছে ফেলা, হাতের শাখা ভেঙে ফেলা, অগ্নিসংযোগ, হত্যা ও লুটতরাজের ঘটনা প্রত্যক্ষ করি। এ ছাড়া লক্ষ্মীপূজার দিন করপাড়া চৌধুরী বাড়ির ২৬ জন নিরীহ মানুষকে চোখের সামনে পুড়িয়ে মারার ঘটনা আমার মনে বিষম প্রভাব ফেলে। সেসব ঘটনার পর আমি সমাজসেবামূলক কাজে আত্মনিয়োগ করার প্রয়োজন অনুভব করি।

 

রাইজিংবিডি : গান্ধী আশ্রম ট্রাস্ট কী নিয়ে কাজ করে?

ঝর্ণাধারা চৌধুরী : হতদরিদ্র মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন, সুশাসন, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কাজকরে ।

 

রাইজিংবিডি : আপনি কবে থেকে সমাজসেবা শুরু করেন?

ঝর্ণাধারা চৌধুরী : ১৯৪৬ সালে থেকে।

 

রাইজিংবিডি : তখন আপনার বয়স কত?

ঝর্ণাধারা চৌধুরী : ৯ বছর ।

 

রাইজিংবিডি : আপনি যে সময় সমাজসেবা শুরু করেন, সে সময় কিসের অভাব অনুভব করতেন ?

ঝর্ণাধারা চৌধুরী : শিক্ষার অভাব।

 

 

রাইজিংবিডি : এখন সমাজসেবা করতে আপনি কী  সমস্যা অনুভব করেন?

ঝর্ণাধারা চৌধুরী : সামাজিক অস্থিরতা ।

 

রাইজিংবিডি : আপনি তো সমাজসেবার স্বীকৃতি হিসেবে দেশি-বিদেশি অনেক পুরস্কার পেয়েছন?

ঝর্ণাধারা চৌধুরী : হ্যাঁ, পেয়েছি।

 

রাইজিংবিডি : আপনি যেসব পুরস্কার পেয়েছেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য পুরস্কার কী কী?

ঝর্ণাধারা চৌধুরী : ১৯৯২ সালে আন্তর্জাতিক ‘বাজাজ’ পুরস্কার, ২০০২ সালে ‘অনন্যা’ পুরস্কার, নিউইয়র্কের ওল্ড ওয়েস্টবেরি ইউনিভার্সিটির শান্তি পুরস্কার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘শান্তি পুরস্কার’, ২০০৮ সালে নোয়াখালী জেলা প্রশাসন থেকে ‘সাদা মনের মানুষ’ আখ্যা, ২০১০ সালে শ্রীচৈতন্য পদক, চ্যানেল আই এবং রাধুনীর পক্ষ থেকে ‘কীর্তিমতী নারী-২০১০’ এবং ২০১১ সালে ‘গান্ধী স্মৃতি শান্তি সদ্ভাবনা’ পুরস্কার, ২০১৩ সালে বেগম রোকেয়া পদক, সর্বশেষ ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মূখার্জীর কাছ থেকে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে পদ্মশ্রী পুরস্কার।

 

রাইজিংবিডি : এসব পুরস্কারের মধ্যে কোনটি আপনার কাছে বেশি স্মরণীয়?

ঝর্ণা ধারা চৌধুরী : অ্যামেনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দেওয়া পুরস্কারটি।

 

রাইজিংবিডি : পুরস্কারটি কোন সালে পেয়েছেন স্মরণ আছে?

ঝর্ণাধারা চৌধুরী : ১৯৭২ সালে। 

 

রাইজিংবিডি : গান্ধী আশ্রম ট্রাস্ট পরির্দশনে তো দেশি-বিদেশি অনেক খ্যাতিমান লোক এসেছেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কারা ?

ঝর্ণাধারা চৌধুরী : বাংদেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদ ও সাহাবুদ্দিন আহমেদ। আমেরিকা, নেদারল্যান্ড, ভারত প্রভৃতি দেশের রাষ্ট্রদূতসহ অনেক উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা এবং দেশের বিভিন্ন মন্ত্রী ও সচিব। 

 

রাইজিংবিডি : রাইজিংবিডিকে সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।

ঝর্ণাধারা চৌধুরী : আপনাকেও গান্ধী আশ্রম ট্রাস্টের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ।

 

 

 

রাইজিংবিডি/নোয়াখালী/ ১৫ জুলাই ২০১৫/জাহাঙ্গীর আলম/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়