ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

সম্প্রচার আইনের খসড়া মন্ত্রিসভায় অনুমোদন

মোহাম্মদ নঈমুদ্দীন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:২২, ১৫ অক্টোবর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সম্প্রচার আইনের খসড়া মন্ত্রিসভায় অনুমোদন

সচিবালয় প্রতিবেদক : সম্প্রচার মাধ্যমের জন্য একটি কমিশন গঠনের প্রস্তাব রেখে নতুন একটি আইনের খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

সোমবার সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে ‘সম্প্রচার আইন-২০১৮’ নামের এ আইনের খসড়ায় অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, এটি একটি নতুন আইন। স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে কনসাল্ট করে এটি প্রণয়ন করা হয়েছে। খসড়া আইনে সাত সদস্যের একটি সম্প্রচার কমিশন গঠনের বিধান রাখা হয়েছে। কমিশনের সদস্যদের নির্বাচনের জন্য একটি সার্চ কমিটি গঠন করা হবে। কমিটি রাষ্ট্রপতির কাছে সদস্যদের নাম প্রস্তাব করবেন। রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পর কমিশন গঠন করা হবে।

তিনি আরো বলেন, এ কমিশন সম্প্রচার যন্ত্রপাতির লাইসেন্স দেবে। অনলাইন গণমাধ্যমের নিবন্ধন দেওয়ার ক্ষেত্রে কমিশনের একক কর্তৃত্ব থাকবে। খসড়া আইনে সম্প্রচার কমিশন গঠনের পাশাপাশি কমিশনারদের নিয়োগ, যোগ্যতা-অযোগ্যতা, মেয়াদ, পদত্যাগ, অপসারণ, পদপর্যাদা, পারিশ্রমিক ছাড়াও বিভিন্ন বিষয়ের বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেওয়া আছে বলে জানান তিনি।

খসড়া আইনে সাত সদস্যের কমিশন গঠনের প্রস্তাব রয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এটার জন্য একটা সার্চ (অনুসন্ধান) কমিটির বিধানও রয়েছে। এই সার্চ কমিটি হবে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট, তাদের যোগ্যতা বলে দেয়া আছে। সার্চ কমিটি যে সুপারিশ করবে সেটা মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে পেশ করা হবে। রাষ্ট্রপতি তাদের মধ্য থেকে একজন চেয়ারম্যানসহ কমিশন করে দেবেন। এর মধ্যে একজন নারী কমিশনারও থাকবেন।

কমিশনার হতে হলে সম্প্রচার, গণমাধ্যম শিল্প, গণমাধ্যম শিক্ষা, আইন, জনপ্রশাসন ব্যবস্থাপনা, ভোক্তা বিষয়াদি বা ডিজিটাল প্রযুক্তির ওপর বিশেষ জ্ঞান ও সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। চেয়ারম্যান কমিশনারের একই যোগ্যতা। চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের মেয়াদ হবে নিয়োগের তারিখ থেকে পাঁচ বছর । নিয়োগ প্রাপ্তরা ৭০ বছর বয়স পর্যন্ত কাজ করতে পারবেন। 

সম্প্রচার লাইসেন্স ও অনলাইন গণমাধ্যম নিবন্ধন দেয়ার বিষয়ে কমিশনের একক কর্তৃত্ব থাকবে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘অনলাইনের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে- বাংলাদেশের ভূখণ্ড থেকে হোস্টিং করা বাংলা, ইংরেজি বা অন্য কোন ভাষায় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ইন্টারনেটভিত্তিক রেডিও, টেলিভিশন, সংবাদপত্র ও ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে সম্প্রচারের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত স্থির ও চলমান চিত্র, ধ্বনি ও লেখা বা মাল্টিমিডিয়ার অন্য কোন রূপে উপস্থাপিত তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ বা সম্প্রচারকারী বাংলাদেশি নাগরিক বা বাংলাদেশে নিবন্ধিত সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানকে বোঝাবে।’

তিনি বলেন, ‘সম্প্রচার মাধ্যম বা অনলাইন গণমাধ্যমের বিষয়ে ভোক্তা কমিশনের কাছে নালিশ করতে পারবে। কমিশন সর্বোচ্চ ৩০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করবে। যদি দুই বা ততোধিক সম্প্রচার কার্যক্রম পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কোন ঝামেলা বা বিরোধ হয় তবে কমিশন এই নিষ্পত্তি করতে পারবে। এর বিরুদ্ধে সরকারের কাছে আপিল করা যাবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘কোন সম্প্রচারকারী বা অনলাইন গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান আলোচনা অনুষ্ঠানে বিভ্রান্তিকর ও অসত্য তথ্য উপস্থাপন ও প্রচার, বিভিন্ন জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে যথা রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানের ভাষণ, জরুরি আবহাওয়া বার্তা এ জাতীয় নির্দেশ অমান্য করা, মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও চেতনা, রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি ও রাষ্ট্রীয় আদর্শ-নীতিমালা পরিপন্থী অনুষ্ঠান ও বিজ্ঞাপন প্রচার করলে অপরাধী হবেন।’

‘এমন ২৪টি কাজ করলে অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। অপরাধ হিসেবে গণ্য হলে শাস্তি সর্বোচ্চ তিন বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ পাঁচ কোটি টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। অপরাধ সংঘটনন চলমান রাখলে প্রতিদিনের জন্য সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা জরিমানা হবে। এই শাস্তি সম্প্রচারকারীর জন্য প্রযোজ্য হবে।’

সচিব বলেন, ‘আদালত যদি বলে তিনি বিকৃত মস্তিষ্ক, আদালত যদি দুই বছর বা এর বেশি শাস্তি দেয়, দণ্ডিত হওয়ার পর যদি পাঁচ বছর পার না হয়, আদালত কর্তৃক দেউলিয়া ঘোষিত হয়, ঋণখেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হয়, পাঁচ বছরের মধ্যে যদি কমিশন লাইসেন্স বা নিবন্ধন বাতিল করে থাকে তবে লাইসেন্স পাবেন না। এই ব্যক্তিরা যদি যদি লাইসেন্স নিয়ে সম্প্রচার কার্যক্রম চালিয়ে যান তবে সর্বোচ্চ সাত বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ পাঁচ কোটি টাকা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ড হবে। এই অপরাধ চলমান রাখলে দৈনিক এক লাখ টাকা জরিমানা হবে।   

তিনি বলেন, ‘আইনানুযায়ী বিনা পরোয়ানায় কাউকে গ্রেপ্তার করা যাবে না, এগুলো জামিনযোগ্য অপরাধ।’

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স অনুযায়ী ক্ষমতাপ্রাপ্ত না হলে যন্ত্রপাতি আমদানি, বিক্রি, বিক্রির প্রস্তাব, বিক্রির উদ্দেশ্যে নিজের অধিকার রাখা এই কাজগুলো করতে পারবেন না। লাইসেন্স লাগবে। নির্ধারিত ফি দিয়ে লাইসেন্স ও নিবন্ধন নবায়ন করতে হবে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৫ অক্টোবর ২০১৮/নঈমুদ্দীন/সাইফ/এনএ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়