ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

সরকার-ব্যবসায়ী মুখোমুখি!

নিয়াজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:১০, ২৫ জুলাই ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সরকার-ব্যবসায়ী মুখোমুখি!

নিয়াজ মাহমুদ : দেশব্যাপী গ্যাস সংকট দিন দিন তীব্র আকার ধারণ করছে। এ কারণে আবাসিক গ্রাহকরা যেমন সমস্যায় পড়ছেন, তার চেয়ে বেশি বিপদে পড়ছেন শিল্পোদ্যোক্তারা। আর শিল্প-কারখানায় নতুন গ্যাস সংযোগ না পাওয়ায় সরকারের সঙ্গে দেশের ব্যবসায়ী-শিল্পোদ্যোক্তাদের সম্পর্কের অবনতি ঘটছে। বলতে গেলে, এ অবস্থায় সরকার ও ব্যবসায়ীরা মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়ে।

 

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সূত্রে জানা গেছে, ৭৫টি শিল্প কারখানায় গ্যাস সংযোগ দেওয়ার জন্য ডিমান্ড নোট ইস্যু করা হয়েছিল। এর মধ্যে মাত্র ১০টিতে সংযোগ দেওয়া হয়েছে। বাকিগুলোর কোনো হদিস নেই।

 

উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চাহিদাপত্র পেয়ে উদ্যোক্তারা শত শত কোটি টাকা খরচ করে বিদেশ থেকে যন্ত্রপাতি আমদানি করেছেন। কিন্তু গ্যাস সংযোগ না পাওয়ায় এখন তারা উৎপাদনে যেতে পারছেন না।

 

এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে জরুরি ভিত্তিতে গ্যাস সমস্যা সমাধানের জন্য নড়েচড়ে বসেছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। সরকারের সংশ্লিষ্ট উপদেষ্টা-প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে একাধিক বৈঠকও করেছেন সংগঠনটির নেতারা। কিন্তু কোনো সমাধান পাননি উদ্যোক্তারা।

 

চলমান এই সংকট নিয়ে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীর সঙ্গে দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের মধ্যে জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, সরকার গ্যাস সংযোগ দিতে না পেরে ক্যাপটিভ বিদ্যুতে (শিল্প কারখানায় নিজস্ব বিদ্যুৎ উৎপাদন জেনারেটর) জ্বালানি দক্ষতা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। এতেই ক্ষেপেছেন ব্যবসায়ীরা।

 

তারা বলেন, শিল্পকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিয়ে গ্যাস সরবরাহ করা হবে বলে বৈঠকে ব্যবসায়ীদের আশ্বাস দেওয়া হয়। কিন্তু এখনই গ্যাস সংযোগ না পাওয়া গেলে ২০১৮ সালের পরে আর নতুন কারখানায় গ্যাস দেওয়া যাবে না। এ জন্য তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করে এই চাহিদা মেটানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এজন্য গভীর সমুদ্রে ভ্রাম্যমাণ টার্মিনাল স্থাপন করা হচ্ছে বলে উদ্যোক্তাদের জানান উপদেষ্টা।

 

এর আগে রাজধানীতে ব্যবসায়ীদের এক অনুষ্ঠানে জ্বালানি উপদেষ্টা বলেছিলেন, ‘গ্যাসভিত্তিক শিল্প স্থাপনের পরিকল্পনা থেকে সরে আসতে ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। আপনাদের (ব্যবসায়ীদের) প্রতি আমার অনুরোধ, গ্যাসের পরিবর্তে বিদ্যুৎকে জ্বালানি উপাদান হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে শিল্প পরিকল্পনা গ্রহণ করুন।’

 

সংযোগ দেওয়ার ব্যাপারে উপদেষ্টার সরাসরি কোনো বক্তব্য না পাওয়ার ব্যবসায়ীরা নড়েচড়ে বসেছেন। অন্যদিকে, উপদেষ্টা আরো যেসব আশ্বাস দেন তাতে আশ্বস্ত হতে পারছেন না ব্যবসায়ী-উদ্যেক্তারা। তাই উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের পরেই মতিঝিলে ফেডারেশন ভবনে জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডাকে এফবিসিসিআই। সংগঠনটি আবারো তাদের দাবি জোরালোভাবে গণমাধ্যমের কাছে পেশ করে। এবার গ্যাস সংযোগের দিন-তারিখও বেঁধে দেন ব্যবসায়ীরা। চলতি বছরের আগস্টের মধ্যে সংযোগ দিতে বলেছেন তারা।    

 

তথ্যমতে, দেশে বর্তমানে বার্ষিক গ্যাসের চাহিদা ৮০০ বিলিয়ন ঘনফুট। অন্যদিকে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষার তথ্য অনুযায়ী, গ্যাসের মজুদ রয়েছে সাড়ে ১৪ ট্রিলিয়ন ঘনফুট। এ পরিস্থিতিতে সরকার নতুন করে গ্যাসের সংযোগ দিতে চাইছে না।

 

তবে এফবিসিসিআই সভাপতি আব্দুল মাতলুব আহমাদ ইতিমধ্যে যেসব গ্যাসভিত্তিক শিল্প গড়ে উঠেছে সেখানে গ্যাসের সংযোগ দেওয়ার দাবি জানান সরকারের কাছে। তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘পোশাক শিল্প মালিকরা গ্যাসভিত্তিক শিল্প গড়ে তোলার জন্য প্রচুর বিনিয়োগ করে বসে আছেন। কেবল টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনভুক্ত (বিটিএমএ) শিল্পগুলোতেই প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়ে গেছে।’

 

তিনি বলেন, ‘২/৩ বছরের গ্যাস থাকলেও তা দিয়ে শিল্প মালিকদের দাঁড়াতে দেন। এরপর নতুন করে আর গ্যাসভিত্তিক শিল্প করতে বলবো না। কিন্তু ডিমান্ড নোট দেওয়া হলে সংযোগ দেবেন না কেন?’

 

তিনি আরো বলেন, ‘আমারা (ব্যবসায়ীরা) গ্যাসের স্বল্প মজুদের কথা মাথায় রেখে ভবিষ্যতে গ্যাসভিত্তিক শিল্প স্থাপন না করে বিদ্যুৎভিত্তিক শিল্প প্রতিষ্ঠা করব। কিন্তু যেসব উদ্যোক্তারা বিনিয়োগ করে বসে আছেন তাদের জরুরি ভিত্তিতে গ্যাস সংযোগ দিন।’

 

বিদ্যুতের বাড়তি চাহিদা মোকাবেলায় বন্ধ থাকা ডিজেলভিত্তিক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোও পুনরায় চালু করতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান এই ব্যবসায়ী নেতা।

 

এ প্রসঙ্গে কথা হয় এফবিসিসিআইয়ের প্রাক্তন সভাপতি ও হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদের সঙ্গে। তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘৭৫টি শিল্পে গ্যাস সংযোগ দেওয়ার জন্য ডিমান্ড নোট ইস্যু করা হয়েছিল। এর মধ্যে মাত্র ১০টিতে সংযোগ দেওয়া হয়েছে। চাহিদাপত্র পেয়ে উদ্যোক্তারা বিদেশ থেকে শত শত কোটি টাকার যন্ত্রপাতি আমদানি করেছেন। কিন্তু সংযোগ দেওয়া নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব তৈরি হওয়ায় এখন উৎপাদনে যাওয়ার সময় গ্যাস সংযোগ পাওয়া যাচ্ছে না।’

 

ডিমান্ড নোট ইস্যু করা সব কারখানায় দ্রুত গ্যাস সংযোগ দেওয়ার দাবি জানান এই ব্যবসায়ী নেতা।  


 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৫ জুলাই ২০১৫/নিয়াজ/রফিক/সন্তোষ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়