ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

সাত তারকার প্রথম প্রেম

রাহাত সাইফুল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:০০, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সাত তারকার প্রথম প্রেম

ছবির কোলাজ

রাহাত সাইফুল : প্রেম-ভালোবাসা চিরন্তন। প্রত্যেক মানুষের জীবনে প্রেম-ভালোবাসা একবার হলেও ধরা দেয়। আর মানুষ প্রথম প্রেম কখনই ভুলতে পারেন না। সমাজের প্রতিটি নারী-পুরুষের মতো তারকারও এ সম্পর্কের বাইরে নন।

 

বিশ্ব ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে কথা হয় ঢাকাই চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় অভিনয়শিল্পী অপু বিশ্বাস, মাহিয়া মাহি, আঁচল আঁখি, পরীমনি, বিদ্যা সিনহা মিম, সাইমন সাদিক ও বাপ্পি চৌধুরীর সঙ্গে। এ সময় তারা জানিয়েছেন- তাদের জীবনের প্রথম প্রেম কাহিনি। এ তারকাদের প্রথম প্রেমের গল্প নিয়েই সাজানো হয়েছে এ প্রতিবেদন।

 

প্রতিনিয়ত প্রেমের প্রস্তাব আসে : অপু বিশ্বাস

তিন বোন আর এক ভাইয়ের সবার ছোট আমি। এজন্য সবার আদর একটু বেশিই পেতাম।  স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে আমার সাথে মা থাকত। মাকে স্কুলের অনেকেই ভয় পেত। তাই কেউ পছন্দ করলেও আমাকে বলার সাহস পেত না। দেখা যেত স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে আমাকে দেখার জন্য কয়েকটি ছেলে নিয়মিত পথে দাঁড়িয়ে থাকত। মায়ের ভয়ে কিছু বলতেও পারেনি।

 

এখন অনেকে আমাকে প্রেমের প্রস্তাব দিতে সাহস পান। ফেসবুকের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত অনেকে আমাকে প্রেমের প্রস্তাব দিচ্ছেন। তবে এরা অধিকাংশই আমার ছবির ভক্ত, তাই প্রেম করতে চাচ্ছেন। এ বিষয়টা খুব মজা পাই কিন্তু কখনই সিরিয়াসভাবে নিই না।

 

পাশের বাড়ির কালো ছেলের প্রেমে পড়েছিলাম : মাহি

পাশের বাড়ির একটা ছেলে সবসময় আমার সঙ্গেই থাকত। তখন আমি স্কুলেও যাওয়া শুর করিনি। ছেলেটা খুব কালো ছিল। ভালোবাসা কি সেটা বোঝার আগেই ছেলেটার প্রেমে পড়েছিলাম। কিন্তু সেটা তখন বুঝিনি। ক্লাস সেভেনে উঠে যখন দ্বিতীয়বার প্রেমে পড়লাম তখন বুঝলাম আসলে কালো সেই ছেলেটাই ছিল আমার পথম প্রেম। কিন্তু তারপর আর ছেলেটার সঙ্গে দেখা হয়নি।

 

দ্বিতীয় প্রেমটা করতে টানা সাত মাস ছেলেটার পেছনে পেছনে ঘুরেছি। কতভাবে যে বোঝাতে চেয়েছি, আমি তাকে পছন্দ করি কিন্তু সে বুঝলই না! পরে আরেকজনকে মনে ধরল। তাকেও প্রোপোজ করে রিফিউজ হয়েছি। আমি ছোটবেলা থেকেই কালো ছেলেদের পছন্দ করতাম। আর ভদ্র ছেলেও ভালো লাগে না। একটু দুষ্টু টাইপের ছেলে পছন্দ করি। সে কারণেই এ প্রেমগুলো টিকেনি।

 

আমি খুশিতে আত্মহারা : আঁচল

২০০৫ সালে খুলনা থেকে আমরা ঢাকায় এসে সেন্ট্রাল গভ. গার্লস হাইস্কুলে নবম শ্রেণীতে ভর্তি হই। বড় ভাইয়ের একজন বন্ধু আমাদের সঙ্গে কোচিংয়ে পড়ত। কিছুদিন পর বুঝতে পারি, ভাইয়ার ওই বন্ধু আমাকে পছন্দ করে। এর মধ্যে আমিও তাকে পছন্দ করতে শুরু করেছি। আমার বান্ধবী রিপাও ছেলেটিকে পছন্দ করে। কিন্তু রিপা তখনো তার পছন্দের কথা ছেলেটিকে জানায়নি। তাই আমি ভাবলাম আমার তো আগেই ছেলেটিকে বলে দিতে হবে।

 

একদিন কোচিংয়ে যাওয়ার পথে ছেলেটিকে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘আপনি রিপাকে পছন্দ করেন?’ ছেলেটি বলল, ‘না না। আমি তো তোমাকে পছন্দ করি।’ শুনে আমি খুশিতে আত্মহারা। আমিও আমার ইচ্ছার কথা তাকে জানিয়ে দিই। এভাবে আমাদের প্রেম শুরু হয়। কিছুদিন পর ভাইয়া জানতে পেরে আমাকে খুব বকেছেন। আমার কোচিংয়ে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়।

 

একদিন ছেলেটি আমাকে দেখার জন্য সকাল থেকে সারা দিন বাসার নিচে বসে ছিল। সেদিন বৃষ্টিও হয়েছিল। তখন আমার কান্না আসছিল। এরপর হঠাৎ করেই তার আর কোনো খোঁজ পাচ্ছিলাম না। কিছুদিন পরে জানতে পারি, জেদ করে ছেলেটি বিদেশে চলে গেছে। পাঁচ বছর পর ছেলেটি গত ঈদে দেশে আসে। ভাইয়ার সঙ্গে দেখা করার কথা বলে আমাদের বাসায়ও এসেছিল। আমি তার জন্য টেবিলে খাবার দিয়েছি। কথা বলার তেমন সুযোগ হয়নি। তবে এতটুকুই জানি, ছেলেটি এখনো আমার জন্য অপেক্ষা করছে।

 

ওটাই ছিল প্রথম এবং শেষ দেখা : পরী

আমি যখন নবম শ্রেণীতে পড়ি তখন স্কুল শেষে এক শিক্ষকের কাছে পড়তে যেতাম। এ সময় প্রায়ই খেয়াল করতাম একটি ছেলে দূর থেকে মোটরসাইকেলে বসে আমাকে ফলো করত। একদিন আমার বান্ধবী জুলিয়ার কাছে জানতে পারি ওই ছেলেটি আমাকে পছন্দ করেন। ছেলেটিন নাম অনিক। প্রায় প্রতিদিন পাশের গ্রাম থেকে আসে এবং দূর থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে আমাকে দেখত। এভাবে চলতে থাকে বেশ কিছু দিন। একদিন জুলিয়া আমাকে সুন্দর একটা কার্ড দিয়ে বলে, ওই মোটরসাইকেলে বসে থাকা হিরো টা তোকে দিতে বলেছে।’ কার্ড খুলে দেখি  লাল রং এ লেখা ‘আই লাভ ইউ’। প্রথমে দেখাতে রং মনে হইছিল, পরে বুঝতে পারলাম, এটা রং না, রক্ত। এর পরে ছেলেটির জন্য কিছুটা ভালোবাসা জন্মায়। আমাদের গ্রামের পাশে একটা সেতু আছে, সেখানে ছেলেটির সঙ্গে দেখা করি। ছেলেটি ছিল লাজুক প্রকৃতির। জানতে চাইলাম, রক্ত দিয়ে কেন লিখা হয়েছে। তখন ছেলেটি হাত দুটি পেছনে লুকিয়ে মোটরসাইকেল নিয়ে দ্রত চলে যায়। ওটাই ছিল প্রথম এবং শেষ দেখা। ছেলেটার সাথে আর কখনও দেখা হইনি। স্কুল শেষ করে ঢাকায় এসে কলেজে ভর্তি হই। এর পর অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যাই।

 

ছেলেটির জন্য মায়া হত : মিম

অষ্টম শ্রেণীতে পড়ার সময় অনেকেই আমার প্রেমে পড়েছেন। কোচিং সেন্টারের সিঁড়িতে প্রতিদিন আমার একজন ক্লাসমেট অপেক্ষা করত। ওর নামটা বলতে চাচ্ছি না। ও প্রতিদিন একটা করে চিঠি দিত। আর চিঠি না নিলে সিঁড়ি থেকে সরতো না। বাধ্য হয়েই প্রতিদিন চিঠি নিতে হত।  মজার বিষয় হলো ওই ছেলেটাকে আমার কাছের এক বান্ধবী পছন্দ করত। দেখা গেল সব চিঠি আমার ওই বান্ধুবী নিয়ে যেত। এর পর একদিন দেখলাম ছেলেটি রক্ত দিয়ে চিঠি লিখেছে। এ বিষয়টি খারাপ লেগেছে। এ রকম মাঝে মাঝেই রক্ত দিয়ে চিঠি লিখত। এজন্য ছেলেটির জন্য মায়া হত। ঠিক তার পরেই আমি লাক্স-এ অডিশন দেয়ার জন্য কুমিল্লা থেকে ঢাকায় চলে আসি। এর পর ওই ছেলের সঙ্গে দেখা হয়নি। আমিও ব্যস্ত হয়ে যাই। আর তখন আমার কাছে কোন মোবাইল ছিল না। তাই আর ওই ছেলের সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি।

 

আমি জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পরে জানতে পারি ওই ছেলেও এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে। যদিও তার সঙ্গে আমার দেখা হয়নি।

 

তিন দিন হাতে পানি লাগাইনি, ছোঁয়া মুছে যাবে বলে : সাইমন

কলেজে পড়া অবস্থায় পাশের এলাকার একটা মেয়েকে ভালো লাগত। মেয়েটি তখন স্কুলে পড়ে। মেয়েটির নাম বলা যাবে না। তার সঙ্গে কথা বলতে ইচ্ছে করত। বিভিন্ন উসিলা নিয়ে মেয়েটির স্কুল ও কোচিংয়ের পথে হাটাহাটি করতাম, তার সাথে কথা বলতাম। প্রতিদিন সকাল-বিকাল মেয়েটির স্কুল ও কোচিংয়ের সময় হলেই রাস্তায় গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতাম। এরকম বেশ কিছু দিন চলে। আমি মেয়েটিকে সাহস করে বলতে পারিনি আমি তাকে পছন্দ করি। তবে মেয়েটি বুঝত আমি তাকে পছন্দ করি। একদিন ভুলে মেয়েটির হাত ধরে ফেলি। এ জন্য লজ্জায় মেয়েটির সাথে একদিন দেখা করিনি। এর পরে তিন দিন হাতে পানি লাগাইনি ছোঁয়া মুছে যাবে বলে।

 

একদিন স্কুলে যাওয়ার পথে মেয়েটি নিজেই আমাকে বলে ফেলে-আমাকে পছন্দ করে। এ কথা বলার পরেই দেখলাম মেয়েটির প্রতি আমার আগ্রহ আস্তে আস্তে কমে যায়। কিছুদিন পরে আমি ঢাকায় চলে আসি। এর পরে মেয়েটির সাথে আমার দেখা হয়নি। পরে জানতে পারি মেয়েটির বিয়ে হয়েছে। আর এখন প্রেম করছি চলচ্চিত্রের সঙ্গে।

 

মেয়েটিকে দেখার জন্য কলেজের ছাদে দাঁড়িয়ে থাকতাম : বাপ্পি

আমার জীবনে প্রথম প্রেম আসে আমি তখন ইন্টারমিডিয়েট দ্বিতীয় বর্ষের পড়ি। নারায়নগঞ্জ কলেজে ভর্তি হওয়ার পরেই একটা মেয়ের প্রতি আমার দূর্বলতা কাজ করে। মেয়েটি আমার ইয়ারমেট ছিল। ওর নামটা বলতে চাচ্ছি না। আমি মেয়েটির সাথে মেশার চেষ্টা করতাম। তারপর ওর সাথে কথাও হতো তখনও আমি বুঝিনি এটা প্রেম না বন্ধুত্ব। এক বছর পর আমি মেয়েটির প্রতি আরো দূর্বল হয়ে যাই। তখন মনে হলো- এ মেয়েটির সাথে আমি প্রেম করব। এরপর থেকে আমি মেয়েটিকে দেখার জন্য কলেজের ছাদে দাঁড়িয়ে থাকতাম। মেয়েটিকে ফলো করতাম। তখন বিষয়টা আর বন্ধত্বের মাঝে নেই। এ বিষয়টি মেয়েটি বুঝতে পেরে আমার সাথে আগের মতো কথা বলত না। ভাব নেয়া শুরু করে। এ বিষয়গুলো আমার জেদ লাগত। এরপর থেকে প্রতিজ্ঞা করেছি আর কখনও প্রেম করব না। এখন কারো সাথে প্রেম করলে সরাসরি বিয়ে করব। নতুন করে প্রেম করার সুযোগ পাচ্ছি না। প্রেম করতে হলে মেয়েদের সময় দিতে হবে। সে সময়টুকু নেই এখন শুধু চলচ্চিত্রের কাজ নিয়ে ব্যস্ত আছি।

 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬/রাহাত/শান্ত

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়