ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

সান্তা’র ডাকবাক্স

সার্জিন শরীফ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:২৭, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সান্তা’র ডাকবাক্স

প্রতীকী ছবি

সার্জিন শরীফ : বড়দিন! খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব। বিশ্বজুড়ে খ্রিস্টান শিশুরা সারাবছর ধরে এই দিনটির জন্য অপেক্ষা করে।

 

কবে বড়দিন আসবে আর কবে লাল পোশাক পড়া সাদা দাঁড়িওয়ালা সেই বুড়ো মানুষ সান্তা ক্লজ তাদের জন্য উপহার নিয়ে হাজির হবে...। খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী সব মানুষের মধ্যেই শিশু বয়সে এই মজার ব্যাপারটা কাজ করে। আর তাই প্রতিবছর ক্রিসমাস ডে’তে সান্তার কাছ থেকে উপহার পাওয়ার জন্য শিশুরা তার কাছে চিঠি লিখে।

 

ছোটবেলায় ক্রিসমাস ডে’তে সান্তা ক্লজের কাছ থেকে উপহার পাওয়ার জন্য একটা অন্যরকম উত্তেজনা কাজ করে। সেই বয়সে আমরা সবাই-ই ভাবতাম- লাল পোশাক পড়া সাদা দাঁড়িওয়ালা সেই বুড়ো মানুষ সান্তা ক্লজ রাতের বেলা স্বপ্নে এসে আমাদের জন্য উপহার রেখে যায়। আর আমরা সবাই ক্রিসমাস ডে’র আগে আগে কাঙ্ক্ষিত উপহার চেয়ে সান্তার কাছে চিঠি লিখতাম।

 

তবে আমার মনে আছে, আমি প্রতিবছর উপহার চাইলেও সবসময় চিঠি লিখতাম না। কিন্তু স্কুলে পড়ার সময়ে আমাদেরকে ক্লাসে প্রায়ই ‘উপহার চেয়ে সান্তার কাছে চিঠি’ লিখতে দেয়া হতো। আমি তখনই বুঝতে পেরেছিলাম শিক্ষকরা কখনোই সেই চিঠিগুলো সান্তার কাছে পৌঁছাতেন না। উল্টো একগাদা বানান ভুল, ব্যাকরণগত ত্রুটি দেখিয়ে পুরো চিঠিটাতে লাল লাল মার্ক দিয়ে আমাদেরকেই ফেরত দিয়ে দিতেন!

 

আমি সবসময়ই ভাবতাম- আহা! চিঠিগুলো যদি সত্যিই সান্তা’র কাছে পৌঁছাত, তবে তিনি কি আমাদের এত গাদা গাদা ভুল ধরে বকা দিতেন? তিনি তো শুধু আমাদের চাওয়া জিনিসগুলোর কথাই পড়তেন! যখন আমি বড় হলাম তখন ধীরে ধীরে বুঝতে শুরু করলাম যে, ক্রিসমাসের সকালে আমার শোবার ঘরে যে উপহারগুলো আমি পাই তা আসলে কোনো লাল পোশাক পড়া বুড়ো মানুষ বা কোনো পরী স্বপ্নে এসে দিয়ে যায় না। আমি বুঝে ফেললাম যে, আমার বাবা-মা রাতে এসে চুপি চুপি সেগুলো আমার ঘরে রেখে যান। (হা..হা..হা)

 

 

কিন্তু বাচ্চাদের কাছে এটা একটা খুবই মজার অনুভূতি। আমি ভাবতাম একজন ভালো মানুষ তো আছেন যিনি সারা দুনিয়া ঘুরে ঘুরে আমাদের মতো শিশুদের ইচ্ছা পূরণ করেন। সারাবিশ্বের অগণিত শিশু নিজেদের ইচ্ছাপূরণ আর সুখ-সমৃদ্ধির জন্য সান্তা’র কাছে প্রার্থনা করে। ছোট ছোট নিষ্পাপ যে হাতগুলো সান্তা’র কাছে চিঠি লিখে তারা প্রত্যেকেই বিশ্বাস করে যে, সান্তা বরফের দেশ উত্তর মেরুতে বাস করেন।

 

কিন্তু আপনি কি কখনো ভেবে দেখেছেন আপনি ছোটবেলায় সান্তাকে উদ্দেশ্য করে তার উত্তর মেরুর ঠিকানায় যে চিঠিগুলো পাঠিয়েছিলেন সেগুলো আসলে কোথায় গিয়েছিল? অবাক করা ব্যাপার হলেও সত্যি এই যে, আপনি যদি সত্যি সত্যিই সান্তা ক্লজের ঠিকানায় পাঠানোর জন্য সেগুলোকে পোস্ট করে থাকেন তবে সেগুলো তার ডাকবাক্সেই জমা পড়েছে! হ্যাঁ, সত্যি তাই!

 

যদি আপনি সান্তা’র কাছে লেখা আপনার চিঠিটা ঠিক ঠিক ‘সান্তা ক্লজ– উত্তর মেরু” (Santa Claus- the North Pole) পাঠিয়ে থাকেন তবে সেটা আর্কটিক আর আটলান্টিক সাগর দিয়ে ঘেরা ছোট্র দেশ গ্রীনল্যান্ডের রাজধানী ন্যুক শহরে থাকা ‘সান্তার ডাকবাক্স’-এই পৌঁছে গেছে! জায়গাটার আসল ঠিকানা হল- সান্তা ক্লজ, ২৪১২ ন্যুক, গ্রীনল্যান্ড (Santa Claus, 2412 Nuuk, Greenland) এবং এটিই সান্তা ক্লজের অফিসিয়াল ডাকবাক্স হিসেবে সারাবিশ্বে স্বীকৃত।

 

প্রতিবছর সারাবিশ্ব থেকে উপরোক্ত ঠিকানায় সান্তা’র কাছে লেখা চিঠিগুলো আসলে এখানেই জমা পড়ে। আর এজন্য ডাকবাক্সটার আকার-আকৃতিও বেশ বড়।

 

আরো একটা মজার ব্যাপার হল- এই ডাকবাক্সে জমা পড়া চিঠিগুলোর প্রায় সবগুলোরই জবাব দেয়া হয়। কিন্তু গিফটের ব্যাপারটা সম্পূর্ণই আপনার এবং লাল পোশাক পড়া সেই বুড়োর মধ্যকার সম্পর্কের ওপর নির্ভর করে। যদিও আমি জানি, সান্তা ক্লজ একটা ধারণা মাত্র তবুও এটা ভেবে স্বস্তি পাই যে, অগণিত নিষ্পাপ হাতে লেখা চিঠিগুলো শেষ পর্যন্ত একটা ঠিকানা খুঁজে পায়।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৫ ডিসেম্বর ২০১৬/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়