ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

সাড়ে পাঁচ’শ করেও হেরে যাওয়া ৬ টেস্ট (পর্ব-১)

আমিনুল ইসলাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:২৭, ১৬ জানুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সাড়ে পাঁচ’শ করেও হেরে যাওয়া ৬ টেস্ট (পর্ব-১)

২০০৬ সালে অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের মধ্যকার অ্যাডিলেড টেস্টের একটি দৃশ্য

আমিনুল ইসলাম : ক্রিকেট ইতিহাসে যেমন প্রত্যাশিত অনেক ঘটনা ঘটে, তেমনি ঘটে অপ্রত্যাশিত ঘটনাও। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে প্রথম ইনিংসে চার শতাধিক রান করার পর সেই দল খুব কমই হেরেছে।

নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ যখন ৫৯৫ রান করে ইনিংস ঘোষণা করে তখন কী কেউ ভেবেছিল এই টেস্টটি টাইগাররা হারতে পারে? কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং ব্যর্থতায় ও খেলোয়াড়দের ইনজুরির কারণে শেষ পর্যন্ত ৭ উইকেটে হেরেছে বাংলাদেশ। যা টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে প্রথম ইনিংসে সবচেয়ে বেশি রান করে হারা প্রথম টেস্ট।

এর আগে ১৮৯৪-৯৫ সালে অস্ট্রেলিয়া প্রথম ইনিংসে ৫৮৬ রান করে হেরেছিল। সেই হারের ১২৩ বছর পর অপ্রত্যাশিতভাবে বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে ৫৯৫ রান করেও হার মেনেছে। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে এমন হাতেগোনা কয়েকটি টেস্ট রয়েছে। যেখানে প্রথম ইনিংসে ৫৫০ এর অধিক রান করেও হার মানতে হয়েছে।

টেস্ট ক্রিকেটের ১৪০ বছরের ইতিহাসে এমন ছয়টি নজির রয়েছে। যার দুটিই বাংলাদেশ স্থাপন করেছে। বাকি চারটির সঙ্গে অস্ট্রেলিয়া জড়িয়ে রয়েছে। তার দুটিতে অস্ট্রেলিয়া হেরেছে।জিতেছে দুটিতে। এই ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, নিউজিল্যান্ড, ভারত ও পাকিস্তানের নামও। চলুন দেখে নেওয়া যাক প্রথম ইনিংসে ৫৫০ এর অধিক রান করেও হেরে যাওয়া ছয়টি টেস্টের পরিসংখ্যান। আজ প্রথম পর্ব তুলে ধরা হল।

৬. অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ড : অ্যাডিলেড টেস্ট ২০০৬
এই টেস্টে ইংল্যান্ড প্রথমে ব্যাট করতে নেমে প্রথম ইনিংসে ৬ উইকেট হারিয়ে ৫৫১ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করে। পল কলিংউড ২০৬ ও কেভিন পিটারসন ১৫৮ রান করেন। এ ছাড়া ইয়ান বেল ৬০ রান করেন। জবাবে রিকি পন্টিংয়ের ১৪২ ও মাইকেল ক্লার্কের ১২৪ রানে ভর করে অস্ট্রেলিয়া তাদের প্রথম ইনিংসে সংগ্রহ করে ৫১৩ রান।

৩৮ রানে এগিয়ে থেকে ইংল্যান্ড তাদের দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নামে। কিন্তু শেন ওয়ার্নের ঘূর্ণিতে ইংল্যান্ড অলআউট হয়ে যায় মাত্র ১২৯ রানে। তাতে অস্ট্রেলিয়ার সামনে জয়ের লক্ষ্যমাত্রা দাঁড়ায় ১৬৭ রান। ৩২.৫ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় অস্ট্রেলিয়া। ফলে প্রথম ইনিংসে ৫৫১ রান করেও হার মানে ইংল্যান্ড। ম্যাচসেরা নির্বাচিত হন রিকি পন্টিং।

                                 সংক্ষিপ্ত স্কোরকার্ড :
ইংল্যান্ড :
প্রথম ইনিংস- ৫৫১/৬ ডিক্লে (কলিংউড ২০৬, পিটারসন ১৫৮; ৩/৭৫)
দ্বিতীয় ইনিংস- ১২৯/১০ (স্ট্রাউস ৩৪, বেল ২৬; ওয়ার্ন ৪/৪৯)।

অস্ট্রেলিয়া :
প্রথম ইনিংস- ৫১৩/১০ (পন্টিং ১৪২, ক্লার্ক ১২৪; হগার্ড ৭/১০৯)
দ্বিতীয় ইনিংস – ১৬৮/৪ (হাসি ৬১* ও পন্টিং ৪৯*; ফ্লিনটফ ২/৪৪)

ফল : অস্ট্রেলিয়া ৬ উইকেট জয়ী।





৫. বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ : মিরপুর টেস্ট ২০১২
এই টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথমে ব্যাট করতে নামে। কিরেন পাওয়েলের ১১৭, শিব নারায়ণ চন্দরপলের ২০৩ ও দিনেশ রামদিনের ১২৬ রানে ভর করে ৪ উইকেট হারিয়ে ৫২৭ রান তুলে  ইনিংস ঘোষণা করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। জবাবে ব্যাট করতে নেমে নাঈম ইসলামের ১০৮, নাসির হোসেনের ৯৬, সাকিব আল হাসানের ৮৯, তামিম ইকবালের ৭২ ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ৬২ রানে ভর করে ৫৫৬ রান তোলে বাংলাদেশ। তাতে ২৯ রানের লিড পায় টাইগাররা।

২৯ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে কিরেন পাওয়েলের ১১০ ও ড্যারেন ব্রাভোর ৭৬ রানে ভর করেও ২৭৩ রানে অলআউট হয়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তাতে বাংলাদেশের সামনে জয়ের লক্ষ্যমাত্রা দাঁড়ায় ২৪৫ রান। কিন্তু এই রান তাড়া করতে নেমে ৫৪.৩ ওভারে ১৬৭ রানে গুটিয়ে যায় স্বাগতিকরা। তাতে প্রথম ইনিংসে ৫৫৬ রান করেও ৭৭ রানের হেরে যায় বাংলাদেশ।

দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতে নেন কিরেন পাওয়েল।


                                  সংক্ষিপ্ত স্কোরকার্ড :
ওয়েস্ট ইন্ডিজ:

প্রথম ইনিংস- ৫২৭/৪ ডিক্লে (চন্দরপর ২০৩*, রামদিন ১২৬* ও পাওয়েল ১১৭; গাজী ৩/১৪৫)
দ্বিতীয় ইনিংস- ২৭৩/১০ (পাওয়েল ১১০, ব্রাভো ৭৬; গাজী ৬/৭৪)।

বাংলাদেশ :
প্রথম ইনিংস- ৫৫৬/১০ (নাঈম ১০৮, নাসির ৯৬, সাকিব ৮৯; রামপাল ৩/১১৮)
দ্বিতীয় ইনিংস- ১৬৭/১০ (মাহমুদউল্লাহ ২৯, নাঈম ২৬; টিনো বেস্ট ৫/২৪)

ফল : ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৭৭ রানে জয়ী।





৪. অস্ট্রেলিয়া-ভারত : অ্যাডিলেড টেস্ট ২০০৩
এই টেস্টে অস্ট্রেলিয়া প্রথমে ব্যাট করতে নেমে রিকি পন্টিংয়ের ২৪২, সাইমন ক্যাটিচের ৭৫, জাস্টিন ল্যাঙ্গারের ৫৮ ও জ্যাসন গিলেস্পির অপরাজিত ৪৮ রানে ভর করে ৫৫৬ রানে অলআউট হয় স্বাগতিকরা। জবাবে রাহুল দ্রাবিড়ের ২৩৩, ভিভিএস লক্ষ্মণের ১৪৮ রানে ভর করে ৫২৩ রানে অলআউট হয় ভারত।

৩৩ রানের লিড নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করমে নামে অস্ট্রেলিয়া। অজিত আগারকারের বোলিং তোপে দ্বিতীয় ইনিংসে ১৯৬ রানে অলআউট হয়ে যায় অসিরা। ফলে ভারতের সামনে জয়ের লক্ষ্যমাত্রা দাঁড়ায় ২৩০ রান। ৭২.৪ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে জয়ের বন্দরে নোঙর করে সফরকারী ভারত। ফলে প্রথম ইনিংসে ৫৫৬ রান করেও পরাজয় বরণ করে অস্ট্রেলিয়া।

ব্যাট হাতে ভারতের জয়ে অবদান রাখেন রাহুল দ্রাবিড় (৭২*), বীরেন্দর শেবাগ (৪৭) ও শচীন টেন্ডুলকার (৩৭)। প্রথম ইনিংসে দ্বিশতক ও পরের ইনিংসে অপরাজিত ৭২ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচসেরা নির্বাচিত হন রাহুল দ্রাবিড়।


                                     সংক্ষিপ্ত স্কোরকার্ড :

অস্ট্রেলিয়া :
প্রথম ইনিংস- ৫৫৬/১০ (পন্টিং ২৪২, ক্যাটিচ ৭৫; কুম্বলে ৫/১৫৪)
দ্বিতীয় ইনিংস- ১৯৬/১০ (গিলক্রিস্ট ৪৩, ওয়াহ ৪২; আগারকার ৬/৪১)।

ভারত :
প্রথম ইনিংস- ৫২৩/১০ (দ্রাবিড় ২৩৩, লক্ষ্মণ ১৪৮; অ্যান্ডি বিচেল ৪/১১৮)
দ্বিতীয় ইনিংস- ২৩৩/৬ (দ্রাবিড় ৭২*, শেবাগ ৪৭; ক্যাটিচ ২/২২)।

ফল : ভারত ৪ উইকেটে জয়ী।
 

 



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৬ জানুয়ারি ২০১৭/আমিনুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়