ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

কোনো প্রাণীর সঙ্গে নিষ্ঠুর আচরণ করলে জেল-জরিমানা

হাসান মাহামুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৩৪, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
কোনো প্রাণীর সঙ্গে নিষ্ঠুর আচরণ করলে জেল-জরিমানা

সচিবালয় প্রতিবেদক : যে কোনো প্রাণীর প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ প্রতিরোধ ও প্রাণীর প্রতি দায়িত্বশীলতা নিশ্চিত করতে ‘প্রাণী কল্যাণ আইন ২০১৬’ এর খসড়া নীতিগতভাবে অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সোমবার সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়।

বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, ‘যে কোনো প্রাণীর প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ প্রতিরোধ ও প্রাণীর প্রতি দায়িত্বশীলতা নিশ্চিত করতে ‘প্রাণী কল্যাণ আইন ২০১৬’ করছে সরকার। প্রস্তাবিত আইনের খসড়ায় প্রাণীর সঙ্গে নিষ্ঠুর আচরণকে আমলযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। এই অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ ২ বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং অনধিক ২০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয়দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। আর সর্বনিম্ন ৬ মাসের কারাদণ্ড বা অনধিক ৫ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয়দণ্ডের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। আইনের খসড়ায় প্রাণী বলতে মেরুদণ্ডী প্রাণীকে বোঝানো হয়েছে।’

মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, আইনটি প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।

মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আইনটি প্রণীত হলে ‘প্রাণীর প্রতি নিষ্ঠুরতা আইন ১৯২০’ বাতিল (রহিতকরণ) বলে গণ্য হবে। তবে আগের আইনে কোনো কার্য বা কার্যধারা নিষ্পন্নাধীন থাকলে তা রহিতকরণ আইন অনুসারে বিচার করা যাবে। প্রস্তাবিত আইনে দায়মুক্তির বিধানও রাখা হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, দণ্ডবিধি অনুযায়ী গণকর্মচারী হিসেবে কোনো ব্যক্তি এই আইনের অধীনে সরল বিশ্বাসে কিছু করলে তার বিরুদ্ধে কোনো দেওয়ানি বা ফৌজদারি মামলা বা অন্য কোনো আইনগত কার্যধারা গ্রহণ করা যাবে না।

প্রস্তাবিত আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, প্রাণীকে অতিরিক্ত পরিশ্রম করানো, নিষ্ঠুরভাবে বা অপ্রয়োজনীয়ভাবে প্রহার করা বা অন্য কোনোভাবে প্রাণীর প্রতি নির্দয় আচরণ করা হলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। প্রাণীকে লড়াই করার জন্য প্ররোচিত করা অথবা কোনো প্রাণীকে টোপ দেওয়া অথবা প্রাণীকে উত্ত্যক্ত করতে অথবা টোপ প্রদানে কাউকে সাহায্য বা সহযোগিতা করা, প্রাণীর লড়াইয়ের জন্য ক্ষেত্র প্রস্তুত করা, জমি ব্যবহার করা বা ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া বা অন্য কোনোভাবে সহযোগিতা করাও অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। বিনোদন বা ক্রীড়ার জন্য প্রাণী ব্যবহার করা বা প্রতিযোগিতার আয়োজন করাও অপরাধ বলে গণ্য হবে। এ ছাড়া কোনো প্রাণীকে এরূপভাবে বাঁধা বা রাখা বা বহন করা বা পরিবহনের ক্ষেত্রে ব্যথা বা কষ্ট দেওয়া কিংবা প্রাণীর জন্য আরামদায়ক-স্বাস্থ্যকর সুবিধাসহ পর্যাপ্ত খাবার ও পানি সরবরাহ না করাও প্রস্তাবিত আইনে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান (সরকারি বা বেসরকারি) বা সম্প্রদায় বেওয়ারিশ প্রাণী হত্যা করতে পারবে না। তবে জনকল্যাণার্থে জলাতঙ্ক বা অন্য কোনো সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে বা নির্মূলে ব্যথাহীন কোনো মানবিক উপায়ে বা রোগের উৎস সৃষ্টিকারী প্রাণী সরকারি বা সরকারের অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম এই আইনের আওতায় পড়বে না। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ভেটেরিনারি সার্জন কর্তৃক শারীরিকভাবে অযোগ্য ঘোষিত অসুস্থ প্রাণীকে পরিবহন কাজে ব্যবহার করতে পারবে না। বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে পোষা প্রাণীর প্রজনন, উৎপাদন, বিক্রয় ও ব্যবস্থাপনা প্রাণীবান্ধব হতে হবে। এ ছাড়া উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ দ্বারা নিবন্ধিত হতে হবে। কোনো পোষা প্রাণীর বিক্রয়কেন্দ্র বা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব বিধি দ্বারা নির্ধারিত হবে। নিবন্ধনের শর্ত ভঙ্গ বা বিধিবহির্ভূত কার্যক্রম অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। কুকুর, বিড়াল, সাপ, বানর, হাতি, পাখি ইত্যাদি কলাকৌশল প্রদর্শনকারী প্রাণীগুলোকে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে প্রদর্শন করতে ও প্রশিক্ষণ দিতে হলে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে প্রস্তাবিত আইন অনুযায়ী নিবন্ধিত হতে হবে। নিবন্ধিত না হলে বাণিজ্যিকভাবে প্রদর্শন ও প্রশিক্ষণ প্রদান করতে পারবে না। তবে সশস্ত্র বাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য এই ধারা প্রযোজ্য হবে না। গৃহপালিত ও আবদ্ধ প্রাণীর মালিক, তত্ত্বাবধানকারী বা তাদের নিয়োজিত অন্য কোনো ব্যক্তি চিকিৎসা ও নিরাময়ের উদ্দেশ্য ব্যতীত প্রাণীর সংবেদনশীল টিস্যু অথবা অঙ্গের কর্তন অথবা শারীরিক কাঠামোর পরিবর্তন ঘটালে অথবা ঘটানোর চেষ্টা করলে তা অপরাধ বলে গণ্য হবে।

প্রস্তাবিত আইনের খসড়ায় আরো বলা হয়েছে, একজন ব্যক্তি অপরাধ করবেন যদি আইনানুগ কর্তৃত্ব অথবা যুক্তিসঙ্গত কারণ ব্যতীত এবং জানা সত্ত্বেও গৃহপালিত, পোষা অথবা আবদ্ধ প্রাণীকে কোনো বিষাক্ত অথবা অনিষ্টকর ওষুধ অথবা অনুরূপ কিছু খাওয়ান বা প্রয়োগ করেন বা অনুরূপ কর্ম করার চেষ্টা বা সহায়তা করেন যার কারণে প্রাণীর মৃত্যু হয়। এ ছাড়া বিকলাঙ্গ হয় অথবা কর্মক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়।

প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বা তার ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে কোনো প্রাণী দুর্দশাগ্রস্ত অবস্থায় রয়েছে প্রতীয়মান হলে বা দুর্দশা প্রশমিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে অথবা করার জন্য প্রাণীর মালিক বা হেফাজতকারীকে নির্দেশ দিতে পারবেন। মহাপরিচালক, প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর বা তার ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দুর্দশায় থাকা কোনো প্রাণীর নিধন অপরিহার্য হলে প্রাণী যেখানে যে অবস্থায় আছে সেখানে বা অন্যত্র নিয়ে ওই প্রাণী নিধন করতে পারবেন; এক্ষেত্রে প্রয়োজনে নিকটবর্তী থানা/ফায়ার সার্ভিসের সহায়তা গ্রহণ করতে পারবেন।

আটককৃত প্রাণীকে আদালতের আদেশ মোতাবেক সরকারি কর্তৃপক্ষ সরকারি ভেটেরিনারি হাসপাতাল অথবা স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কাছে চিকিৎসা ও পরিচর্যার জন্য পাঠাবেন। প্রাণীটি আরোগ্য না হওয়া পর্যন্ত এর চিকিৎসা, খাদ্য, পানি সরবরাহের খরচ প্রাণীর মালিক বা হেফাজতকারীকে বহন করতে হবে। এই খরচের হার উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা কর্তৃক নির্ধারিত হবে। প্রাণীর মালিক বা হেফাজতকারীকে খুঁজে পাওয়া না গেলে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ব্যয়ভার বহন করবে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭/হাসান/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়