ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

সুস্থ বীথি : ভারমুক্ত বাবা-মা

আরিফ সাওন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:১০, ২৩ আগস্ট ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সুস্থ বীথি : ভারমুক্ত বাবা-মা

বীথি আক্তার (ছবি : শাহীন ভূঁইয়া)

আরিফ সাওন : মুখে হাসি। শরীরে নেই যন্ত্রণা। মা-বাবাকে শুনতে হয় না যন্ত্রণায় কাঁতরানোর শব্দ। হাঁটা-চলা করছে সে।

 

এখন আর সেই আগের বীথি নেই। এখন স্বাভাবিক সে। এখানে ওখানে ঘুরে বেঁড়ায়। মন চাইলেই এদিক সেদিক ছুটে যায়। বাবার কাছেও বায়না ধরে ঘুরে বেড়ানোর। বাবাও নিয়ে যান।

 

বাবা–মার চোখে পরিতৃপ্তির হাসি। আর হাসি হবেই না কেন- মাথা থেকে ভার কমে গেছে। নেই আগের মত দুশ্চিন্তা। সুস্থ হয়ে উঠেছেন বীথি। সুস্থ হয়ে যাওয়ায় চিকিৎসকও বীথিকে ছাড়পত্র দিয়েছেন।

 

মুখমণ্ডলসহ শরীরে লোম নিয়ে জন্ম নেওয়া বীথি আক্তারকে (১২) মঙ্গলবার সকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। আবার অ্যান্ডোক্রাইনোলজি (ডায়াবেটিস ও হরমোন) বিভাগে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের প্রধান ডা. ইকবাল মাহমুদ চৌধুরী। ওই বিভাগেই ১৬ এপ্রিল তিনটি পৃথক সমস্যা নিয়ে ভর্তি হয়েছিল  বীথি।

 

ছাড়পত্র দেওয়ার আগে তিনি বীথির হাতে নতুন জামা তুলে দেন। জামাটি ডা. ইকবাল মাহমুদ চৌধুরীর স্ত্রী বীথির জন্য কিনে পাঠিয়েছেন। ছাড়পত্র দেওয়ার আগে বীথিকে তার মা জামাটি পরিয়ে দেন। নতুন জামা পড়ে বীথিকে খুব খুশি খুশি লাগছিল।

 

ডা. ইকবাল মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বীথিকে ছাড়পত্র দেওয়া হবে জানতে পেরে আমার স্ত্রী জামাটি কিনে এনে আমার হাতে দিয়ে বলেছে, ছাড়পত্র দেওয়ার সময় তার পক্ষ থেকে বীথিকে জামাটি দেওয়ার জন্য।

 

বীথির বাবা আব্দুর রাজ্জাক জানান, মেয়েকে নিয়ে অনেক বেশি দুশ্চিন্তায় ছিলেন। কিন্তু এখন সব দুশ্চিন্তা মাথা থেকে নেমে গেছে। তিনি পুরোপুরি ভারমুক্ত হয়ে গেছেন।

 

Beethi

 

বীথির চিকিৎসায় আর্থিক সহায়তা করে দেশের শীর্ষস্থানীয় ইলেকট্রিক্যাল, ইলেকট্রনিকস, অটোমোবাইল, মোবাইল ফোনসেট ও হোম অ্যাপ্লায়েন্স প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন। দ্বিতীয় দফা অস্ত্রোপচারে রক্ত দিয়েও তার পাশে ছিল প্রতিষ্ঠানটি।

 

আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ওয়ালটন অপারেশনের আগে দুই লাখ টাকা দিয়ে মেয়ের যে উপকার করেছে, সেই ঋণ শোধ হওয়ার না। বীথিকে যারা রক্ত দিয়েছেন, যে সকল  চিকিৎসক তাকে অস্ত্রোপচার করেছেন, সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।  

 

ছাড়পত্র দেওয়া প্রসঙ্গে ডা. ইকবাল মাহমুদ চৌধুরীর বলেন, এখন বীথি সুস্থ। তাই ছাড়পত্র দিয়ে দিয়েছেন। তবে তাকে ছয় মাস পর্যবেক্ষণে রাখবেন। এখন স্তনের চামড়া একটু এদিক-ওদিক আছে। স্বাভাবিক হতে তিন থেকে ছয় মাস লাগবে। ছয় মাসে যদি স্বাভাবিক না হয়, তাহলে এক ঘণ্টার একটা অস্ত্রোপচার করা লাগতে পারে। 

 

তিনি বলেন, এখন কী করতে হবে, সেই ব্যাপারে অ্যান্ডোক্রাইনোলজি (ডায়াবেটিস ও হরমোন) বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. ফরিদ উদ্দিন পরামর্শ দেবেন। তাই আবার তার কাছে পাঠানো হচ্ছে। স্তনের সমস্যার সমাধান হয়েছে। এখন মুখে লোম অপসারণের জন্য মুখে লেজার থেরাপি দেওয়া প্রয়োজন। লেজার থেরাপির জন্য সিএমএইচ সবচেয়ে ভালো। ওখানের মেশিন অত্যাধুনিক। লেজার থেরাপি শেষ হলে দাঁতের চিকিৎসা করতে হবে। মুখেও সার্জারি করা লাগবে। লেজার থেরাপি দিয়ে মুখে লোম অপসারণের পর মুখে সার্জারি করার কথা ভাবতে হবে। 

 

বীথির মূল সমস্যা ছিল- ১১ বছর বয়সে স্তন অস্বাভাবিক আকারে বড় হতে থাকে। হাসপাতালে ভর্তির একমাস আগে থেকে স্তনে জ্বালা-যন্ত্রণা শুরু হয়। সেজন্য প্রথমে তার স্তনে অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

 

এই চিকিৎসক আরো জানান, ৩১ জুলাই বীথির ডান স্তনে অস্ত্রোপচার করে সাড়ে নয় কেজি মাংস ফেলে দেওয়া হয়। এর আগে ২০ জুন তার বাম স্তনে অস্ত্রোপচার করে নয় কেজি চারশ গ্রাম মাংস ফেলা হয়। দুই স্তন থেকে মোট ১৮ কেজি ৯০০ গ্রাম মাংস কেটে ফেলা হয়। প্রথম বার অস্ত্রোপচারে সময় লাগে সাড়ে সাত ঘণ্টা, দ্বিতীয় বার লাগে ছয় ঘণ্টা।

 

টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার জয়ভোগ গ্রামের দিনমজুর আবদুর রাজ্জাকের তিন সন্তানের মধ্যে বীথি সবার বড়। জয়ভোগ পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী সে।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৩ আগস্ট ২০১৬/আরিফ সাওন/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়