ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

‘সাঁওতালদের আইনসম্মতভাবে উচ্ছেদ করা হয়নি’

মোমেনুর রশিদ সাগর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৪২, ১২ ডিসেম্বর ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘সাঁওতালদের আইনসম্মতভাবে উচ্ছেদ করা হয়নি’

বক্তব্য রাখছেন মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান

গাইবান্ধা প্রতিনিধি : জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেছেন, ‘স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে সম্পত্তি রক্ষা করার অধিকার রয়েছে সাঁওতালদের। জমি থেকে তাদের আইনসম্মতভাবে উচ্ছেদ করা হয়নি।

 

 

তিনি বলেন, তাদের (সাঁওতালদের) ওপর হামলা, ঘরবাড়িতে আগুন ও গুলি চালিয়ে যে হত্যার ঘটনা ঘটানো হয়েছে তা অন্যায় ও ন্যক্কারজনক।

 

সোমবার বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে গাইবান্ধার মাদারপুর গির্জার সামনে অনুষ্ঠিত এক সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন। গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামারের জমি থেকে সাঁওতালদের উচ্ছেদের ঘটনা তদন্ত করতে একটি প্রতিনিধিদল আজ গাইবান্ধায় আসে। প্রতিনিধিদলে কাজী রিয়াজুলও ছিলেন। 

 

কাজী রিয়াজুল বলেন, সাঁওতালরা বৈধ-অবৈধ যেভাবেই চিনিকলের খামারের জমিতে বসতি গড়ে তুলুক না কেন। তাদেরকে আইনি প্রক্রিয়ায় উচ্ছেদ করা হয়নি। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী এই উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করতে হতো।

 

মিলের খামারের জমি লিজ দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, চিনিকল বন্ধ কিংবা অন্য কোনো কারণে মিলের জমি যদি লিজ দিতে হয় তবে তা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সাঁওতালদের দিতে হতো। কোনোভাবেই প্রভাবশালীদের জমি লিজ দেওয়া ঠিক হয়নি।

 

এ সময় কাজী রিয়াজুল হক সাঁওতালদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা নিরাপত্তাহীনতায় এখনো জীবন রক্ষার্থে তির-ধনুক ও লাঠি হাতে পাহারা দিচ্ছেন। এই ঘটনায় আমরা লজ্জিত। তবে আপনারা আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না। যারা আইন হাতে তুলে নিয়ে একটি ঘটনা ঘটিয়ে আপনাদের উচ্ছেদ করেছে তাদের বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।

 

তিনি বলেন, আইনশৃংখলা বাহিনীকে বলেছি এজাহারে নাম উল্লেখ না থাকলে অহেতুক কাউকে ধরে যেন হয়রানি না করা হয়।

 

এদিন সকাল ১০টার দিকে বাংলাদেশ জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, আদিবাসীবিষয়ক সংসদীয় ককাস ও ইউএনডিপির ১০ জনের একটি প্রতিনিধিদল ক্ষতিগ্রস্ত মাদারপুর ও জয়পুরপাড়া সাঁওতালপল্লি ঘুরে দেখেন এবং ক্ষতিগ্রস্ত সাঁওতালদের সঙ্গে কথা বলেন। এর আগে প্রতিনিধিদলটি রংপুর চিনিকল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেন।

 

১০ সদস্যর প্রতিনিধি দলে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ছাড়াও ছিলেন পরিচালক (তদন্ত ও অভিযোগ) শরিফ উদ্দিন, উপ-পরিচালক মো. আশিক, আদিবাসীবিষয়ক সংসদীয় ককাসের আহ্বায়ক সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা, সংসদ সদস্য টিপু সুলতান, অধ্যাপক মেজবাহ কালাম, একেএম ফজলুল হক, ইউএনডিপির চিফ টেকনিশিয়ান শর্মিলা রাসুল, প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর তাসলিমা নাসরিন, কমিউনিটি অ্যান্ড মাইনরিটি এক্সপার্ট শংকর পাল।

 

সমাবেশ শেষে বেলা সাড়ে ১১টায় মাদারপুর গির্জা ঘরে পৃথকভাবে সাতজন ক্ষতিগ্রস্ত সাঁওতাল ও বাঙালির সাক্ষ্য নেন তারা। পরে বেলা দেড়টায় সাক্ষ্য গ্রহণ পর্ব শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের কাজী রিয়াজুল হক বলেন, সাতজনের বক্তব্য সামঞ্জস্যপূর্ণ। জমি, হামলা, উচ্ছেদ বিষয়ে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনে আরো যাচাই বাছাই করা হবে। তদন্তের স্বার্থে এখনই সব বলা যাচ্ছে না। তবে উচ্ছেদ ঘটনায় নির্যাতনের পরিচ্ছন্ন ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। আইনি প্রক্রিয়ায় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হয়নি।

 

এ সময় সাঁওতালরা হাতে তির ধুনক ও লাঠি হাতে নিয়ে জমি ফেরত ও হামলাকারিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেন। মিছিলটি জয়পুরপাড়া ও মাদারপুরপল্লি প্রদক্ষিণ করে মাদারপুর গির্জার সামনে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে তারা সমাবেশে অংশ নেয়।

 

 

রাইজিংবিডি/গাইবান্ধা/ ১২ ডিসেম্বর ২০১৬ /মোমেনুর রশিদ সাগর/রুহুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়