ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

সৌরশক্তিনির্ভর প্রযুক্তি বদলে দিচ্ছে কৃষকের ভাগ্য

কাঞ্চন কুমার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:২৭, ২০ জুলাই ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সৌরশক্তিনির্ভর প্রযুক্তি বদলে দিচ্ছে কৃষকের ভাগ্য

সৌরবিদ্যুত চালিত সেচ পাম্প

কাঞ্চন কুমার, কুষ্টিয়া : সোলার প্লান্টে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। সৌরশক্তিনির্ভর কৃষি প্রযুক্তি বদলে দিচ্ছে কৃষকের ভাগ্য। বিদ্যুতের লোডশেডিং, বাড়তি বিলের বোঝাসহ লো-ভোল্টেজের ভয়ে এখন ভীত নয় কৃষক। আর সেচপাম্প চালাতেও দরকার পড়ছে না ডিজেলের। সূর্যের আলোকে কাজে লাগিয়ে প্রয়োজন মতো জমিতে সেচ দিচ্ছে।

সনাতন পদ্ধতিকে পেছনে ফেলে সৌর শক্তি নির্ভর সেচ প্রযুক্তির দিকে ছুঁটছে এখন প্রত্যন্ত গ্রামের কৃষক। সৌরবিদ্যুত চালিত সেচ পাম্পের সফলতায় আশার আলো খুঁজে পেয়েছেন কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার কৃষকরা। সুইচ টিপেই পানি পেয়ে তারা নিজেরাও বেজায় খুশি।

জানা যায়, কৃষকদের সেচ কাজের জন্য অর্থমন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে রহিম আফরোজ ফাউন্ডেশন ও আরডিএফ সোলার ইরিগ্রেশন পাম্পিং সিস্টেমের উদ্যোগে জেলার বিভিন্ন এলাকায় তৈরি হয়েছে সৌরবিদ্যুত চালিত ডিপ সেচ পাম্প পদ্ধতি।


আগে মিরপুর উপজেলার নওদাআজমপুর ও বুরাপাড়া এলাকার মানুষের সেচ কাজের জন্য বৈদ্যুতিক মোটর ও শ্যালো ইঞ্জিন চালিত সেচ পাম্প ব্যবহার করতো। এর ফলে কৃষকের আবাদ খরচ বৃদ্ধি পেত। অন্যদিকে শুষ্ক মৌসুমে পর্যাপ্ত সেচের অভাবে অনেক জমি অনাবাদী থাকতো।


কৃষকদের এ সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে নওদাআজমপুর ও বুরাপাড়া মাঠে স্থাপন করা হয় ২টি সৌরবিদ্যুত চালিত সেচ পাম্প। এ অঞ্চলে এখন প্রায় ৫০০ একর ফসলী জমিতে পানি সরবরাহ করছে এই সেচ পাম্প। ফলে ভুক্তভোগী কৃষকরা এখন কোনো প্রকার বিপত্তি ছাড়াই তাদের জমিতে সেচ কাজ চালিয়ে উপকৃত হচ্ছে।

 

নওদাআজমপুর এলাকার কৃষক আব্দুল হান্নান জানান, এবার তিনি বোরো চাষ করেছেন সৌর বিদ্যুতের সহায়তায়। এ এলাকায় বিদ্যুতের লোডশেডিং প্রায় নিত্য দিনের। লো-ভোল্টেজ এর কারণে মোটর চালানো যেতো না। তারপর ঘন ঘন লোডশেডিং এর ফলে নষ্ট হয়ে যেতো পাম্প। এদিকে বিদ্যুতের মূলও প্রায় আকাশ ছোঁয়া। এখন সৌরবিদ্যুৎ পাম্পের ফলে প্রয়োজন মতো জমিতে সেচ দেওয়া যায়। সেচের মূল্যও বেশি না। আর সময় মতো সেচ দেওয়ার সু-ব্যবস্থা থাকায় যে জমিতে বছরে একবার ফসল চাষ হতো সে জমিতে বছরে তিনবার ফসল চাষ করা যাচ্ছে।


শুধু নওদাআজমপুর মাঠেই নয় উপজেলার চিথলিয়া মাঠে চালু হয়েছে ৩টি, নওয়াপাড়া মাঠে ১টি সৌরবিদ্যুৎ সেচ প্রকল্প। এতে একদিকে যেমন বিঘা প্রতি সেচ খরচ দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা কমে এসেছে অন্যদিকে সময়মত পর্যাপ্ত পানি প্রাপ্তির নিশ্চয়তা তৈরি হওয়ায় ফসলের উৎপাদনও বেড়েছে।

মিরপুর উপজেলা কৃষি অফিসার রমেশ চন্দ্র ঘোষ জানান, রহিম আফরোজ ফাউন্ডেশন ও আরডিএফ সোলার ইরিগ্রেশন পাম্পিং সিস্টেমে এ ধরনের সৌর বিদ্যুৎ সেচ প্রকল্প চালু করেছে। এ সেচ প্রকল্পে খরচ অনেক কম। সারা বছরই সেচ কাজ চালানো যায় এবং এটা পরিবেশ বান্ধব।

বিএডিসি (সেচ) এর সহকারী প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেন জানান, সেচ পাম্প চালাতে হলে প্রয়োজন নেই তেল কিংবা বিদ্যুতের। প্রয়োজন নেই এনার্জি রিজারর্ভার হিসেবে ব্যাটারি। শুধু প্রয়োজন সূর্যের আলো। সৌরশক্তিকে সরাসরি ব্যবহার করে কৃষক তার জমির সেচ সুবিধা নিশ্চিত করতে পারবে।

ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ডা. রফিকুল ইসলাম জানান, মাঠে মাঠে এ ধরনের সৌর বিদ্যুৎ পাম্পের ফলে কৃষকদের কৃষি সেচ কাজ করতে সুবিধা হচ্ছে। তারা বর্তমানে আর বিদ্যুতের উপর নির্ভর করছে না। এতে খরচও তুলনামূলকভাবে কম হচ্ছে।

মিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামারুল আরেফিন জানান, বর্তমান সরকার উন্নয়নে বিশ্বাসী। সরকার দেশের কৃষি খাতকে আরো উন্নত এবং কৃষির উৎপাদন বৃদ্ধি করতে এ ধরনের নানা মুখি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। আর এ সৌর বিদ্যুৎ সেচ পাম্পের ফলে কৃষকরা প্রয়োজন মতো সেচ সুবিধা পাচ্ছে। অন্যদিকে পল্লী বিদ্যুতের ওপরও চাপ কমছে।

 

 

রাইজিংবিডি/ কুষ্টিয়া/২০ জুলাই ২০১৫/ কাঞ্চন/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়