ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

সেই ছেলেটি আটক

মামুন চৌধুরী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:১২, ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সেই ছেলেটি আটক

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি : হবিগঞ্জ শহরে অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রীকে চড়থাপ্পড় মারা ছেলেটিকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে।  ফেসবুকে ভিডিওচিত্র দেখার পর এলাকাবাসী ছেলেটিকে ধরে পুলিশে দিয়েছে।

 

শুক্রবার দুপুরে জেলা যুবলীগ সভাপতি আতাউর রহমান সেলিমের নেতৃত্বে এলাকাবাসী বখাটে রুহুলকে শহরতলির রিচি এলাকা থেকে আটক করে। পরে তাকে হবিগঞ্জ সদর মডেল থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়। এর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন ওসি মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন।

 

সূত্র জানায়, স্কুল ছুটির পর সীমানা প্রাচীরের বাইরে আসতেই বখাটে রুহুল মেয়েটির পথরোধ করে দাঁড়ায়। মেয়েটি ঘুরে বিপরীত দিকে ফিরে যেতে চাইলে ওই বখাটে তাকে চড়থাপ্পড় মেরে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে। শুধু তাই নয়, ঘটনার ভিডিও ধারণ করে ফেসবুকে ছড়িয়ে দিয়েছে বখাটের সহযোগীরা। এ নিয়ে হবিগঞ্জে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। শুধু হবিগঞ্জ নয়, বিশ্বজুড়ে অবস্থানরত হবিগঞ্জবাসী তথা বাংলাদেশি নাগরিকরা ফেসবুকে এ দৃশ্য দেখে স্তম্ভিত হয়েছেন।

 

বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে ফেসবুকে এই ভিডিও দেখে সবাই হতবাক, বিমূঢ়। গত ২৬ আগস্ট এ ঘটনা ঘটলেও ভিডিওটি ফেসবুকে আপলোড হওয়ায় বৃহস্পতিবারই সবাই জানতে পারে। 

 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হবিগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ওই ছাত্রী স্কুল ছুটির পর বাসায় ফিরছিল। মেয়েটি মহিলা কলেজের গেটের কাছে আসামাত্র হবিগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র রুহুল আমীন তার পথ আগলে দাঁড়ায়। তখন মেয়েটি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে রুহুল মেয়েটির মাথায় প্রচণ্ড জোরে চড় কষায়। একে একে চারটি চড় খেয়ে মেয়েটি হতভম্ব হয়ে পড়ে। চড় দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি রুহুল, অকথ্য ভাষায় গালাগালিও করে। ঘটনাটি তারই এক সহযোগী মোবাইল ফোনে ভিডিও করে ফেসবুকে আপলোড করে।

 

মেয়েটির মা ঝর্ণা আক্তার রাইজিংবিডিকে জানান, রুহুল আমীন দীর্ঘদিন ধরে মেয়েকে স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে বিরক্ত করত। এ নিয়ে বেশ কয়েকবার রুহুল আমীনের বাবা ফজল মিয়া ও মামা মোবারক মিয়ার কাছে বিচার দেওয়া হয়। এ নিয়ে রুহুল আমীনের পরিবার তাকে সতর্ক করার পরও উত্ত্যক্ত করা থামেনি। মেয়ের মা’র মোবাইল ফোনে অশ্লীল ম্যাসেজ পাঠিয়ে, বারবার কল দিয়ে বিরক্ত করত রুহুল আমিন। পরে বাধ্য হয়ে রুহুল আমীনের মোবাইল ফোন নাম্বারটি ব্লক করে দেওয়া হয়।

 

রুহুল রাস্তায় গায়ে হাতে তোলার পরও মেয়েটি দুদিন স্কুলে গেছে। কিন্তু স্কুলের ছেলেমেয়েরা যখন এ ঘটনা জেনে গেছে তারপর থেকে এখন পর্যন্ত আর মেয়েটি লজ্জায় স্কুলে যায়নি।

 

এদিকে বিষয়টি নিয়ে হবিগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা শামীমা আক্তার চৌধুরী জানান, এই ঘটনার বিষয়ে ছাত্রী বা তার অভিভাবকরা স্কুল কর্তৃপক্ষকে কিছু জানায়নি। ফেসবুকে ঘটনার ভিডিওটি প্রচার হওয়ার পরই তারা এ সম্পর্কে জেনেছেন। ছাত্রীদেরকে উত্ত্যক্ত করার বিষয়টি তারা কয়েকবারই প্রশাসনকে জানিয়েছেন। পুলিশ কয়েকবার অভিযান চালিয়ে বখাটেদের আটকও করেছে। কিন্তু তারপরও উত্যক্ত করা বন্ধ হয়নি।

 

তিনি বলেন, ‘আজ যা ঘটেছে, এ ধরনের ঘটনা খুবই দুঃখজনক ও নিন্দনীয়। যে বা যারাই এই ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের অবিলম্বে আইনের আওতায় এনে যেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হয়।’

 

মেয়েটির গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রামে। প্রায় ২৯ বছর ধরে তারা হবিগঞ্জ শহরে বসবাস করছে। মেয়েটির বাবা মো. শাহ্জাহান পেশায় ট্রান্সপোর্ট ব্যবসায়ী। মেয়ের মা ঝর্ণা আক্তার জানান, এ ঘটনার পর তিনি মেয়েদের নিয়ে শঙ্কায় ভুগছেন।

 

অপরদিকে, রুহুল আমিন বানিয়াচঙ্গ উপজেলার বড়ইউড়ি গ্রামের ফজল মিয়ার ছেলে। সে হবিগঞ্জ শহরে রাজনগর এলাকায় তার মামা মোবারক মিয়ার বাসায় থেকে হবিগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে পড়ছে। এ ভিডিও দৃশ্য প্রচার হওয়ার পর তোলপাড় শুরু হলে রুহুল আমিন ও তার পরিবারের লোকজন বাসা ছেড়ে পালিয়ে যায়।


 

 

রাইজিংবিডি/হবিগঞ্জ/৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫/মামুন চৌধুরী/মুশফিক/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়