ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

জুরাইনে মুক্তিযোদ্ধাদের কবর অযত্নে

আসাদ আল মাহমুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:১৭, ১০ ডিসেম্বর ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
জুরাইনে মুক্তিযোদ্ধাদের কবর অযত্নে

আসাদ আল মাহমুদ: স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা এবং স্বাধীনতার পর মৃত্যুবরণ করা ৫০ জন মুক্তিযোদ্ধাকে দাফন করা হয়েছে রাজধানীর জুরাইন কবরস্থানে।

 

এসব মুক্তিযোদ্ধার কবরগুলোর প্রতি যত্নের অভাব পরিলক্ষিত হয়। কবরের দেয়ালে ময়লা জমে যায়। ঠিক মতো পরিষ্কার হয় না। জুরাইন কবরস্থানে জিয়ারত করতে আসা অনেক ব্যক্তি ও মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মীয়-স্বজনরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘মুক্তিযোদ্ধারা জাতীর শ্রেষ্ঠ সন্তান। তারা জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছেন। যুদ্ধ করতে গিয়ে কেউ নিহত, কেউ আহত হয়েছেন। তাদের কবরে ময়লা, ঘাস থাকলেও ঠিকমতো পরিষ্কার করা হয় না। দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের কবর দেখার মতো কেউ নেই।’

 

বৃহস্পতিবার জুরাইন কবরস্থানে কয়েকজন এ প্রতিবেদককে সামনে পেয়ে একই অভিযোগ করেন। 

 

নারিন্দার বাসিন্দা তৌফিক হাসান খান বলেন, ‘শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও পরবর্তী সময়ে মারা যাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের কবর দেখতে এসেছি। কিন্তু তাদের কবরের আশপাশের অবস্থা দেখে অবাক হলাম। কারো কবরে টাইলসের ওপর ময়লা জমে আছে। কারো ভাঙা কবরের উপরে ঘাস গজিয়েছে, পাতা জমে আছে। কারো কবরের সামনে যাওয়ার সরু পথ জঙ্গলে ভরা।’

 

তিনি বলেন, ‘দেখেই বোঝা যায়, কবরের সামনে আসার রাস্তাগুলো ঠিকমতো পরিষ্কার করা হয় না। সংশ্লিষ্টদের কাছে আমার অনুরোধ যাদের জন্য স্বাধীন দেশ পেলাম তাদের কবরগুলো সব সময় পরিষ্কার করে রাখুন।’

 

এ ব্যাপারে শ্যামপুরের বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন তালুকদার বলেন, ‘আমার দাদাকে জুরাইন কবরস্থানে দাফন হয়েছে। এ কারণে প্রায়ই এখানে আসি। কিন্তু এখানে এসে দেখি যাদের জন্য স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়েছি তাদের কবরগুলো অবহেলায় পড়ে আছে, ময়লা জমে আছে।’

 

তিনি বলেন, ‘অনেকের কবরের দেয়াল ভেঙে গেছে, কোনোটার দেয়াল ফেটে গেছে। অনেক মুক্তিযোদ্ধার কবরের কাছে যাওয়ার সরু পথে গর্ত আর পথটি জঙ্গলে ভরা। এজন্য অনেকেই ভয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের কবরের কাছে না এসে দূরে দাঁড়িয়ে কবর দেখে চলে যাচ্ছেন।

 

মুক্তিযোদ্ধাদের কবর দেখতে এসেছেন নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের বাসিন্দা এম আবু বকর ছিদ্দিক। তিনি বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে বই লিখব। তাই তাদের কবরগুলো দেখতে এসেছি।’ 

 

তিনি বলেন, ‘শহীদ মুক্তিযোদ্ধা হারুনর রশীদের কবর দেখে অবাক হলাম। কবরের দেয়ালভাঙা, কবরের ওপর ময়লা জমে আছে। সংশ্লিষ্টদের কাছে আমার দাবি, সব মুক্তিযোদ্ধার কবর সব সময় পরিষ্কার করে রাখুন।’

 

বৃহস্পতিবার জুরাইন কবরস্থানে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার কবরের কাছে গিয়ে দেখা গেছে, স্থায়ী (ক্রয়কৃত) কবরে জায়গার গেটের সামনে মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মাহমুদ আল ফারুকের কবর। কবরটি সাদা রঙের টাইলস দিয়ে বাঁধাই করা। কবরের চারদিকে এমনকি টাইলসের উপর ময়লা জমে আছে। যত্নের চিহ্ন মেলে না। মুক্তিযোদ্ধা মহিউদ্দিনসহ অনেকের কবরের সামনে গিয়ে একই অবস্থা দেখা গেছে।’

    

এ ব্যাপারে জুরাইন কবরস্থানের খাদেম আবদুর রহমান বলেন, ‘এখানে ৫০ জনের বেশি মুক্তিযোদ্ধার কবর রয়েছে। খাদেম কম হওয়ায় এগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না। এর কারণ হলো আমাদের কোন নির্দিষ্ট বেতন নেই। অনেক স্বজন তাদের আত্মীয়র কবর পরিষ্কারের জন্য মাসিক টাকা দেয় বিধায় তাদের কবরগুলো পরিষ্কার রাখা হয়।’

 

তিনি বলেন, ‘বিশ বছর ধরে এখানে কাজ করছি। প্রতিদিন অনেক মুক্তিযোদ্ধার আত্মীয়-স্বজন আসে। তারা অনেক স্মৃতির কথা বলেন। যখন মুক্তিযদ্ধের কথা শুনি তখন মনে হয় আমরা এখন যুদ্ধের মাঠে, চোখ বেয়ে জল বেরিযে আসে। মুক্তিযোদ্ধারা দেশের সেরা  সন্তান। তাদের জন্য স্বাধীন দেশ পেয়েছি, তাদের জন্য স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারি। মুক্তিযোদ্ধাদের ঋণ কোনদিন শোধ হবে না।’ 

 

এ ব্যাপারে জুরাইন কবরস্থান মসজিদের খাদেম হাফেজ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ বলেন, ‘কবরস্থানে ৫০ জনের বেশি মুক্তিযোদ্ধার কবর রয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য প্রতি সপ্তাহে দোয়া করা হয়। এছাড়া বিভিন্ন সময় মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মীয়রা আসেন। তারা  অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা  বলেন। সেগুলো শুনে মনে হয় জন্ম আমার কেন আগে হলো না। হলে আমিও মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতাম। 

 

 

 

রাই‌জিং‌বি‌ডি/ঢাকা/৮ ডি‌সেম্বর ২০১৬/‌আসাদ আল মাহমুদ/হাসান/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়