ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

স্মার্টকার্ডের যুগে বাংলাদেশ

হাসিবুল ইসলাম মিথুন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:০৪, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
স্মার্টকার্ডের যুগে বাংলাদেশ

হাসিবুল ইসলাম মিথুন : ২০১৬ সালে নাগরিকদের হাতে উন্নতমানের জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার মধ্য দিয়ে স্মার্টকার্ডের যুগে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ। স্মার্টকার্ড বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের জাতীয় জীবনে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হতে যাচ্ছে। গত ২ অক্টোবর আইরিশের প্রতিচ্ছবি এবং দশ আঙ্গুলের ছাপ দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর নিজের ‘স্মার্টকার্ড’ নেওয়ার মধ্য দিয়ে এর বিতরণ শুরু হয়।

 

ওই দিন প্রধানমন্ত্রী স্মার্ট কার্ড বিতরণের উদ্বোধন করেন। প্রথমে রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের হাতে স্মার্টকার্ড তুলে দেওয়া হয়। এই স্মার্টকার্ড ভবিষ্যতে ট্র্যাভেল ডকুমেন্ট হিসেবেও ব্যবহার করা যাবে।

 

এর পরের দিন থেকে প্রথমে ঢাকার উত্তরার ১ নম্বর ওয়ার্ড ও ঢাকা দক্ষিণে রমনা থানার ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটারের মাঝে পরীক্ষামূলকভাবে স্মার্ডকার্ড বিতরণ শুরু হয়।

 

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন : বর্তমানে দেশে ৪ হাজার ৫৭১টি ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে। ১১ ফেব্রুয়ারি ছয় ধাপে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে ইসি। তফসিল অনুযায়ী, প্রথম ধাপে ২২ মার্চ ৭৩৯টি, দ্বিতীয় ধাপে ৩১ মার্চ ৭১০টি, তৃতীয় ধাপে ২৩ এপ্রিল ৭১১টি, ৪র্থ ধাপে ৭ মে ৭২৮টি, ৫ম ধাপে ২৮ মে ৭১৪টি এবং ৬ষ্ঠ ধাপে ৪জুন ৬৬০টি ইউপিতে ভোট গ্রহণের কথা থাকলেও বিভিন্ন জটিলতার কারণে সেখান থেকে বেশকিছু বাদ দিতে হয়। যেগুলোতে পরবর্তী সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

প্রশ্নবিদ্ধ ইসি: ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থীরা দলীয় মনোনয়ন নিয়ে ভোটে লড়াই করেন। কিন্ত প্রায় ৬শ ইউপির বিষয় নিয়ে সব মহল থেকেই ইসির সমালোচনা ওঠে। সুষ্ঠু ভোটগ্রহণের সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়।

অতীতের রেকর্ড ভঙ্গ : এই নির্বাচনে ভোটগ্রহণে অনিয়ম ও সহিংসতার কারণে ৩৪৬ টি কেন্দ্রে ভোট বন্ধ হয়েছিল। তফসিল ঘোষণার পর থেকে শেষ ধাপের ভোটগ্রহণ পর্যন্ত এ নির্বাচনী সহিংসতায় নিহত হয় ১১৬ জন। আহত হয় প্রায় ১০ হাজার। যা অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করে।

 

বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার রেকর্ড : ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচনে ২২০ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।  

দুই আসনে উপ-নির্বাচন : ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) কারিগরি ও ব্যবহারিক দিক, নির্বাচনে ব্যবহারের উপযোগিতা, সুবিধা, অসুবিধা ইত্যাদি পর্যালোচনার জন্য ‘টেকনিক্যাল কমিটি’ গঠন করা হয়। এই কমিটিতে একজন উপদেষ্টা, একজন আহবায়ক, একজনকে সদস্য সচিব করে বাকিদেরকে সদস্য করা হয়েছে।  

 

বুয়েটের সহযোগিতায় ২০১০ সালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে আংশিক ভোটের মাধ্যমে ইভিএম চালু হয়। পাঁচ বছরের মাথায় সেগুলোর কয়েকটি বিকল হয়ে পড়ে।

ইসিতে নতুন সচিব : ৫ অক্টোবর নির্বাচন কমিশন (ইসি) ময়মনসিংহ-১ (হালুয়াঘাট-ধোবাউড়া) ও ময়মনসিংহ-৩ (গৌরীপুর) আসনে উপ-নির্বাচন করে ইসি। ১৮ জুলাই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা জয়ী হন।
গত ১১ মে ময়মনসিংহ-১ আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিন মৃত্যুবরণ করায় এবং গত ২ মে ময়মনসিংহ-৩ আসনের সংসদ সদস্য ডা. মজিবুর রহমান ফকির মৃত্যুবরণ করায় আসন দু’টি শূন্য হয়।

মশাল দ্বন্দ্ব : জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) ‘মশাল’ প্রতীক নিয়ে দলটির দুই পক্ষ কমিশনের দারস্থ হয়। গত ১২ মার্চ সর্বশেষ জাতীয় কাউন্সিলে শিরীন আখতারকে সাধারণ সম্পাদক করা নিয়ে দুই ভাগ হয় জাসদ। হাসানুল হক ইনু ও শিরীনের কমিটির পাশাপাশি পাল্টা কমিটি গঠন করেন মইনুদ্দিন খান বাদল, শরীফ নুরুল আম্বিয়া ও নাজমুল হক প্রধান এবং তাদের অনুসারীরা। দুই পক্ষের এই পাল্টাপাল্টি অবস্থানের মধ্যে ১৩ এপ্রিল ইনু-শিরীন নেতৃত্বাধীন জাসদকে মূলধারা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে ২৮ এপ্রিল তাদের মশাল প্রতীক দেয় নির্বাচন কমিশন।

পাঠ্যপুস্তকে আরো নির্বাচনী তথ্য অন্তর্ভুক্ত : পঞ্চম থেকে দশম পর্যন্ত শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ্যপুস্তকে নির্বাচনী তথ্য অন্তর্ভুক্ত করতে চায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। যেসব শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকে এ বিষয়টি নেই সেগুলোতে নতুন করে তথ্য সংযোজন এবং যেসব শ্রেণির পাঠ্য বইয়ে ইতোমধ্যে বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে সেগুলোর সাথে নতুন তথ্য যোগ করার চিন্তা করছে প্রতিষ্ঠানটি।

 

ইভিএম তৈরির উদ্যোগ: বিদায়ী বছরে নতুন ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) তৈরির উদ্যোগ নেয় কমিশন। আর এ জন্য ১৯ সদস্যের ‘টেকনিক্যাল কমিটি’ গঠন করা হয়।

নতুন সচিব : ইসির প্রস্তাবিত নতুন সচিবালয়ে বিসিএস প্রশাসন একাডেমির ডিরেক্টর মুহাম্মদ আবদুল্লাহকে সচিব হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অপর দিকে ইসি সচিব মো. সিরাজুল ইসলামকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে বদলি করা হয়।

নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে সফলতা: নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ায় সাধুবাদ পেয়েছে ইসি। এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে ২২ ডিসেম্বর। নির্বাচনে কোন ধরণের সহিংসতা ও অনিয়মের খবর পাওয়া যায়নি। এছাড়া ভোটগ্রহণ শেষ হওয়া পর্যন্ত বিএনপির পক্ষ থেকে কোনো ধরণের অভিযোগ করা হয়নি। নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের মোর্চা ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপের পক্ষ থেকে বলা হয়, শেষ বেলায় ইসি সফলভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়েছে। এ কৃতিত্ব তাদের দিতে হয়।

জেলা পরিষদ নির্বাচন : বছরের একদম শেষে ২৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয়ে গেছে প্রথমবারের মতো জেলা পরিষদ নির্বাচন। নির্দলীয় এই নির্বাচনে বিএনপি এবং জাতীয় পার্টি অংশ নেয়নি। শুধু

 

আওয়ামী লীগ অংশ নিলেও বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় নির্বাচনে লড়াই করতে হয়েছে অনেক জেলায়। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছে ২১ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী।
 

 

 


রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩০ ডিসেম্বর ২০১৬/মিথুন/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়